বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
কালাম ফয়েজী : (পূর্ব প্রকাশিতের পর)
জিয়াউর রহমান রাতারাতি জনপ্রিয়তার এমন শীর্ষস্তরে পৌঁছে গেলেন যে, তিনি যদি স্বৈরতান্ত্রিক, সামরিকতান্ত্রিক যে কোন ফর্মুলায় দেশ চালাতে চাইতেন জনগণ সেটাই মেনে নিতো। কিন্তু তিনি আদর্শচ্যুত হলেন না। আদর্শচ্যুতি ঘটলে বিশাল জনপ্রিয়তা যে মুহূর্তে জন-আক্রোশে পরিণত হয়, সেটা তো তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের ঘটনায় স্বচক্ষে দেখেছেন। তাছাড়া তিনি পৃথিবীর নানা দেশের ইতিহাস নিয়ে যতটুকু পড়াশোনা করেছেন তাতে এটুকু নিশ্চিত হয়েছেন যে, জনগণকে ধোকা দিয়ে, তাদের বøাকমেইল করে পার পাওয়া যায় না। তাতে সাময়িক সুবিধা পাওয়া যায় বটে, স্থায়ী কোনো ফলাফল আশা করা যায় না।
অবশ্য একটা জায়গায় নেপোলিয়নের সাথে জিয়াউর রহমানের অমিল ছিল, যদিও দুজনই সামরিক বাহিনী থেকে আসা শাসক, দুজনই দূরদর্শী এবং প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তি এবং দুজনই নীতিতে কঠোর, কিন্তু অমিল হলো একজন ছিলেন অস্থিরমতি, সদাচঞ্চল ও যুদ্ধংদেহী আরেক জন শান্ত-স্থির এবং দেশের উন্নয়নে বিশ্বাসী। নেপোলিয়ন শত্রæ নিধন করেই ক্ষান্ত হতেন না, তিনি পররাজ্য দখলেও মত্ত হতেন। এজন্য জীবনের বেশিরভাগ সময় যুদ্ধময়দানে কাটাতে হয়েছে। জিয়াউর রহমান অবশ্য দেশের উন্নয়নকে যুদ্ধের স্থলে স্থান দিয়েছেন।
পৃথিবীতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। জাতিসংঘ, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন, আরবলীগ, আসিয়ান ও কমনওয়েলথের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এ সময় তো ইচ্ছে করলেই পররাজ্যে হামলা চালানো যায় না। তাই জিয়া পরিকল্পনা করলেন, দেশের প্রতিটি জনপদে তিনি তার পা রাখবেন। প্রতিটি নারী-পুরুষের সাথে কথা বলবেন, প্রতিটি মানুষকে উন্নয়নের হাতিয়ারে পরিণত করবেন। ফলে তার যুদ্ধ ছিল উন্নয়নের যুদ্ধ।
সবচেয়ে বড় ব্যবধান হলো- নেপোলিন সুযোগ বুঝে শুধু একনায়কত্বই কায়েম করেননি। নিজের প্রতিটি ভাই-বোনকে বিভিন্ন বিজিত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। জিয়া এমন আত্মীয়করণ ও দলীয়করণের ঘোরবিরোধী ছিলেন। তিনি নিজের সন্তানকে যেমন ভালোবাসতেন, তেমনি ভালোবাসতেন দূর পল্লীর অসহায় কোনো বালক-বালিকাকে। তিনি প্রত্যেকের জন্যই কিছু একটা করার কথা ভাবতেন।
তাছাড়া জিয়াউর রহমান ছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা। জনপ্রিয় নেতা শেখ মুজিব একজন গণতন্ত্রকামী নেতা হওয়া সত্তে¡ও ক্ষমতা গ্রহণের পর রাতারাতি তিনি গণতন্ত্রের পিঠে আঘাত হানলেন। তার জ্বলন্ত প্রমাণ ১৯৭৩ সালের ডাকসু নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন দুটি ছিল পূর্বের সমস্ত রেকর্ডব্রেক করা জালিয়াতির নির্বাচন। সে নির্বাচন দুটিতে ব্যালট বাক্স ছিনতাইসহ এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা নেই যা তখন ঘটেনি।
জিয়া সেই ধসে যাওয়া ভবনের ওপর নির্মাণ করলেন সুদৃশ্য মনোরম মজবুত প্রাসাদ। তিনি জনতাকে তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিলেন। শুধু ডাকসু নয়, সারা দেশের প্রায় সকল স্কুল, কলেজে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করলেন এবং নেতাহীন দেশে নেতৃত্ব সৃষ্টির প্রক্রিয়া চালু করলেন।
তিনি ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই সামরিক উর্দি খুলে ফেললেন। জনগণকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বললেন। তিনি বললেন, কেউ জবর দখল করে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। জনতা যাকে চাইবে রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকার কেবল তার।
তিনি রাজনীতি থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেন। সকলকে ওপেন কথা বলার, মতামত প্রকাশের স্বাধিকার দিয়ে দিলেন। অপরাপর রাজনৈতিক দলের মতো নিজেও একটি রাজনৈতিক দল গঠন করলেন। সংবাদপত্রের ওপর থেকে কালাকানুন তুলে নিলেন। সাংবাদিকদের সাংবাদিকতা করার অধিকার, ইচ্ছে মতো পত্রিকা প্রকাশের অধিকার উন্মুক্ত করে দিলেন।
ফরাসি জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে একদিন নেপোলিয়নের আগমন যেমন অপরিহার্য ছিল, তেমনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অরাজক পরিস্থিতিতে জিয়ার আগমনও অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। যদি তার ব্যাত্যয় ঘটতো, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ক্ষেত্রে কী ঘটতো, তা ছিল কল্পনার বাইরে।
বোনাপার্ট ১৭৮৫ সালে ১৭ বছর বয়সে কর্ম জীবন শুরু করেন সাব-লেফটেনেন্ট হিসেবে, তেমনি জিয়াউর রহমানও কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৫৩ সালে সেকেন্ড লেফটেনেন্ট পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে। তার বয়স তখন মাত্র ১৮। অসম্ভব দেশপ্রেমিক দুজন শাসক। দুজই ছিলেন বিপ্লবের সমর্থক এবং বিপ্লবের সন্তান। বিপ্লবীদের যে চিন্তা-চেতনা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধিকার অর্জনের উদ্দীপনা তারা মনেপ্রাণে নিজেদের ভিতর লালন করতেন। পরবর্তী সময়ে বিপ্লবের গতিধারায় যে সঙ্কটাপন্ন অবস্থার সৃষ্টি হয় তার জন্য রাজনীতিতে তাদের হস্তক্ষেপ অনিবার্য হয়ে পড়ে।
জিয়াউর রহমান ছিলেন সময়ের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তিনি সামরিক বাহিনীতে যোগদানের পর পাকিস্তানিদের দুর্ব্যবহার, অসৌজন্য আচরণ এবং অধিকারে বৈষম্য খুব কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করেন এবং ভিতরে ভিতরে ফুঁসতে থাকেন। অবশেষে স্বাধিকার আদায়ের জন্য যখন যুদ্ধ শুরু হলো, তিনি হলেন তার প্রথম সৈনিক। ঊষালগ্নে বিদ্রোহ করে তিনি তার অনুগত সেনাসদস্যদের নিয়ে যুদ্ধে নেমে পড়েন, সর্বাগ্রে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দুঃসাহসী ভ‚মিকা রাখেন এবং একজন দায়িত্বশীল-কমিটেড সেনানায়ক হিসেবে প্রাণপণ যুদ্ধ করেন। যুদ্ধের কোথাও তিনি একবিন্দু শৈথিল্য প্রদর্শন করেননি। স্বাধীনতা লাভের পর তিনি অপর সৈনিকদের মতো ব্যারাকে ফিরে যান এবং একজন সাধারণ সৈনিকের মতই রুটিন মাফিক কর্ম সম্পাদন করতে থাকেন নিষ্ঠা ও সততার সাথে। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ এবং আওয়ামী দুঃশাসনের সময়ও একজন নিয়মিত সৈনিক বলেই তিনি রুটিনের বাইরে যাননি। রাষ্ট্রের অনুগত সৈনিক বলে টু-শব্দও করেননি। ১৯৭৫ সালে যখন কতক বাকশাল সদস্য ও কতক বিপথগামী সৈনিক দ্বারা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন তখনও তিনি নিয়মবিরুদ্ধ কোনো কর্ম করেননি। কোনো রকম শৃঙ্খলাও ভঙ্গ করেননি। ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ ও শওকত জামিল কর্তৃক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটলে তিনি গৃহবন্দি হন। তিনি তখন হত্যাকাÐের শিকার হতে পারতেন। তিনি আগাগোড়া একজন নিষ্ঠাবান সৈনিক, সৎ জীবন যাপনকারী সেনাপতি এবং দেশপ্রমিক মুক্তিযোদ্ধা। ৭ নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে যখন বন্দিদশা থেকে বের করে আনা হলো তখনও তিনি রুটিন মাফিক কর্তব্যই করলেন। সেনাপ্রধান হিসেবে সেনাবাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনলেন, তাদের ব্যারাকে ফিরে যাবার নির্দেশ দিলেন এবং সামরিক শাসক খন্দকার মোশতাকের অধীন তিন বাহিনীর প্রধানদের মতো এক বাহিনীর প্রধান হিসেবে সামরিক উপ-প্রধান হলেন।
অতঃপর লীগনেতা মোশতাকের স্থলে প্রেসিডেন্ট ও সামরিক আইন প্রশাসক হয়ে আসেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সায়েম। অবশেষে ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বিচারপতি সায়েম পদত্যাগ করলে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার ৪০ দিনের মাথায় গণভোট দিয়ে তিনি জনগণের মতামত যাচাই করেন এবং বিপুল ভোটে বিজয় অর্জন করেন।
এরপর একজন তরুণ, পরিশ্রমী ও নিষ্ঠাবান শাসক হিসেবে জনগণের আস্থা অনুযায়ী সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহ সংযোজন করেন। তিনি বললেন, শাসক নয়, জনতাই ক্ষমতার উৎস। তিনি চাকরি লাভের প্রতিটি স্তরে মেধাকে গুরুত্ব দেন এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতিটি স্তরে নির্বাচনকে গুরুত্ব দেন। তিনি রাজনীতিকে প্রাসাদের চার দেয়ালের বেড়াজালে থেকে বের করে আনেন এবং সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অবারিত করে দেন। এই সুযোগে জাসদ-বাসদ আর কমনিস্ট পার্টির মতো খোদ আওয়ামী লীগও রাজনীতি করার সমান সুযোগ পায় এবং প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মতবিনিময়ের অকল্পনীয় অধিকার লাভ করে।
প্রেসিডেন্ট জিয়া বোনাপার্টের মতো দেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের জন্য কৃষি তথা খাল খননকে অগ্রাধিকার দেন এবং জন্মহার কমানোর জন্য পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের জন্য লোকদের উৎসাহিত করেন। তার পাশাপাশি শিক্ষা, শিল্প, যোগাযোগ ও উৎপাদনে বিপ্লব আনয়নের চেষ্টা করেন। নারীদের কর্মমুখী করার জন্য নানা স্থানে তাদের জন্য কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। তার পাশাপাশি বহিরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সার্ক গঠনসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে সরব এবং বীরোচিত ভ‚মিকা রাখেন।
আর্থিক সমস্যায় পীড়িত একটা দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জিয়া। দেশের ধনী নির্ধন, ক্রেতা-বিক্রেতা, লেখক- অধ্যাপক, ভ‚স্বামী, ভ‚মিহীন প্রতিটি নাগরিক আর্থিক সমস্যায় ছিল জর্জরিত। সে দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনি সকলকে একটি সাহসী বাক্য শোনালেন। বললেন, ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’। টাকা কোনো সমস্যাই নয়। তোমরা বিসমিল্ল¬াহ বলে কাজে হাত লাগাও। কাজ হয়ে যাবে। কী অলৌকিক শক্তির অধিকারী ছিলেন তিনি; যখনই কোনো কাজে হাত দিয়েছেন, কাজ অসমাপ্ত রাখেননি। যে কোনো স্থানে, যে কোনো কর্মে শিশু, বৃদ্ধ, যুবক সকলের মাঝে তার উপস্থিতি নোপালিয়নের মতো ৪০০০০ সৈনিকের উপস্থিতির শক্তি বহন করতো। কী অপরিসীম শক্তির আঁধার এবং প্রেরণার উৎস ছিলেন তিনি।
নিপোলিয়ন যেমন ফরাসি জাতির আশীর্বাদ এবং সর্বকালের অহংকারের অংশ, তেমনি জিয়াউর রহমানও ছিলেন জাতির দুঃসময়ের কাÐারী এবং চির উন্নতশির। তিনি কেবল জাতিকে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নই দেখাননি, দেশের মানুষের প্রতিটি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যুবক এবং যুব মহিলাদের মনে করতেন শক্তির উৎস। তিনি তাদের কর্মমুখী করার জন্য যুব মন্ত্রণালয়, যুব অধিদপ্তর স্থাপনসহ নানামুখী প্রশিক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করেন। বিনা জামানতে ব্যাংকলোন দেওয়ারও ব্যবস্থা করেন তিনি।
কনসাল হিসেবে নেপোনিয়ন ১৮ ঘণ্টা কাজ করতেন। জিয়াউর রহমান একটা দারিদ্র্যপীড়িত দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দিনরাত কাজ করতেন। কখনো কখনো সেটা ছিল দিনে ২২ ঘণ্টা। তিনি শুধু গ্রামে গঞ্জে ঘুরে বেড়াতেন না, বক্তৃতা বিবৃতির মধ্যেও তার কর্ম সীমাবদ্ধ ছিল না, তিনি দিনের নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে আসতেন, ফাইলওয়ার্ক শেষ করতেন এবং সাক্ষাৎ প্রার্থীদের সাক্ষাৎ দিতেন। কখনো তার টেবিলে সিদ্ধান্তের জন্য ফাইল পড়ে থাকতো না বা সাক্ষাৎ প্রার্থীদের এড়িয়ে চলে যেতেন না। রাত যতই হোক, তিনি সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি ব্যক্তিবর্গ, দলীয় নেতা এবং ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সঙ্গে মিটিং শেষ করেই ঘরে ফিরতেন।
নেপোলিয়ান বুর্জোয়া জমিদার শ্রেণি, সুবিধাভোগী যাজক সম্প্রদায় এবং সাধারণ শ্রেণির মানুষের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। এরপর তিনি নজর দেন রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও আর্থিক সমৃদ্ধির দিকে। অবশ্য তিনি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য রাজনৈতিক অধিকারে হস্তক্ষেপে পিছ-পা হননি। কিন্তু জিয়াউর রহমান এক্ষেত্রে তার চেয়েও অধিক সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি বর্তমান হাসিনা সরকারের মতো উন্নয়নের গান শুনিয়ে রাজনৈতিক স্বাধিকার তথা ভোটের সিল আর ভাতের প্লে¬ট কেড়ে নেননি। তিনি সত্যিকার অর্থেই প্রত্যেক শ্রেণি পেশার মানুষকে কর্ম করার অধিকার দান করেন এবং উন্নয়নমূলক ও জনহিতকর কর্মে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে দেশকে একটি স্থায়ী সুন্দর, স্বনির্ভর দেশে পরিণত করার জন্য আমরণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যান।
নেপোলিয়ন নিজে সম্মানিত ছিলেন এবং কীর্তিমানদেরও সম্মান দিতে জানতেন। বীরত্বব্যঞ্জক কর্মের জন্য বা জনহিতকর কাজের জন্য তিনি খেতাব বা উপাধি প্রদান ও পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। নেপোলিওঁ রাজনীতি, প্রশাসন, সামাজিক কর্ম, স্থানীয় সরকার, শিল্পকলা, সঙ্গীত, সাহিত্য ও বৈজ্ঞানিক তৎপরতায় নৈপূণ্য প্রদর্শনকারীদের খেতাব ও পদক দিয়ে সম্মানিত করতেন। ভারতবর্ষে মোগলরা, পরে ইংরেজরাও একইভাবে খেতাব ও পদক দিয়ে কীর্তিমানদের সম্মানিত করতেন। পাকিস্তান আমলেও এর ধারাবাহিকতা ছিল। যেমন ঈশাখাঁকে মসনবে আলা উপাধি প্রদান করেন স¤্রাট আকবর। এছাড়া শাহেন শাহ, রাজা, জমিদার বাহাদুর, নওয়াব বাহাদুর, রায় বাহাদুর, চৌধুরী, তালুকদার, স্যার, লাইট ইত্যাকার খেতাব মোগল আমল থেকে চালু হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে বিশেষ খ্যাতিমানদের সম্মানিত বা তাদের কীর্তির স্বীকৃতিদানের জন্য প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক প্রবর্তন করেন। এছাড়া বিভাগওয়ারী আরও অসংখ্য পদক দানের প্রথা চালু করেন।
সময়ের বরপুত্র নেপোলিয়ন ও জিয়া। নিজেরা প্রত্যেকে বীর ছিলেন ঠিকই কিন্তু উভয়ের জন্ম সাধারণ পরিবারে। তাদের কারো বংশে পূর্বপুরুষদের কেউ ক্ষমতার পাদপীঠে ছিলেন না। দুজনই সময়কে চ্যালেঞ্জ করে বীরত্ব দেখিয়ে জনমানুষের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতার শীর্ষে আরোহন করেছেন। দুজনই নিষ্ঠা ও সততা দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন। দুজনের পদে পদে শত্রæ থাকা সত্তে¡ও শত্রæকে ঘায়েল করার বদলে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার বদলে মানুষের ভালোবাসা নিয়েই থাকার চেষ্টা করেছেন। যতদিন থেকেছেন জাতির গৌরব বৃদ্ধির জন্য দিনরাত কাজ করেছেন।
কিছু লোক আছেন যারা পদের জন্য ধন্য হন। পদই তাদের যোগ্য বা পারফেক্ট করে তোলে। আবার ভিন্নধারার কতক কীর্তিমান লোকের জন্ম হয়, যাদের জন্য চেয়ার ধন্য হয়। আমার বিশ্বাস নেপোলিয়ন এবং জিয়াউর রহমান কর্মের গুণে চেয়ারকে ধন্য করেছেন। জাতির লোকেরা বীরত্বব্যঞ্জক কর্ম এবং দেশপ্রেমের জন্য তাদের চিরদিন মনে রাখবে। (শেষ)
লেখক : কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।