Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুদের হার না কমালে এডিপির অর্থ পাবে না ব্যাংকগুলো

সিঙ্গেল ডিজিট সুদ কার্যকরে কঠোর অবস্থানে সরকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০১৯, ১২:০২ এএম

যেসব ব্যাংক ঋণের সুদের হার নয় শতাংশ নামিয়ে আনতে পারবে না সেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থ আমানত হিসেবে পাবে না। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, এডিপির অর্থ আমানত হিসেবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ছয় শতাংশ সুদে গচ্ছিত রাখে। নতুন নিয়মে যে সকল ব্যাংক বিগত ২০১৮ সালের ২ আগস্ট তারিখে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঋণের সুদের হার নয় শতাংশে নামিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা এ সুবিধা পাবে না বলে সোমবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, স্বায়ত্বশাসিত ও আধা-স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এডিপির আওতায় সরকার থেকে প্রাপ্ত তহবিল এবং সরকারি, আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার মোট নিজস্ব তহবিলের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকিং ব্যবসায় নিয়োজিত সকল ব্যাংকে অথবা এ বিভাগ কর্তৃক বর্ণিত অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই) অথবা উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে স্পেশাল নোটিশ ডেপোজিট (এসএনডি), সঞ্চয়ী হিসাব স্থায়ী আমানত (এফডিআর) এ সর্বোচ্চ ছয় শতাংশ হারে আমানত রাখা যাবে। তবে যে সকল ব্যাংক বিগত ২/৮/২০১৮ তারিখে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঋণের সুদের হার নয় শতাংশে নামিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে তারা এ সুবিধা প্রাপ্য হবে না।
সূত্র মতে, গত বছরের ২ মে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে ব্যাংক মালিকরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তারা ঋণের সুদের হার নয় শতাংশে নামিয়ে আনবেন। কিন্ত সরকারি ব্যাংক ছাড়া অধিকাংশ ব্যাংক এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। এর আগে গত বছরের ১ আগস্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিল, বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবসায় নিয়োজিত বেসরকারি ব্যাংকসমূহে অথবা ১৪টি অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফ) অথবা উভয় ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এডিপির আওতায় সরকার থেকে প্রাপ্ত তহবিলের সর্বোচ্চ ৫০ পর্যন্ত আমানত হিসেবে জমা রাখা যাবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুদের হার কমিয়ে আনতে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্তে¡ও নানা সুবিধা নিয়েও ব্যাংকগুলো এতদিন তা কার্যকর করেনি। এরই প্রেক্ষিতে ব্যাংকঋণের সুদহার কমাতে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এতে বলা হয়েছে-নিজস্ব তহবিলের অর্থ, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ছয় শতাংশের বেশি হারে আমানত রাখা যাবে না। কয়েকটি সরকারি ব্যাংক তা মানলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলো উল্টো সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা নানা অজুহাতে সুদ হার শুধু বাড়ায়নি, গ্রাহকদের ওপর নানা ধরনের চার্জও আরোপ শুরু করে। লুক্কায়িত নানা চার্জে গ্রাহকদের নাভিশ্বাস উঠেছে। বিশেষত সৎ ও প্রকৃত উদ্যোক্তা, ভোক্তা ঋণগ্রহীতারা ঋণের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে যাচ্ছে। অথচ সুদ হার কমানোর ঘোষণা ব্যাংক মালিকরাই ঘটা করে দিয়েছিলেন। সেজন্য তারা বেশ কয়েকটি সুবিধাও সরকারের কাছ থেকে আদায় করে নেন। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা, সিআরআর এক শতাংশ কমানো, ঋণ আমানতের হার (এডিআর) সমন্বয়সীমার সময় বাড়ানো এবং রেপো রেট ছয় দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ছয় শতাংশ করা। এসব সুবিধা নেওয়ার পরও ব্যাংকগুলো সিঙ্গেল ডিজিটে সুদ হার আরোপ করেনি বরং নতুন নতুন অজুহাত দাঁড় করিয়ে সুদ হার বাড়িয়েছে। যা কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধির পরিপন্থি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে শিল্প-বাণিজ্যে গতি আসবে। বর্তমানে জ্বালানি সংকটসহ অন্যান্য সমস্যা মোকাবেলার পর বাড়তি সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন গ্রাহকরা। গত বছর কয়েকটি ব্যাংক সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামানোর ঘোষণা দিলেও কার্যত তা ছিল ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’। কোনো কোনো ব্যাংক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে কম সুদহারের ঘোষণা দিলেও বাস্তবে গ্রাহকরা ব্যাংকে গেলে তার বিপরীত চিত্র দেখতে পান। সার্ভিস চার্জসহ নানা ফি আরোপ করা হয়। কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে সুদের ওপর সুদ বা দন্ড সুদও প্রয়োগ করা হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ অবস্থাকে ব্যাংকগুলোর ‘ডাকাতি কারবার’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেছেন, উদ্যোক্তা বিকাশে বাংলাদেশ ব্যাপক সম্ভাবনাময়। কিন্ত উচ্চসুদহার ও জ্বালানি সংকটে এখানে ব্যবসা-শিল্প গড়া অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। বেসরকারি ব্যাংক মালিকদেরও শিল্প-কারখানা রয়েছে। তথাপি তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েও ব্যাংক ঋণের সুদ হার কমায়নি। তিনি বলেন, সরকারের সর্বশেষ এ উদ্যোগ দেশে শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে। তিনি একই সঙ্গে সুদের ‘সিম্পল রেট’ বাস্তবায়ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন, যা অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সুদের হার বেশি হওয়ায় বরাবরই এর সমালোচনায় ছিলেন উদ্যোক্তারা। বেশি সুদ হওয়ায় ব্যবসা পরিচালনার ব্যয়ও বেড়ে যায়। যা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে টিকে থাকার ক্ষেত্রেও চ্যালেঞ্জ ছিল। অন্যদিকে সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকে উৎসাহ দিতে বদ্ধপরিকর। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) প্রতিষ্ঠান উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় টেকসই হতে পারে না।
এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ঋণের সুদ হিসাব করার ক্ষেত্রে ‘সিম্পল রেট’ বা সরল সুদ হার চালুর ঘোষণা শিগগিরই দেওয়া হবে। এজন্য আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া চলছে। যা একটি গতিশীল অর্থনীতির দিকে নিয়ে যাবে দেশকে।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এডিপি

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ