রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
বোরো মৌসুমে ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না বৃহত্তম চলনবিল অঞ্চলের কৃষক। শষ্যভান্ডার নামে খ্যাত এ অঞ্চলে ধানের মূল্য এতটাই কম, যে উৎপাদন খরচও উঠছে না তাদের। নিজের জমিতে ধান চাষ করে প্রতি বিঘায় লোকসান হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩৫০০টাকা। এদিকে ধানের চাষের লোকসানের পর ব্যাংক ঋণ, এনজিওর কিস্তি, মহাজন ও সার-কীটনাশক ব্যবসায়ীদের দেনা পরিশোধ করতে দায় হয়ে পড়েছে।
তাড়াশ ইল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক জমিন (৩৫) জানায়, এক বিঘা জমিতে বোরো চাষ করতে এ বছর খরচ হয়েছে ১১,২০২ টাকা। বীজতলা ও সংরক্ষণ ১,৩০০ টাকা, সার ও ঔষধ বাবদ ২৫৫২ টাকা, ধান লাগানো ও কাটা ৪৩২৫ টাকা, নিরানী ২০০০টাকা, শ্রমিকের খাওয়া ৫২৫ টাকা, ধান বাড়িতে আনা ৫০০ টাকা। তিনি আরো জানান, এ বছর ৮-১০ বিঘা জমি আবাদ করে ২৮-৩০ হাজার টাকার লোকসান হয়েছে। ৪৮০-৫০০টাকা ধানের দাম তারপরেও ধান বিক্রয় করতে পারছি না। ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে বউ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঠিক মতো চলতে পারছি না।
বর্তমানে ধানের দামের যে অবস্থা আত্মহত্যা ছাড়া কোনো বুদ্ধি নাই। সরকারি চাকরিজীবীদের সর্বনিম্ন বেতন ২০-২৫ হাজার টাকা। আর কৃষকরা সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে দুবেলা ডাল ভাত খেতে পারি না। ১ কেজি গরুর মাংসের দাম ৫২৫ টাকা আর একমণ ধানের দাম ৫০০ টাকা। কৃষক সব খাবারের সব কিছু উৎপাদন করে দেয় আর খাওয়ার সময় আমরাই খেতে পারি না, গরুর মাংস, ইলিশ মাছ কেনা তো দূরে থাক চোখেই দেখি না, শুধু দাম শোনা পর্যন্তই। কিন্তু সরকারি চাকরিজীবীরা ঠিকই ভোগ-বিলাস করেন।
কৃষক জমিন আরো জানান, সরকারকে ধানের ক্ষতি পূরণ দিতে হবে না, ধানের ন্যায্য মূল্য দিলেই আমরা খুশি।
আজিজুল হক নামে আরেক কৃষক জানান, শ্রমিক সঙ্কট সবচেয়ে বড় সমস্যা। সরকারিভাবে ধান কাটার মেশিন কম্বাইন্ড যে মেশিন পাওয়া যায়। সেই মেশিন কিনতে অনেক টাকার দরকার। আর এতো মোটা টাকা পাবো কোথায়, সরকার যদি ওই মেশিন টাকা এইভাবে না দিয়ে যদি সরকারিভাবে কোন ড্রাইভার নিয়োগ দিয়ে আমাদের ধান কাটতো তাহলে আমরা কৃষকরা প্রতি ডিসিমালে ২০-২৫ টাকা কাটার দাম দিতাম, তাহলে একদিকে যেমন আমাদের কৃষকদের খরচ কম হতো অন্যদিকে শ্রমিক সঙ্কট থাকতো না।
এদিকে কৃষকদের এই দুঃসহ সময়ে এপিয়ে এলেন সিরাজগঞ্জের মাছিমপুর শাখা অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তারা ‘কৃষকরা একা নয় আমরা আছি পাশে’ তাই এই শ্লোগান নিয়ে শ্রমিক সঙ্কট দূর করতে প্রান্তিক ও অসহায় কৃষকের পাশে দাড়িয়েছেন অগ্রণী ব্যাংক অফিসার্স সমিতির সিরাজগঞ্জ শাখার সদস্যরা। চাকরিজীবি হলেও ছুটির দিনগুলোতে কৃষকদের বিপদে পাশে দাঁড়াতেই ধান কাটা উৎসবের আয়োজন করেছেন তারা। কৃষকদের চরম এই দুঃসময়ে স্বেচ্ছাশ্রমে ধানকাটতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় খুশি কৃষকরা। স্বেচ্ছাসেবীরা জানান কৃষকরা চাইলে তাদের এই কার্যক্রম অব্যহত রাখবেন তারা।
ধানের মূল্য না থাকাসহ চলতি বোরো মৌসুমে সারা দেশের ন্যায় সিরাজগঞ্জেও দেখা দিয়েছে চরম শ্রমিক সঙ্কট। শ্রমিক সঙ্কটের পাশাপাশি মজুরি বেশী এবং প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে দুঃচিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। এমন সঙ্কটময় সময়ে প্রান্তিক কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো নিঃসন্দেহে একটি মহৎ উদ্যোগ। তারা কৃষকদের মাঠের পাকা ধান স্বেচ্ছায় বিনা মজুরিতে কেটে দেন। নারীসহ ব্যাংকের ৭৫ জন অফিসার এই ধান কাটায় অংশ গ্রহণ করেন। চাকরিজীবি হলেও সবাই কৃষকের সন্তান তাই তাদের ধান কাটার পুর্বঅভিজ্ঞতা থাকায় সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শ্রমিক সঙ্কটের এই সময়ে অসহায় প্রান্তিক কৃষকদের ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলে দেন তারা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৩ বিঘা জমির ধান কেটে মাড়াই করে কৃষকের ঘরে তুলে দেন তারা। ধান মাড়াইয়ের পর তা বাতাসে উড়িয়ে পরিস্কার করার কাজে অংশ গ্রহণ করেন নারী কর্মকর্তারাও।
সিরাজগঞ্জ অগ্রণী ব্যাংক অফিসার্স সমিতির শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদুল হক বলেন, আলামিন আমাদের ব্যাংকের একজন গ্রাহক। কথায় কথায় তার সমস্যার কথা জানালে আমরা সবাই মিলে এই উদ্যেগ নেই। তিনি আরো বলেন, আমাদের এই স্বেচ্ছাশ্রম অব্যহত থাকবে এবং যে কোন প্রান্তিক কৃষক তাদের সহযোগীতা চাইলে ছুটির দিনে ধান কাটায় আমরা অংশ গ্রহণ করবো। অগ্রণী ব্যাংক সিরাজগঞ্জ অঞ্চল প্রধান এস এম জহিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশ কৃষি প্রধান। কৃষকরা সাময়িক শ্রমিক সঙ্কটে পড়েছে হয়তো সেটা কেটে যাবে। কৃষকের সন্তান হিসেবে সহযোগীতার জন্য আমরা শুধু তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমাদের সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।