বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
গ্রিড থেকেই শিল্প মালিকদের বিদ্যুৎ দিতে চায় সরকার। এজন্য আলাদা দামে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ দেওয়ার জন্য কাজ চলছে। এ বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্স দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে। আগামী সপ্তাহে আবারও বৈঠকে বসছে পাওয়ার সেল, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি। ওই বৈঠকে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় কীনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে আপত্তি নেই শিল্প মালিকদের। তবে তারা বলছেন, সেক্ষেত্রে দামটা অবশ্যই যেন ক্যাপটিভের চেয়ে কম হয়। আবার কারও কারও মতে, দামের চেয়েও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া বেশি জরুরি।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি বলছে স¤প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সমন্বয় সভায় জানানো হয়, এখন শিল্প মালিকরা তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিজেরা উৎপাদন করছে। এই বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির পুরোটা সরবরাহ করছে সরকার। গ্রিড থেকে গ্যাস নিয়ে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শিল্প মালিকরা নিজেদের চাহিদা মেটাচ্ছেন। অন্যদিকে, সরকারের প্রায় সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র এই গ্রীষ্মেও বসে রয়েছে। জ্বালানির অভাবে কেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না।
এখন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এখন প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট, কিন্তু গ্রাহকদের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে ১২ হাজার মেগাওয়াট। এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে থাকলেও আরও সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট কেন্দ্রকে বসেই থাকতে হচ্ছে। এই বাড়তি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সরকার বিপাকে রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করুক বা না করুক কেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে অনেক কেন্দ্রের উদ্যোক্তা বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। এসব কেন্দ্র চালিয়ে শিল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হলে সরকার ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার হাত থেকে মুক্তি পেতো।
মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, সরকার যদি আমাদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে পারে, আমরা নিতে আগ্রহী। নিরবচ্ছিন্ন হলে দাম নিয়ে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। তবে অবশ্যই বিদ্যুতের টানা সরবরাহ থাকতে হবে। কারণ, এক মিনিটের জন্যও বিদ্যুৎ বিভ্রাট উৎপাদনের ব্যাপক ক্ষতি করে। আলাদা লাইন হলে সবচেয়ে ভালো হয় বলে তিনি মনে করেন।
শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট জসীম উদ্দিন বলেন, আমরা শিল্প মালিকরা কখনও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চাই না। আমরা বিদ্যুতের মান সম্মত এবং নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ চাই। কিন্ত সরকার তা দিতে পারছে না বলেই আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে। এখন সরকার বলছে, তারা শিল্পে বিদ্যুৎ দিতে পারবে, আবার দেশের অনেক জায়গাতে এখনও লোডশেডিং হচ্ছে। সরকারের এই বক্তব্য আর বাস্তবতা বিপরীতমুখী উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রাহক হিসেবে সংকটের কারণে কী হচ্ছে, এসব দেখতে চাই না। আমি সমস্যা ছাড়াই বিদ্যুৎ পেতে চাই। সরকার তা নিশ্চিত করতে পারলে বিদ্যুৎ নিতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে শিল্প সংযোগের দাম পুননির্ধারণ করে অফ-পিক (সর্বনিম্ন চাহিদা) আওয়ারে চাহিদা বৃদ্ধি করা যায় কিনা, সে লক্ষ্যে এর আগে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এই টাস্কফোর্স কর্মকৌশল নিরূপণ করে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেয়।
বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে টাস্কফোর্স জানায়, শিল্প সংযোগের দাম পুননির্ধারণের জন্য একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা যেতে পারে। পাশাপাশি শিল্প গ্রাহকদেরকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ দেওয়ার ব্যবস্থা রেখে বিদ্যুতের মান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, শিল্প মালিকরা বিদ্যুৎ নিতে চান। কিন্ত সমস্যা হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে। কোনও কোনও শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ প্রয়োজন হয়। কোনও কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলে শিল্পের কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ চলে গেলে শ্রমিক বসে থাকে, এতে কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। ফলে শিল্প মালিকরা বিদ্যুৎ নিতে ইচ্ছুক হয় না। আমাদের গ্রিড এখনও তাদের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ করবে এই নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। এজন্য শিল্প মালিকদের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহে পৃথক লাইনের পাশাপাশি একটি লাইন বন্ধ হলে অন্য একটি লাইনে বিদ্যুৎ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাহলে শিল্প মালিকরা গ্রিডের ওপর আস্থা ফিরে পাবে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে পাওয়ার সেল কাজ করছে। পিডিবি আর পিজিসিবির সঙ্গে আলোচনা করে কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সবাই মিলে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে একটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তিনি বলেন, শিল্প গ্রাহকদের আলাদা দামে বিদ্যুৎ দেওয়ার চেয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ। যার বিদ্যুতের প্রয়োজন তিনি কিন্ত অফ পিক আর অন পিক দেখবেন না, তিনি চাইবেন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ। দাম কমানো বা বাড়ানো জরুরি নয়, জরুরি হচ্ছে লাইনে সব সময় বিদ্যুৎ থাকা। শিল্প মালিকদের প্রয়োজন যদি আমরা মেটাতে পারি, তাহলে তারা দামের দিকে তাকাবে না। সে কারণে আমাদের প্রযুক্তিগত সমাধান করতে হবে, যেন তারা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পায়। সেই ব্যবস্থাই করতে হবে। দাম এখানে মুল বিষয় নয়।
বিজিএমইএ এর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা অবশ্যই এ ধরনের বিদ্যুৎ নিতে আগ্রহী। তবে সেক্ষেত্রে দামটা অবশ্যই ক্যাপটিভের চেয়ে বেশি হলে সমস্যা। দামের চেয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া বেশি জরুরি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।