Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাড়ে ৩ লাখ মানুষের সেবায় ৩ চিকিৎসক

কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

কুষ্টিয়া থেকে এস এম আলী আহসান পান্না | প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি কুমারখালীবাসীর একমাত্র চিকিৎসার মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনবহুল এ উপজেলায় সরকারি হিসাবে ৩,৪১,২৫৫ জন মানুষ বাসবাস করে। কিন্তু প্রায় সাড়ে ৩ লাখ জনগণের স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত আছে মাত্র ৩ জন চিকিৎসক। ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটে কাঙিক্ষত সেবা প্রদান সম্ভম হচ্ছে না। ৫০ শয্যার জনবল কাঠামো অনুযায়ী এখানে ১৯ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ৪ জন। তাদের মধ্যে ১ জন এখানে যোগদানের পর থেকেই প্রেষণে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরি করছেন। বর্তমানে চিকিৎসক আছেন মাত্র ৩ জন। এই ৩ জন চিকিৎসককেই উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে হচ্ছে। এ হাসপাতালের বর্তমান চিত্র এতোই নাজুক ডাক্তার সংকটে ফলে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কাঙিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগিরা। হাসপতালে প্রতিদিন প্রায় তিন থেকে চারশত রোগি বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে। আন্তঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৭৫ থেকে ৮৫ জন রোগি ভর্তি থাকে। সকাল হলেই ডাক্তারের চেম্বারে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগির লাইন পড়ে থাকে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অক্সিজেন সিলিন্ডারেরও সংকট রয়েছে। নতুন ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্রটি এ হাসপাতালে দেয়ার পর থেকেই প্যাকেট বদ্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ইসিজি মেশিন থাকলেও সেটা বেশির ভাগ সময়ই নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে।
তাছাড়া অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা এখানে না থাকায় বাধ্য হয়ে রোগীদের বাড়তি টাকা ব্যয়ে বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে। বর্তমানে এই হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি করানো হলেও এনেস্থিসিয়া ও সার্জারি চিকিৎসক না থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আকুল উদ্দিনের উদ্যোগে বাইরে থেকে চিকিৎসক এনে মাঝে মধ্যে দুস্থ রোগিদের সিজারিয়ান অপারেশন করা হলেও বেশির ভাগ সময়ই অপারেশন থিয়েটার বন্ধ পড়ে থাকে। জরুরি বিভাগে মাত্র দুজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার দুই শিফটে কাজ করছেন। এর ফলে মাঝে মধ্যেই আহত অনেক রোগিকে নৈশপ্রহরি ও অফিস সহায়ককে কাটা ছেড়া, হাত, পা ভাঙার জরুরি চিকিৎসা সেবা দিতে দেখা যায়।
এদিকে এ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র রয়েছে এসব ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রও চিকিৎসক সংকটের ফলে বন্ধের উপক্রম এ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে ১ জন মেডিকেল অফিসার ও একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও ১১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের চিকিৎসক পদ শূন্য। কয়েকজন ইউনিয়ন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার প্রেষণে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চাকরি করছেন আবার কয়েকজন ঠিকমত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে আসেন না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার মকলেসুর রহমান বলেন, এ হাসপাতালে মাত্র দুজন উপ সহকারী মেডিকেল অফিসার এই দুজনকে পালা করে ২ শিফটে কাজ করতে হয় এর ফলে প্রায়শই রোগিদের জরুরি সেবা দিতে আমাদের হিমশিম অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। আবার মাঝে মধ্যে রোগির চাপ একটু বেশি হলে এক রোগিকে দেখতে সময় লাগলে আরেক রোগির স্বজনরা আমাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন আবার কোনো কোনো সময় শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার মতো ঘটনাও ঘটে। এতো সমস্যার মধ্যে থেকেও চিকিৎসারমান বৃদ্ধি করতে আমরা জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসাররা সার্বক্ষণিক চেষ্টা করে যাচ্ছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আকুল উদ্দিন বলেন, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও ৩১ শয্যার জনবলও এখানে নেই। বর্তমানে মাত্র ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে এতো মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালের যাবতীয় সমস্যার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছি, তারা শুধু আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে বলেন অল্প কিছু দিনের মধ্যেই এ হাসপাতালের চিকিৎসক সংকট দূর করা হবে কিন্তু সংকট আর দূর হয় না। এই হাসপাতালের চিকিৎসক সংকটের ফলে এ এলাকার জনগণকে চিকিৎসা সেবা দিতে আমাদের খুবই সমস্যা হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রানালয়ের উদ্ধর্তন কতৃপক্ষের কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সংকট দূর করার বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ