Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষার্থীদের মমতাবোধ

শরীয়তপুর থেকে মো. হাবিবুর রহমান হাবীব | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

চলতি বছরে ধানের দাম কম হওয়ায় শ্রমিক দিয়ে মাঠ থেকে ধান সংগ্রহ করে পোষাতে পারছেন না কৃষকরা। দাম কম হওয়ায় ধানক্ষেতে আগুন ধরিয়ে নওগাঁ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা জেলাসহ দেশের বিভিন্নপ্রান্তে কৃষকরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সারাদেশে যখন কৃষকেরা শ্রমিকের চড়া মজুরির কারণে ধান কাটাতে পারছে না, ঠিক তখন শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে ইদিলপুর মডেল স্কুলের শিক্ষার্থীর উদ্যোগে এলাকার দরিদ্র কৃষকের পাকা ধান স্বেচ্ছায় কেটে দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসেছেন এ স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কাটায়।
স্থানীয় সুত্র জানা যায়, এলাকার এক কলেজ শিক্ষার্থীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন স্কুলের ৫০ জন ছাত্র ছুটে এসেছেন ধান কাটতে। গতকাল সকাল থেকে ধান কাটার প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়ে দিনব্যাপী এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকার কথা বলছেন আয়োজকেরা। জেলার গোসাইরহাট উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের ধীপুর গ্রামের স্থানীয় কলেজ ছাত্র মো. আনিছুর রহমান লোটন এর উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাব্বি খান, সাকিব, তারেক, নাজমুল, মাহাবুব, সুমন, নাদিম, ঈমন এ ধানকাটার কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তারা স্থানীয় দরিদ্র কৃষক, যাদের ধান ইতোমধ্যে পেকে গেছে কিন্তু শ্রমিকের চড়া মূল্যের জন্য ধান কাটতে পারছে না তাদের ধান রবিবার সারাদিন কেটে দিবেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা।
স্থানীয় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী মো. ছালাম সরদার ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন খাঁন বলেন, তাদের ধান কেটে দেওয়ায় তারাও বেশ খুশি। এদিকে স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কেটে দেওয়ার খবর পেয়ে ইদিলপুর স্কুলের একজন শিক্ষক বেলায়েত হোসেনও তাদের সাথে যোগদেন। তিনি জানান, গোসাইরহাটে স্বেচ্ছাশ্রমে এই ধান কাটা কর্মসূচিটা হলো একটি দৃষ্টান্ত ও অনুকরণীয়। সারাদেশে এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ বন্ধু আছে- এমন যদি গোসাইরহাটে এই যুবক-শিক্ষার্থীদের মতো অসহায় কৃষকের ধান কেটে দেয় তাহলে কৃষকেরা উপকৃত হবে। তাদের মতে কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। স্থানীয়রাও খুশি এলাকার যুবসমাজের এই স্বেচ্ছাশ্রমে ধানকাটা কর্মসূচি এবং দুর্দিনে কৃষকের পাশে থাকায়। অনেক কৃষকের ধান পাকলেও তারা উচ্চ মজুরির কারণে ধান কাটতে পারছিলেন না, তাদের ধান কেটে দেওয়ায় তারাও আনন্দিত।
স্বেচ্ছাশ্রমে ধানকাটার মূল উদ্যোক্তা সরকারী শামসুর রহমান কলেজের শিক্ষার্থী মো. আনিছুর রহমান লোটন জানান, তারা স্থানীয় প্রায় অর্ধ শত শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে এলাকার হতদরিদ্র কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছেন। প্রথম দিন ২ বিঘা জমির ধান কাটেন এবং এর ধারাবাহিকতায় যতদিন জমিতে পাকা ধান রয়েছে ততদিন পর্যন্ত তারা পর্যায়ক্রমে সকল কৃষকের ধান কেটে দেবেন। এদিকে স্বেচ্ছাশ্রমে ধানকাটা কর্মসূচিকে স্থানীয়রা ভবিষ্যতে এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এবং দেশের অন্যত্র এর অনুকরণ করে দেশের কৃষক বাঁচাতে সকল যুবসমাজকে আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
গোসাইরহাটের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্যাণ কুমার সরকার বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রম কার্যক্রমটি ইতিবাচক, ভবিষ্যতে আমরা তাদের কৌশলগত ও প্রযুক্তিগত দিকগুলো শিখিয়ে দিলে তারা আরো বেশী সমৃদ্ধশালী হবে এবং কৃষিতে অবদান রাখতে পারবে।
গোসাইরহাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলমগীর হুসাইন বলেন, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রম কার্যক্রমটি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াসে কৃষি কাজে এগিয়ে এসে দেশকে মানবিক বিবেচনায় এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ