বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বিএনপির নির্বাচিত এমপিদের সংসদে যাওয়ার পর থেকেই ২০ দলীয় জোটে অস্বস্তি ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ক্ষুব্ধ হয়ে জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। ঐক্যফ্রন্ট না ছাড়লে জোটের আরেক শরিকও জোট ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন। এই অবস্থায় গতকাল (সোমবার) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন জোটের নেতারা। এই সভায় আমন্ত্রণ জানানো হলেও জোট ছেড়ে যাওয়ায় উপস্থিত ছিলেন না বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ। অনুপস্থিত ছিলেন আরেক হ্যাভিওয়েট নেতা লিবারেল ডেমোক্রেটি পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্ণেল (অব) অলি আহমদ। শরিকদের মধ্যে পরিচিত ও স্পষ্টবাদী এই দুই নেতাকে ছাড়াও বৈঠকে তোপের মুখে পড়েন বিএনপি নেতারা। বৈঠকে উপস্থিত জোটের একাধিক নেতা জানান, সম্প্রতি বিএনপির নির্বাচিত এমপিদের সংসদে যাওয়া ও শপথ গ্রহণের বিষয়ে জোটের প্রায় সব নেতাই প্রশ্ন তুলেন। বিশেষ করে বিএনপির ঘোষণা ছিল এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবে না, খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু এর কোনটিই বাস্তবায়ন হয়নি। পরে নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট। সিদ্ধান্ত হয় নির্বাচিত কেউ সংসদে যাবে না। কিন্তু তারপরও কেন গেল? জোটের নেতাদের প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি নেতারা কি জানিয়েছেন জানতে চাইলে জোটের এক নেতা বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে তারা সংসদে গিয়েছেন। যে কথাগুলো তারা সংসদের বাইরে বলছেন, আন্দোলন সংগ্রামে বলছেন, সেই একই কথা যেহেতু সংসদে বলার সুযোগ এসেছে সেখানে বলতে চান। তাহলে বিএনপি মহাসচিব কেন শপথ নিলেন না? এ বিষয়ে প্রশ্ন তুললে মির্জা ফখরুল অসুস্থতা এবং দলের কাজে মনোযোগ দেয়ার কথা জানিয়েছেন জোট শরিকদের।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সভায় বিজেপির জোট ছাড়ার বিষয়ে আলোচনা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জানান, বিজেপি জোট ছেড়েছে, আমরা যোগাযোগ রক্ষা করছি। আবার ফিরেও আসতে পারে। রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। তবে জোটের যে কোন বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা মূল ফোরামে করার জন্য জোট নেতাদের অনুরোধ জানান তিনি।
জোটের অপর এক শরিক জানান, শপথ না নেয়ায় শূন্য হওয়া বগুড়া-৬ আসন এবং সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনেও প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জোট। এদিকে জনগণের ভোগান্তি, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, বিদ্যুৎ, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি, কৃষকের দুর্দশাসহ জনগণের মৌলিক বিষয়ে কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ধানের মূল্য কম হওয়ায় কৃষক মারাত্মক ক্ষতির স্বীকার হচ্ছে। ২০ দল এমন ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। খুব শীঘ্রই আমরা ২০ দলের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবো এবং সারাদেশে জোটের উদ্যোগে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ২০ দল সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছে। সভায় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে খুব শীঘ্রই ২০ দল দেশব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে। ২০ দলের ঐক্য রক্ষা এবং সুসংহত করে আরো যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করছেন তাদের সঙ্গে একযোগে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিজেপির জোট ছাড়ার বিষয়ে বিএনপি নেতা বলেন, জোটের রাজনীতির ইতিহাস হলো অনেকে জোট ছেড়ে যায় আবার ফিরে আসে। আবার কেউ হয়তো আসে না। বিজেপি ২০দলীয় জোটের একেবারে প্রথম থেকেই যুক্ত আছে। আন্দোলন-সংগ্রাম, লড়াই, নির্বাচন সবই আমরা একসাথে করেছি। কাজেই আমরা মনে করি আন্দালিব রহমান পার্থ ভুল বুঝে হয়তো জোট ছাড়ার কথা বলেছেন। তার ক্ষোভ থাকলে আলোচনার মাধ্যমে দূর করে ফিরে আসবে। ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে জোটের এক শরিকের হুমকীর বিষয়ে তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্টের জায়গায়, ২০ দলের সাথে সিদ্ধান্ত নিয়েই ঐক্যফ্রন্ট করা হয়েছে। তাই এ বিষয়ে দ্বিমত থাকার কোন সুযোগ নেই।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আব্দুল কাদের, ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট আব্দুর রাকিব, পিপলস পার্টির সৈয়দ মাহবুব হোসেন প্রমূখ। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপি চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত অলি আহমেদ বৈঠকে যোগ দেননি তবে তার দলের মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।