বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
আবুল কাসেম হায়দার : আমরা জনসাধারণ কেমন বাজেট চাই। জনগণের কল্যাণ, উন্নতি, শান্তি ও সমৃদ্ধি হোক এরূপ বাজেট চাই। প্রতি বছরের মতো এবারও জুন মাসের ২ তারিখে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জাতীয় সংসদে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার ৭শ ৩৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করবেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আগামী অর্থবছরে দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ধরা হয়েছে ১৯ লক্ষ ৬১ হাজার কোটি টাকা। এই হিসেবে জিডিপির হার হচ্ছে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ। আগামী বাজেটকে অর্থমন্ত্রী ‘সমতা সহায়ক প্রবৃদ্ধির বাজেট’ বলে অভিহিত করবেন। কারণ জিডিপি সন্তোষজনক হবে ববেং জনগণের সকল স্তরে পর্যাপ্ত উন্নতির ছোঁয়া আসবে। তাই অর্থমন্ত্রী উল্লেখিত বাজেটকে এই নামকরণ করবেন।
জিডিপির তুলনায় বাজেটের আকার বৃদ্ধির হারকে অবশ্য ভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করেন সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম। মির্জ্জা আজিজ বলেন, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটকে ভিত্তি ধরলে আগামী বাজেটের আকার বাড়বে ২৯ শতাংশের মতো, যা অবাস্তব বৃদ্ধি। কাটছাঁটের পর চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী গত মাসে সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে আগামী অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ ধরার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। আর বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সম্প্রতি বৈঠক করে আগামী বাজেটের সার্বিক বিষয় মোটাদাগে অনুমোদন করিয়ে নিয়ে এসেছেন অর্থমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট অন্য মন্ত্রী ও সচিবরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা।
আর বাজেট ঘাটতি থাকছে ৯৭ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা, যা বরাবরের মতোই জিডিপির ৫ শতাংশের কম। মোট বাজেটের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থাকছে ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। তবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন বরাদ্দসহ হিসাব করলে এডিপির আকার দাঁড়াবে ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।
মূসকে গুরুত্ব : কয়েক বছর ধরেই রাজস্ব সংগ্রহে মূল্য সংযোজন করকে (মূসক) গুরুত্ব দিয়ে আসছে সরকার। আগামী বাজেটে এ নির্ভরতা আরও বাড়ছে। ২০১২ সালে নতুন মূসক আইন পাস হলেও আগামী ১ জুলাই থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা। চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার মূল বাজেটের মধ্যে মূসক থেকেই সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৬৪ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। এনবিআর সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে মূসক থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো। কিন্তু তা আদায় নিয়ে ইতোমধ্যেই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই মূসক আইন সংশোধনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে। অর্থমন্ত্রী শুরু থেকেই ১৫ শতাংশ মূসক বহালের পক্ষে দৃঢ়তা দেখিয়ে আসছেন। সর্বশেষ মূসক নিয়ে এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে প্রথমবারের মতো তিনি কিছুটা নমনীয়তা দেখিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বেশ কিছু দিন ধরে বাজেট ভাবনা শুরু হয়েছে। এনবিআর ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বাজেট নিয়ে মত বিনিময় করেন। আগামী বাজেট কেমন চাই বা বাজেটে কি কি বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে প্রভৃতি বিষয় উঠে আসে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান তাদের স্ব স্ব খাতের জন্য কি কি সুযোগ-সুবিধা থাকবে তারও পরামর্শ রেখেছেন। আজকে নিবন্ধে কিছু বিষয় আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করব।
তৈরি পোশাক তথা বস্ত্রখাত : আমাদের দেশে বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্প তথা বস্ত্রখাত অর্থনীতির বড় অংশ দখল করে আছে। এখনও তৈরি পোশাক শিল্প থেকে সর্Ÿোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। বস্ত্রখাতের বড় অর্জনের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার ৮০ শতাংশ অর্জন সম্ভব হয়েছে। তাই বস্ত্রখাত তথা তৈরি পোশাক শিল্পে কর রেয়াত উচিত। বর্তমান তৈরি পোশাক শিল্পে। এআইটি ৩৫ শতাংশ, বস্ত্রখাতে ৬০ শতাংশ রয়েছে। আসন্ন বাজেটে তৈরি পোশাক ও বস্ত্রখাতে এআইটি কমিয়ে সবার জন্য ২৫ শতাংশ করা উচিত।
শিক্ষা খাতে নজর : দেশের শিক্ষা খাত খুবই দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। শিক্ষা খাত তেমন উন্নতি করতে পারেনি। অন্য দিকে ৭ হাজারেরও অধিক স্কুল, মাদরাসা ও কলেজ এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় আজ ৮ বছর পর্যন্ত পড়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সকল পাঠদান স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন। হাজার হাজার শিক্ষক কর্মচারী বেতন ভাতার অভাবে কষ্টকর জীবন কাটাছে। তাই শিক্ষার মান ও উন্নতি হচ্ছে না। শিক্ষান মান উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত ট্রেনিং প্রয়োজন। তাই এই খাতে বাজেট প্রয়োজন। স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ট্রেনিং ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। অন্যদিকে আদর্শ ও চরিত্রবান শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য অর্থ সরকারি ও বেসরকারি উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দেওয়া প্রয়োজন। বর্তমান সরকার শুধু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অর্থ দিয়ে থাকেন। সমানভাবে বেসরকারি বিশ্বদ্যালয়গুলোকেও গবেষণায় এগিয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া জরুরি। প্রায় ৪ লক্ষের অধিক ছাত্রছাত্রী বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালগুলেতে পড়াশোনা করে থাকে। ২০১২ সালের তথ্য অনুযায়ী ১৬ হাজার ১৪১টির অধিক গ্রামে একটিও প্রাইমারি স্কুল নেই। সরকার পর্যায়ক্রমে এই সকল গ্রামে প্রাইমারি স্কুল স্থাপন করছেন। তবে আগামী বাজেটে অবশিষ্ট সকল গ্রামে প্রাইমারি স্কুল স্থাপনের বাজেট রাখা জরুরি। দেশের উন্নতি নির্ভর করে শিক্ষার উপর। শিক্ষা না থাকলে উন্নতির ছোঁয়া ওইসব গ্রামের উপর লাগবে না।
গ্যাস বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত : দেশের সঠিক উন্নতি নির্ভর করে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নতির ওপর। বিগত কয়েক বছর ধরে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে না, শুধু জ্বালানি খাতের সঙ্কটের জন্য। বিনিয়োগকারীগণ চাহিদা মাফিক গ্যাস, বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। তাই এই খাতে সরকার বড় বরাদ্দ রাখবেন বলে আশা রাখি। বিশেষ করে গ্যাস খনি আবিষ্কার, উত্তোলনের জন্য জরুরি ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা খুবই প্রয়োজন। ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী গ্যাস মজুদ ছিল ১৬ টিসিএফ। বর্তমানে পেট্রোবাংলা বলেছে- গ্যাস মওজুদ রয়েছে ১৩ টিসিএফ। বর্তমান চাহিদার কারণে এই গ্যাস আগামী ১০ থেকে ১২ বছরে শেষ হয়ে যাবে।
ব্যাংক বীমা ও শেয়ারবাজার : বাংলাদেশের আর্থিক খাত খুবই ঝুঁকিতে রয়েছে। মাত্র কিছু দিন পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮শ কোটি টাকা উদাও হয়ে গেল। অন্যদিকে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও বেসিক ব্যাংকসহ বহু ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে অর্থ উদাও হয়ে গেছে। তাই আর্থিক খাতের সংস্কার জরুরি। বাজেট প্রস্তাবনায় এই ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা থাকা দরকার। আর সকল সরকারি ব্যাংক সমূহকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। বীমা খাতে শৃঙ্খলা এখনও ফিরে আসেনি। এই খাতকে আরও বেশি দেখবাল করা দরকার। বীমা খাতের অর্থকে শিল্পে বিনিয়েগের উদ্যোগ নিতে হবে।
শেয়ারবাজার বিগত ৫ বছর ধরে মরে মরে অবস্থায় বিরাজমান। সূচক এক ধাপ বাড়লে, পরের দিন আবার তিন ধাপ কমে। নীতিগত, কৌশলগত ও বাংলাদেশ ব্যাংক আরও স্বক্রিয় বিবেচনায় শেয়ারবাজারকে নিতে হবে। এই খাতে অন্যায়কারীদের শাস্তি আরও দ্রæত সম্পন্ন করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। সরকারি বড় বড় শিল্প ও ব্যবসা খাতকে শেয়ার বাজারে নিয়ে আসা দরকার।
মাদক দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ : আমাদের দেশে মাদক এখন এক মহামারী আকার ধারণ করেছে। গ্রামে গঞ্জে, অলিতে-গলিতে মাদকের বিপুল সরবরাহ। ছোট ছোট কচি ছেলেমেয়েরা মাদকে আক্রান্ত হয়ে অকালে ঝরে পড়ছে। পুরো জাতি আজ মাদকের এই কঠিন ছোবলে দিশেহারা। মাদকে না বলার জন্য সরকারের উদ্যোগ, বিনিয়োগ অনেক বৃদ্ধি করতে হবে। তা নাহলে আগামীতে তরুণ সমাজের বিরাট একটি অংশ মাদকের কারণে মূল জনশক্তির প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
দুর্নীতি আমাদের জীবনকে এক ভাবে মৃত জাতি করে ফেলেছে। সমাজের সকল স্তরে আজ ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম যে স্বভাবগত অভ্যাসে মেনে নিয়েছে। ‘দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরো নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ এই খাতে দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী ও কার্যকর করা দরকার।
দেশে জঙ্গি কার্যক্রম ও জঙ্গিবাদ একটি নতুন উপসর্গ সৃষ্টি হয়েছে। কেন জঙ্গি তৎপরতা, তার কারণ বের করা দরকার। শুধু পুলিশি শাসন দিয়ে জঙ্গি দমন করা যাবে না। মানুষের আর্থিক অভাব-অনটন থেকে বেকারত্বের সৃষ্টি। আর বেকার যুব শক্তিই নানা সামাজিক অপকর্মে জড়িত হচ্ছে। তাই বেকারত্ব দূর করতে হবে। বেকার যুবক-যুবতীদেরকে কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যদিকে জঙ্গি তৎপরতা বন্ধের জন্য সামাজিক আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে হবে। দেশে সকল স্তরে গণতান্ত্রিক কর্মকাÐ করার সুযোগ বন্ধ হয়ে পড়লে জঙ্গিবাদের চর্চা শুরু হয়ে যায়। এই জন্য আমাদের নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষতায় আসতে হবে। তা নাহলে গণতন্ত্র সুসংহত হবে না। আর গণতন্ত্র সুসংহত না হলে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা যাবে না। কাজেই এই বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে হবে।
মূসক আইন, ভ্যাট ও আয়কর : ভ্যাট আইন খুবই ভালো আইন। ভ্যাটের মাধ্যমে সরকার প্রচুর রাজস্ব আদায় করছেন। কিন্তু ভ্যাটের চাপে আজ ব্যবসায়ীরা দিশেহারা। আমাদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট খুবই বেশি। ভ্যাট আইন সংশোধন করে ভ্যাটের হার ৫ থেকে ৭ শতাংশ নিয়ে আসা দরকার। আর সকল খাতে ভ্যাট আরোপ একটি রোগে পরিণত হয়েছে। ভ্যাটের মূল আইন অনুযায়ী সর্বত্র ভ্যাট আরোপ করা যায় না। সরকার এখন সর্বত্র ভ্যাট আরোপ করে আমাদের পণ্যের খরচ অনেক বৃদ্ধি করে ফেলেছে।
আয়কর আইনের সংশোধন প্রয়োজন। আমাদেরকে আয়কর বিভাগ নাজেহাল করে আসছে। অন্যদিকে আয়কর দিতে গিয়ে একটুতে একটু বেঠিক হলেই প্রচুর পরিমাণ ঘুষ দিতে বাধ্য করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন ধাপে সর্Ÿোচ্চ ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত আয়কর দিতে হয়। এই হার অনেক বেশি কর্পোরেট খাতে ৪২ শতাংশ আয়কর দিতে হয়, তাও অনেক বেশি। আয়কর ব্যক্তি খাত থেকে প্রাতিষ্ঠানিক খাত পর্যন্ত সকল খাত থেকে উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা দরকার। ব্যক্তিখাত ১৫ শতাংশ ও প্রাতিষ্ঠানিক খাত পর্যন্ত ১০ শতাংশে নামিয়ে আনলে জনগণের অনেক উপকার হবে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা : অনেকেই হয়তো বলবেন বাজেটের সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কী সম্পর্ক রয়েছে? বাজেট অর্থনীতি বিষয়ক। রাজনীতি আলাদা বিষয়। তা ঠিক, কিন্তু রাজনীতি অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক। রাজনীতি ভালো না হলে অর্থনীতিও ভালো হয় না। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের প্রধানতম শর্ত হচ্ছে দেশি রাজনীতি স্থিতিশীলতা পুরোপুরি থাকা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পূর্বে ও পরে রাজনৈতিক শান্তি অনেকটা নষ্ট বললেই চলে। বিগত নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ অনেক দলই জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। নির্বাচন হয়েছে, সরকার গঠিত হয়েছে। দেশে ও বিদেশে এই নির্বাচন আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে। আজ ২০১৬ সাল চলছে। এখন প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার জোটের দলসমূহ দ্রæত সকলের অংশগ্রহণ মূলক একটি জাতীয় নির্বাচন চায়। কিন্তু সরকার নির্বিকার। ২০১৯ সালের পূর্বে কোনো নির্বাচন হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। সে অনুযায়ী সরকার দেশ চালাচ্ছে। এখন ধরে নেওয়া যাক, ২০১৯ সালের পূর্বে কোনো নির্বাচন হবে না। যদি তাই হয়, তবে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসা কঠিন হবে। দমন, মামলা, হামলা ও পুলিশি শাসনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ তেমন আশা করা কঠিন।
রাজনৈতিক এই অনিশ্চয়তার জন্য আমাদের বিদেশে জনশক্তি রফতানিও বেশ ধীর গতি পেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সঙ্গে আমরা ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হইনি। এমন কি মালয়েশিয়ায় আমাদের শ্রমশক্তি রপ্তানি ও খুবই ধীর গতিতে হচ্ছে। আশা করি, এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য বাজেট উপস্থাপনে অর্থমন্ত্রী অবশ্যই বাজেট বাস্তবায়নের স্বার্থে সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যের আহŸান জানাবেন।
ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের সকল জাতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলেরও এই ব্যাপারে পরিবেশ, পরিস্থিতি অনুযায়ী কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলকে সহনশীল হয়ে, নতুন ধারায় নতুন কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে সরকারের সাথে সহমর্মিতা সৃষ্টির মাধ্যমে এগিয়ে আসতে হবে।
দেশের উন্নয়ন সকল কিছুর ঊর্ধ্বে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক সকল সমস্যা মোকাবেলার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। এমনকি প্রতিবেশী দেশসমূহ থেকে নিজেদের দাবি আদায় করতে হলেও জাতীয় ইস্যুতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যই শক্তি। ঐক্যই অর্থনীতিকে গতিশীল করে।
লেখক : সাবেক সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই, বিটিএমএ, বিজেএমইএ
ধয়যধরফবৎ@ুড়ঁঃযমৎড়ঁঢ়নফ.পড়স
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।