Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাভার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ঢাকার সাভার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বছরে হাজার হাজার দলিল সম্পাদিত হলেও বাড়ছে না রাজস্ব। ফলে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে এ অফিস। সাভারে মূলত ভিটি বাড়ি, চালা ও নালা জমিকে ডোবা, বিল, বাগান, টাট্টি ও বোরো ক্ষেত দেখিয়ে অধিকাংশ দলিল সম্পাদন হওয়ায় সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব^ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সম্প্রতি এক অনুসন্ধানে তিন কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলেও সাব রেজিস্ট্রারের পকেট ভারী হচ্ছে। জমির শ্রেণি বদল করে টাকা হাতানোর এই কৌশলকে বলা হয় ‘আন্ডারভেল্যু স্টাইল’।
কতিপয় দলিল লেখকদের যোগসাজশে সাব-রেজিস্ট্রার প্রতিনিয়ত আন্ডারভেল্যু দলিল করে যে পরিমাণ টাকা হাতাচ্ছেন তার ভাগ যাচ্ছে কয়েক স্তরে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, সাভার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার এসকেন্দার আলী তার সময়ে একই দাতা-গ্রহিতার চারটি দলিল করে দুই কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ২০১৫ সালে কোন্ডা মৌজায় ১৭৪৭৭ ও ১৭৪৭৮নং দলিলে ৫১৩.২৫শতাংশ জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ‘টাট্টি’ শ্রেণি দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করে প্রায় ২ কোটি টাকা সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছেন। আর তিনি ও দলিল লেখক হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। অথচ জমিটির প্রকৃত শ্রেণি ‘নাল’। টাট্টি নামে ওই মৌজায় কোন শ্রেণিই নেই। সাব-রেজিস্ট্রার এসকেন্দার নিজে পকেট ভারী করতেই প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জমিটি রেজিস্ট্রি করেছেন।
একই সাব-রেজিস্ট্রার ২০১৪সালে সাভারের ডগরমোড়া মৌজায় ৫তলা একটি ভবনকে ‘নাল’ শ্রেণি দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক লাখ টাকা। আর সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে সোয়া ৭শতাংশ জমির উপর ৫তলা ভবনটির শ্রেণি ‘বাড়ি’ কিন্তু এখানেও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কম টাকায় রেজিস্ট্রি করার জন্য সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ‘নাল’ শ্রেণি বসিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। যার দলিল নং-৬৮০৬।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার এসকেন্দার আলী মুঠফোনে বলেন, আমার প্রতিনিধি সাভার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত জৈনক পলাশের সাথে কথা বলেন।
এ দিকে বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার আবু তালেব সরকার নিজেও গোপনে ‘আন্ডারভেল্যু’ দলিল সম্পাদন করে সরকারকে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, জামসিং মৌজায় ১০ শতাংশ জমির একটি দলিল শ্রেণি বদল করে রেজিস্ট্রি করেছেন তিনি। ১৬৬৬৭নং দলিলের প্রকৃত শ্রেণি নাল। কিন্তু নিজের পকেট ভারী করার জন্য শ্রেণি পরিবর্তন করে ‘সাইল’ দেখিয়ে রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে দলিল লেখক মহিদুল রহমান ভান্ডারী বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে। সেখানে আমার করার কি আছে।
তবে সাব-রেজিস্ট্রার আবু তালেব সরকার বলেন, তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা প্রমানিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিল্পাঞ্চল সাভারে দলিল বাড়লেও রাজস্ব না বাড়ায় টনক নড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। চলছে অনিয়মের কারণ অনুসন্ধান।



 

Show all comments

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ