পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর প্রথম বাজেট উত্থাপন হতে যাচ্ছে আগামী ১৩ জুন। এই বাজেটের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার ছাড়িয়ে যাচ্ছে পাঁচ লাখ কোটি টাকা। তবে বাজেটের আকার যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে বাজেট ঘাটতির পরিমাণও। সর্বশেষে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এবারের বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে যে গতিতে বাজেটের আকার বেড়েছে ঠিক তার উল্টো গতিতে কমেছে বাস্তবায়নের হার। প্রতি অর্থবছরেই হয়েছে বাজেট কাঁটছাট বা সংশোধন। চলতি অর্থবছরেও প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা কমানো হতে পারে মূল বাজেট থেকে। গত এক দশকের মধ্যে শুধু ২০১০-১১ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছিল প্রায় ৯৭ শতাংশ। অন্য অর্থবছরগুলোতে বাস্তবায়নের হার অনেক কম। তবে খোদ অর্থবিভাগ বলছে, সংশোধিত বাজেটও বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে যায়।
দেশের ৪৯তম এই বাজেট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ইতোমধ্যো বলেছেন, সঙ্গত কারণেই এবার বাজেটের আকার অনেক বাড়বে। এবারের বাজেট শুধু একবছরের জন্য হবে না, এই বাজেটে ২০৪১ সাল পর্যন্ত করণীয় বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া থাকবে। তিনি বলেন, ২০১০-২০ অর্থবছরের বাজেটের নতুনত্ব হলো-এটি হবে একটি সহজ বাজেট। যাদের জন্য বাজেট, তারা যেন বাজেটটি সহজেই বুঝতে পারেন। একই সঙ্গে বাজেটটি হবে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত বাজেট।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে জন্য সম্ভাব্য বাজেটের আকার ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এই পরিমাণ সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা বেশি। তবে বাজেট ঘাটতি জিডিপি’র পাঁচ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে এবারও। কেবল এ বছর নয়, গত পাঁচ বছরেই বাজেটের আকারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। মূল বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এই অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৩ হাজার ১৭ কোটি টাকা বেশি। ওই ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেটের বিপরীতে ঘাটতির পরিমাণ ছিল এক লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। এই ঘাটতি আবার আগের অর্থবছরের (২০১৬-১৭) বাজেট ঘাটতির তুলনায় বেশি ছিল ৪৩ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। ঘাটতি ছিল ৬৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। ঘাটতি আগের অর্থবছরের তুলনায় দুই হাজার ৮০৭ কোটি টাকা বেশি। একইভাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ওই বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬৫ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ বলছে, আগামী বাজেটে ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক উৎস থেকে নিট ৫২ হাজার ২২০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হতে পারে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এর পরিমাণ ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা। এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নিট ৯৩ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা নেওয়া হবে। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ৬৮ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এর পরিমাণ ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা) এবং সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ২২ হাজার ২৭০ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এর পরিমাণ ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা) নেওয়া হতে পারে।
সূত্র জানায়, প্রাথমিক প্রাক্কলন অনুযায়ী, আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের মোট আকার নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এটি আগামী অর্থবছরের জিডিপি’র ১৮ শতাংশ এবং চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার থেকে ১২ দশমিক ছয় শতাংশ বেশি। নতুন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা (জিডিপি’র ৬ দশমিক ৮ শতাংশ) এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যতীত পরিচালনসহ অন্যান্য অনুন্নয়ন ব্যয় বাবদ তিন লাখ ২৪ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা (জিডিপি’র ১১ দশমিক দুই শতাংশ) ধরা হয়েছে।
অন্যদিকে প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়লেও কমছে বাস্তবায়নের হার। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১০-২০১১ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৯৭ শতাংশ থাকলেও ধারাবাহিকভাবে বাজেট বাস্তবায়নের হার কমছে। সর্বশেষ চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-১৮ থেকে মার্চ-১৯) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। ফলে, বছর শেষে চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের হার আগের বছরের চেয়েও কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়লেও বাজেট বাস্তবায়নের হার কমছে। বাজেটের গুণগত মান এবং বাস্তবায়নের হার বিবেচনায় এসব বাজেটকে উচ্চাভিলাসী বাজেট বলা যায়। তিনি বলেন, বাজেটের আকার বাড়ানোর আগে আমাদের প্রশাসনিক দক্ষতা এবং সচেতনা বাড়াতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, অর্থবছরের শুরুতে যে বাজেট ঘোষণা করা হয় বছর শেষে পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয় না। গত কয়েক বছরের বাস্তবায়নের চিত্র দেখে সেটিই প্রমাণ হয়। এর মূল কারণ হচ্ছে, বাজেট বাস্তবায়নে সঠিক মনিটরিং এবং বাস্তবায়নে সক্ষমতার অভাব।
অর্থমন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, ২০১০-১১ থেকে চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর পর্যন্ত নয় বছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৯৭ শতাংশ থেকে কমে ৭০ শতাংশের ঘরে নেমেছে। প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়লেও তার পুরো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে এক লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। অর্থবছর শেষে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে ৯৭ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ। বাজেটের খরচের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল এক লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে ব্যয় করা অর্থের পরিমাণ এক লাখ ৫২ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৯৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
২০১২-১৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল এক লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে ব্যয় হয় এক লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৯০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে দুই লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা হয়। বছর শেষে মোট বাজেটের মধ্যে ব্যয় করা যায় এক লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। বাজেট বাস্তবায়নের পরিমাণ ৮৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাজেট ঘোষণা করা হয় দুই লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। বাস্তবায়ন করা হয় দুই লাখ চার হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৮১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। পরে তা কমিয়ে দুই লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়েছে দুই লাখ ৩১ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। বাজেট বাস্তবায়নের হার ৭৮ দশমিক ৫০ শতাংশ।
অন্যদিকে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজেট আকার ছিল তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। বছর শেষে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে ৭৬ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট আকার চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর আকার ২৮ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়। বছর শেষে বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়ায় ৭০ শতাংশের কিছু বেশি।
অন্যদিকে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটের আকার চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। এই বাজেটেও রাজস্ব আদায় ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় মূল বাজেট থেকে প্রায় ২১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হচ্ছে। এবার মূল বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছিল চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়াচ্ছে চার লাখ ৪২ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। এদিকে কাটছাঁটের পর সংশোধিত বাজেটও বাস্তবায়িত হয় না। সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রকৃত বাস্তবায়নের হার আরও কম। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে জুলাই-ডিসেম্বর) বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে ২৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। ফলে বছর শেষে বাজেট বাস্তবায়নের হার গত অর্থবছরের চেয়েও কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।