পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মুসলমানদের মাসব্যাপী ধর্মীয় উৎসব পবিত্র মাহে রমজান চলছে। সারা দিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় ইফতার করেন রাজধানী ঢাকার কোটি মানুষ। কিন্তু ওয়াসার অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে লাখ লাখ রোজাদারকে পানির অভাবে দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে পবিত্র রমজান মাসে। ইফতার ও সেহরির পানির জন্য পড়তে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্দশায়। বৈশাখের প্রচন্ড গরমে নাগরিক জীবনে হাঁসফাঁস। তার ওপর নেই পানি। রাজধানীর বসবাসরত অর্ধেক রোজাদার পানির তীব্র সঙ্কট।
রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান-বারিধারা-বনানীর পাশেই উত্তর বাড্ডার পানির অবস্থা আরো করুণ। ভোররাতে সেহরি খেয়ে ফজরের নামাজ পরে যখন ঢাকার অন্য সব এলাকার মানুষ ঘুমাতে যান ঠিক তখন উত্তর বাড্ডার তেঁতুলতলা বাজার এলাকার হাজার হাজার রোজাদার বাড়ি থেকে বের হন মগ-বালতি বা জার নিয়ে। ওয়াসার পাম্পের সামনে বসানো নলকূপের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে দিন শুরু হয় তাদের।
গত একমাস ধরে এই এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দা ওয়াসার সরবরাহ লাইন থেকে একফোঁটা পানিও পাচ্ছেন না। ওয়াসাকে দুইবার বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তবে মেলেনি কোনো প্রতিকার। ভুক্তোভোগীরা জানান, পবিত্র মাহে রমজানে আমাদের এলাকার রোজাদারদের পানির কষ্ট দেখে মনে হয় এ দেশে প্রশাসন আছে বলে মনে হয় না। কেউ যেন আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না। না জনপ্রতিনিধি না প্রশাসন। ফলে দূর্বিষহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে পবিত্র রমজান মাসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির তীব্র সঙ্কট বিরাজ করছে। এছাড়া কোনো কোনো এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে রয়েছে ময়লা ও উৎকট দুর্গন্ধ। গ্রীষ্মের দাবদাহ এবং রমজানের কারণে পানির চাহিদা বাড়লেও রাজধানীতে পানি সরবরাহ অনেকাংশে কমেছে। রমজান মাসে অনেক এলাকায় রান্না, ধোয়ামোছাসহ জরুরি কাজও ঠিকঠাকভাবে করতে পারছেন না গৃহিণীরা। রোজার মাসে জীবন বাঁচানোর তাগিদে প্রতিদিন বিপুল অর্থ খরচ করে বাইরে থেকে পানি কিনে খাচ্ছেন অনেক রোজাদার। পানির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রামপুরার বাসিন্দারা।
জুরাইনের মিজানুর রহমান অভিনব প্রতিবাদ করার খবর দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় স্থান পেয়েছে। কিন্তু প্রতিকার নেই। গত কয়েকদিন ধরে রামপুরা, প্রগতি সরণি ও হাতিরঝিল সংলগ্ন এলাকায় পানির তীব্র সঙ্কট চলছে। রামপুরার এক গৃহবধূ শেফালী খাতুন বলেন, এমনিতেই গরমের মধ্যে রোজা তার ওপর পানি নেই। পানি কিনে গোসল করা, খাওয়া, রান্না কি খুব সহজ কথা! দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না ওয়াসা।
জানা গেছে, পানি সংকটে মহানগরীর শ্যামপুর, মোহাম্মদপুরের আদাবর, নূরজাহান রোড, নবোদয়, চাঁদনি হাউজিং, বাসবাড়ি, বছিলা, যাত্রাবাড়ির গোবিন্দপুর, দনিয়া, রসুলপুর, কুদারবাজার, মুরাদপুর, নূরপুর, মোহাম্মদবাগ, ডেমরা, মোমেন বাগ, ডগাইর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬৬, ৬৫ ও ৬৬ নম্বর সড়ক, পূর্ব রাজাবাজার, রায়ের বাজার, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, মধুবাগ, বাড্ডা, উত্তরা, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার পানির অভাবে রোজাদারদের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা ঢাকা ওয়াসার কাছে লিখিত, মৌখিক এবং অনলাইনে অভিযোগ দিয়েছেন। স্থানীয় কাউন্সিলর, এমপি ও মেয়রদের কাছেও অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিকার মেলেনি। বরং রমজানে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে পানি সঙ্কট।
অনুসন্ধান করে জানা যায়, উত্তর কাফরুল, দারুস সালাম রোড, মিরপুর ১৩-এর সি বøকে ১ নম্বর রোড, পশ্চিম বাইশটেকি, পূর্ব বাইশটেকি, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৬, ৭, ১২ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়ক, বাড্ডার আদর্শনগরের মসজিদ গলি এবং ৩ নম্বর রোড, পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের রেবতি মোহন দাস লেন, লক্ষীবাজার ও একরামপুর, মগবাজারের মধুবাগসহ আশপাশের এলাকা, যাত্রাবাড়ী, মীরহাজীরবাগ, গেন্ডারিয়া, পোস্তাগোলা, নাজিমুদ্দিন রোড, চকবাজার, ইমামগঞ্জ, পাতলা খান লেন, আগামাসি লেন, আরমানিটোলা, বংশালের সিদ্দিক বাজার, বিআরটিসি বাস ডিপো, কাপ্তানবাজার, নাজিরাবাজার, চাঁনখারপুল, নাজিমুদ্দিন রোড, সাতরোজা, হোসনি দালাল রোড, মালিবাগ, বেইলি রোড, শান্তিনগর, শ্যামলী, খিলজী রোড, পিসি কালচার সোসাইটিসহ বিভিন্ন এলাকায় কোথাও পানির তীব্র সঙ্কট আবার কোথাও পানিতে ময়লা-দুর্গন্ধ। এলাকাবাসির সঙ্গে কথা বললে তারা কেউ জানান ওয়াসার পাইপে পানি আসছে তবে ব্যবহারের অনুপযোগী। সরবরাহ করা পানিতে ময়লা এবং দুর্গন্ধ। আবার কেউ বলছেন রমজান শুরুর পর থেকে পানির তীব্র সঙ্কট।
তীব্র পানি সঙ্কট মোকাবিলায় উত্তর বাড্ডার এলাকার মসজিদ রোডে ওয়াসার পাম্পের সামনে বসানো হয়েছে দুটি নলকূপ। ভোর পাঁচটা থেকে পানি পাওয়া যায়। সেখানে প্রতিদিনের দৃশ্য হলো- প্রতিদিন ভোর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে পানি সংগ্রহ করেন স্থানীয় বাসিন্দরা। বাড্ডার ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের অভিযোগ পানি সঙ্কট মোকাবিলায় ওয়াসা তাদের সঙ্গে উদাসীন আচরণ করছে। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে তাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন বাড়িওয়ালা বলেন, গত বছরও রমজানেও পানির সঙ্কট হয়েছিল, তবে সেটা এতটা তীব্র ছিল না। কলে পানি নেই, আমাদের টয়লেটে যেতে হলেও নলকূপ থেকে পানি এনে ৭ তলায় ওঠাতে হয়। আমার বাসায় যারা ভাড়া থাকতেন, তাদের অনেকে চলে যাওয়ার নোটিশ দিয়েছে। রান্না করার জন্য পানি কিনতে হচ্ছে। ওয়াসার গাফিলতির কারণেই আমাদেরকে এসব ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। পানির জন্য হাহাকার চলছে।
তবে বাড্ডার যেসব বাড়িতে পানির সঙ্কট নেই সেখানে আবার সমস্যাটা ভিন্ন। লাইনের সেই পানিতে এতো দুর্গন্ধ যে ফুটিয়েও সেই পানি পান করা যায় না। গোসল, ধোয়া মোছার কাজও করা যায় না। ফলে তাদেরকেও শেষ পর্যন্ত পানির খোঁজে বাড়ি থেকে বের হতেই হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাধীনতা সরণী, পূর্বাচল এবং হাজীপাড়া পাম্প থেকে পানি আসে উত্তর বাড্ডা এবং বাড্ডা এলাকায়। এ কারণে এলাকাটিতে পানির প্রবল্য অনেক কম।
শফিকুল ইসলাম নামে এক স্থানীয় বলেন, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওয়াসার প্রকৌশলী ক্ষিতিশ চন্দ্রকে এলাকার ৭২ জন বাসিন্দার স্বাক্ষরসহ স্মারকলিপি দেয়া হয়। কিন্তু সে বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার আগেই মারা যান ক্ষিতিশ চন্দ্র। ফলে সে দফায় পানির সমস্যার সমাধান হয়নি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রকৌশলী ইকরামুল ইসলামকে আবারও স্মারকলিপি দেয়া হয় পানির দাবিতে।
কিন্তু এরপরেও কোনো উন্নতি হয়নি। অপর এক ভুক্তভোগী বলেন, বাড্ডা এলাকায় ওয়াসার পানির লাইন লেভেল নয়। এ কারণে রাস্তার পাশের বাড়িগুলোতে পানির কোনো সঙ্কট নেই। তাদের বাড়ি ভেতর তাদেরকে এক মাস ধরে ভয়াবহ পানি সঙ্কট মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
বাড্ডা ইউনিয়ন বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার শেখ সেলিম। পানি সঙ্কটের কারণে প্রতিদিন গোসলও করতে পারেন না জানিয়ে তিনি বলেন, সমস্যাটির সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এলাকাবাসীকে একটু ধৈর্য্য ধরতে অনুরোধ করেন তিনি।
সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ওয়াসার উপ-সহকারী প্রকৌশলী হীরক আল মামুন বাড্ডায় পানির লাইনের অসমতার অভিযোগটি স্বীকার করে নেন। বিষয়টি সমাধান করার জন্য ওয়াসা চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, তীব্র গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে কিন্তু উৎপাদন বাড়েনি। এই এলাকায় পানি সঙ্কটের এটিও একটি বয় কারণ। এছাড়া রোজার সময় এমনিতেও বেশি পানির প্রয়োজন পড়ে। তবে সমস্যাটি সমাধানের জন্য আমরা জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।