Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নলছিটির হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা দেশ-বিদেশে

ঝালকাঠি থেকে মু. আব্দুর রশীদ | প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

রমজানে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে এখন দিন রাত চলছে মুড়ি ভাজার উৎসব। প্রতিদিন এ গ্রামগুলো থেকে প্রায় একশ’ মণ মুড়ি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রয়েছে এখানকার হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা। বছরে বিক্রি হয় প্রায় কোটি টাকার মুড়ি। রমজানের চাহিদা মেটাতে নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও সমানতালে মুড়ি প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে এ পেশায় জড়িতদের পুঁজি না থাকায় তাদের ভাগ্য বদলায় না।
জানা যায়, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের তিমিরকাঠি, জুড়কাঠি, ভরতকাঠি, দপদপিয়া এবং রাজাখালি গ্রামের ২০০টি পরিবার যুগ যুগ ধরে মুড়ি ভেজে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। সুস্বাদু-মিষ্টি মুড়ি হিসেবে সারদেশে সমাদৃত এখানকার মুড়ি। সব পরিচয় ছাপিয়ে এই গ্রামগুলো এখন মুড়ির গ্রাম নামেই পরিচিতি। নাখোচি জাতের ধান প্রকৃয়াজাত করে এ মুড়ির চাল তৈরি করা হয়। এখানকার মুড়িতে কোন প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় না, তাই স্বাস্থ্যসম্মত ও খেতে সুস্বাধু। বর্তমানে প্রতিকেজি মুড়ি পাইকারি বিক্রি হয় ৬০ টাকা দরে। বাজারে ৮০-১০০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে মুড়ি। মুড়ির কারিগরদের নিজস্ব পুঁজি না থাকায় আড়তদারদের কাছ থেকে দাদন নিতে বাধ্য হয়। রমজানের বড়তি চাহিদা এবং কিছু বেশি আয়ের জন্য রাত ৪ টা থেকেই শুরু হয় মুড়িভাজা, চলে দুপুর পর্যন্ত। এখানকার মুড়ি সুস্বাদু হওয়ায় সারা দেশেই এর সমাদর রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা এখান থেকে মুড়ি নেয়।
দপদপিয়ার মুড়ি পল্লীর শ্রমিকরা প্রমাণ করেছে মুড়ি ভাজাটাই একটা শিল্প। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অসংখ্য মানুষের জীবন-জীবিকা। রোজার মাসকে সামনে রেখে বেড়েছে মুড়ির চাহিদা। উৎসবের আমেজে পরিবারের সবাই মিলে শুরু করে মুড়ি ভাজার ধুম। একটু বাড়তি লাভের আশায় পরিবারের বৃদ্ধ ও শিশুরাও হাত লাগায় মুড়ি ভাজার কাজে।
মুড়ির কারিগরা জানান, শ্রমিকদের যারা একটু আর্থিক সচ্ছল তাঁরা নিজেরা বাজার থেকে ধান কিনে আনে। তারপর বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করে চাল তৈরি করে মুড়ি ভেজে নিজেরাই বাজারজাত করেন। আবার যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল তাঁরা আড়ত থেকে চাল এনে মুড়ি ভেজে আড়তে সরবরাহ করেন। এতে তাদের লাভ কম হয়।
মুড়ির কারিগর ফাতেমা বেগম বলেন, আমাদের টাকা নেই, এ জন্য অন্যের দেয়া চাল দিয়ে মুড়ি ভাজি। সেখান থেকে প্রতিবস্তায় ৪০০ টাকা পাই, তা দিয়ে কোনো মতে আমাদের সংসার চলে। স্বামী মারা যাবার পরে সন্তানদের নিয়ে মুড়ি ভেজেই সংসার চালাই। তবে সরকারের পক্ষ থেকে যদি আমাদের আর্থিক সহযোগিতা করা হত তাহলে ভাল হতো।
মুড়ির আড়তদার খান ব্রার্দাসের সত্তাধিকারী শহিদুল ইসলাম খান শফিক বলেন, আমাদের দপদপিয়া হাতে ভাজা মুড়ি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য সম্মত ও সুস্বাদু। তাই এ মুড়িতে খরচ একটু বেশি, তাই দামও একটু বেশি পড়ে। সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে এ মুড়ির গ্রামগুলোকে বাণিজ্যিক মুড়ি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা প্রয়োজন।
এ বিষয় নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, মুড়ি গ্রামগুলোকে বাণিজিকীকরণ করে আরও অধিক উৎপাদন এবং এ পেশায় ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন বলে আমরা আশা করি।
ঝালকাঠির ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বর বলেন, এখানকার মুড়ি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। তাদের যেকোন সমস্যা সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ