Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সঠিক হিসাব নেই প্রসবজনিত ফিস্টুলার

বছরে নতুন করে আক্রান্ত হয় ১০ হাজার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বাংলাদেশসহ অনেক আফ্রিকান, দক্ষিণ এশীয় এবং ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে প্রসবজনিত ফিস্টুলা নারী স্বাস্থ্যের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৯ হাজার ৭৫৫ জন নারী এই রোগে ভুগছে। এছাড়া প্রতি বছর ১০ হাজার জন নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। সেমিনারে প্রসবজনিত ফিস্টুলা নিয়ন্ত্রণে দ্বিতীয় কৌশলপত্র প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সেমিনারে জানানো হয়, ফিস্টুলা আক্রান্তের এই পরিসংখ্যান কোন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত নয়। অনুমানের ওপর ভিত্তিতে করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, ২০১৬ সালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) মেজার ইভালুয়েশন, মামনি এইচএসএস প্রজেক্ট ও ফিস্টুলা কেয়ার প্লাস কর্তৃক পরিচালিত একটি জরিপ অনুসারে। সেই জরিপে দেখা যায় যে প্রতি ১ হাজার জন বিবাহিত নারীদের মধ্যে শুণ্য দশমিক ৪২ জন ফিস্টুলায় আক্রান্ত হচ্ছে। এদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ নারী নতুন করে ফিস্টুলায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, মানসম্মত তথ্যের অভাবে বাংলাদেশের জন্য প্রকৃত বা সঠিক ফিস্টুলা রোগীর সংখ্যা বলা সহজ নয়। তবে মাতৃমৃত্যু রোধ, নবজাতক এবং শিশু স্বাস্থ্যের উন্নতির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। তারপরও দেশে এখনো ৫৩ শতাংশ প্রসব বাড়িতে হচ্ছে। বাড়িতে প্রসবের একটি ক্ষুদ্র অংশ কেবলমাত্র দক্ষ প্রসূতি সেবাদানকারীদের সহায়তা পায়। উদ্বেগের বিষয় হলো, বাড়িতে প্রসবের এই উচ্চ হারের কারণে অনেক নারী প্রসবকালীন জটিলতা যেমন বিলম্বিত বাধাগ্রস্থ প্রসব এবং প্রসবজনিত ফিস্টুলার ঝুঁকিতে থাকেন।
চিকিৎসকদের মতে, প্রসবজনিত ফিস্টুলা হচ্ছে নারীদের প্রসবকালীন গুরুতর বেদনাদায়ক পরিস্থিতি। বাধাগ্রস্থ প্রসবের ক্ষেত্রে সময়মতো পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেলে প্রসবের রাস্তায় ক্ষত সৃষ্টি হয়।
যার ফলে নারীদের অনবরত মূত্র অথবা মল ঝরতে থাকে। এতে করে নারীরা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন এবং চূড়ান্ত দারিদ্র্যহীনতায় পতিত হন। এছাড়া অস্ত্রপাচরের আঘাত, যৌন সহিংসতা, নারীদের জনন অঙ্গহানি, সড়ক দুর্ঘটনা, জš§গত ত্রæটি, ক্যান্সার এবং সংক্রমণ সহ ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত শারীরিক আঘাতের কারনে ফিস্টুলা হতে পারে।
সেমিনারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, যে কোন মূল্যে হাসপাতালে প্রসবের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে না পারলে আমাদের লক্ষ্য অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে ফিস্টুলা দূর করা সম্ভব হবে না। এছাড়া দেশে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জন প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ২৪০ জন ইউরোলজিস্ট আছেন। বর্তমানে দেশে ৬০০ থেকে ৭০০ ফিস্টুলা রোগের অপারেশন করা হয়েছে। বাংলাদেশ অপারেশনজনিত ফিস্টুলা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা বর্তমানে সকল ফিস্টুলার ২৪ থেকে ৪০ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কৌশলপত্রটি উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, এমএনসিএন্ডএএইচ বিভাগের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো শামসুল হক, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহাপরিচালক তন্দ্রা শিকদার, ইউএনএফপিএ-এর বাংলাদেশ রিপ্রেজেন্টেটিভ ডা. আসা টর্কেলসন, ইউএসএআইডি’র মিশন ডিরেক্টর জেইনা সালাহি প্রমূখ।
পসমিনারে জানানো হয়, দ্বিতীয় কৌশলপত্রটির সময়সীমা চতুর্থ স্বাস্থ্য পুষ্টি ও জনসংখ্যা সেক্টর কর্মসূচির (এইচপিএনএসপি) সাথে সঙ্গতি রেখে ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রাখা হয়েছে। এটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অপারেশন প্ল্যানগুলির মধ্যে কৌশল নির্দেশাবলী বুঝতে সাহায্য করবে। ৪র্থ এইচপিএনএসপি’র কার্যক্রম বাস্তবায়ন পরিকল্পনা ও জাতীয় মাতৃস্বাস্থ্য নীতির সাথে সংগতি রেখে এই কৌশলপত্রটিতে ফিস্টুলা আক্রান্ত নারীদের প্রতিরোধ ও প্রতিকার ও পুনর্বাসনকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতে ফিস্টুলা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য একটি বহুমুখী পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। তাছাড়া দেশের ১৩ হাজার ৫০০ টি কমিউনিটি ক্লিনিক ইউনিয়ন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, এনজিও স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিক সেবা খাত দিয়ে গঠিত একটি সুবিশাল স্বাস্থ্য অবকাঠামো এই রোগ নির্মূলের কাজে জোরদার ভূমিকা পালন করছে।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ