Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা-চট্টগ্রামে যানজট

সব উদ্যোগই ব্যর্থ

আবদুল্লাহ আল মামুন | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৯, ১২:০১ এএম

প্রতিবারের মতো এবারও রোজার শুরুর দিন থেকেই ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়েছে রাজধানীবাসী। দিন যতো গড়াচ্ছে যানজটের তীব্রতা ততোই বেড়ে চলেছে। অফিস শেষে বাসায় ফেরার তাড়া থাকলেও পরিবারের সঙ্গে ইফতার করা হয়ে ওঠে না কর্মজীবী রোজাদারদের। শুধু রাজধানী নয়, সারাদেশের সড়ক মহাসড়কের অবস্থাও একইরকম।
গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজটের কবলে পড়ে ঘণ্টার ঘণ্টা একই জায়গায় আটকে থাকতে হয় যাত্রীদের। উড়াল সেতু, ইউলুপ ও ফোরলেনসহ অনেক উন্নয়ের দাবি করা হলেও যানজট কোনোভাবেই বাগে আনতে পারছে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এদিকে রমজান মাসে যানজটের কবল থেকে নগরবাসীর স্বস্তি মিলবে বলে ট্রাফিক পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে ঘটেছে উল্টোটি। যানজটতো কমেইনি বরং আগের চেয়ে অতিরিক্ত যানজটে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যানজট নিরসনে নেওয়া সব উদ্যোগই যেন ব্যর্থ হয়েছে।
নগরীর রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি, চলমান মেট্রোরেলের কাজ, ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি, বিশৃঙ্খল যান চলাচল, ভারী বৃষ্টিতে সম্ভাব্য জলাবদ্ধতা, বিভিন্ন পয়েন্টে গাড়ি থামিয়ে মালিক-শ্রমিকদের চাঁদাবাজি, ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি ও যথাযথ দায়িত্ব পালনের অবহেলাসহ নানা কারণে রজাধানীসহ সাড়াদেশে যানজটের কারণ বলে বলা হচ্ছে। এর বাইরে রাজধানীর গুলিস্তানসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাথে দোকান বসানোর দাবিতে হকাররা আন্দোলন করায় যানজট ও জনভোগান্তি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত মঙ্গলবার ফুটপাথে দোকানর বসানোর অনায্য দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে পুরো গুলিস্তান এলাকা অচল করে দেয় হকাররা।
ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, এলিফ্যান্ট রোড এবং পল্টন, গুলিস্তান ও মতিঝিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকে ফুটপাথে থাকার হকার তুলে দিলে যানজট হ্রাস পাবে। কিন্তু হকার উচ্ছেদে অভিযান চালানো হলেও সেটা এখন চোর-পুলিশ খেলায় রূপ নিয়েছে। একদিক থেকে হকারদের সরানো হলেও সাথে সাথেই অপর প্রান্তে ফুটপাথে গিয়ে আবারও বসে পড়ে হকাররা। যদিও রমজানে তাদের জন্য হলিডে মার্কেটের ব্যবস্থা থাকছে।
এর আগে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, রোজায় যানজট সহনীয় রাখতে করণীয় সব বাস্তবায়ন করতে হবে। সাধারণ মানুষ যেন ইফতারের আগে নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। যদিও সে কাজের ফল বা কোন বাস্তবরূপ নগরবাসীর চোখে পড়েনি।
ডিএমপির পক্ষ থেকে রমজানে ফুটপাথে কোথাও হকার বসতে না দেওয়া, চিহ্নিত জায়গাগুলোতে ট্রাফিকের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন, ক্রাইম বিভাগের পুলিশের দায়িত্ব পালন, ঘরে ফেরার মনোভাবে উল্টো পথে গাড়ি না চালানো, ট্রাফিক সিগন্যাল মানা, নির্ধারিত গতিতে গাড়ি চালানো, যেখানে-সেখানে পার্কিং না করা ও মার্কেট ও শপিং মলের সামনে গাড়ি পার্কিং থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
রমজানের প্রথম দিন মঙ্গলবার ছাড়াও গত কয়েকদিন রাজধানীর পোস্তগোলা, যাত্রাবাড়ী, বিশ্বরোড, মতিঝিল, কমলাপুর, জাতীয় প্রেস ক্লাব, পল্টন মোড়, কাকরাইল, মালিবাগ, শান্তিনগর, রামপুরা, শাহবাগ, আজিমপুর, সায়েন্স ল্যাব, মিরপুর রোড, সাতমসজিদ রোড, গাবতলী, মিরপুর, ফার্মগেট, তেজগাঁও মহাখালী, কাকলী, এয়ারপোর্ট ও আব্দুল্লাহপুর এলাকা ঘুরে তীব্র যানজট দেখা গেছে। এসব সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
বাড্ডা এলাকায় আবু সালেহ নামে এক যাত্রী বলেন, বাড্ডায় ইউ লুপ হয়েছে। কিন্তু গাড়ির এত চাপ, এসব করেও লাভ হচ্ছে না। রাস্তা ছেড়ে অলিগলি দিয়ে ঘুরে ও ফুটপাত মাড়িয়েও গন্তব্যে যাওয়ার পথ যেন শেষ হয় না।
এদিকে, সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ভরদুপুরেও রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোয় যানজটে অবরুদ্ধ ছিল যাত্রীরা। যাত্রীদের অভিযোগ- মেট্রো রেল ছাড়াও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসার ‘সমন্বয়হীন’ উন্নয়ন কর্মকান্ডে সড়কে চলাচলের অংশ কমে যাওয়ায় স্বাভাবিক সময়েই যানজট তীব্র হচ্ছে। এর ওপর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে গাড়ি চলাচল বেড়ে যাওয়ায় অবস্থা আরো বেগতিক হয়েছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানী ওভারপাসে তীব্র যানজট থাকায় মহাখালী বাস টার্মিনাল যেতে যাত্রীদের দেড় ঘণ্টা লেগেছে। অনেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যের আগেই নেমে পড়েন। হালিমা আক্তার নামের এক যাত্রী বলেন, বিমানবন্দরের সামনে মহাখালী আসতে দুই ঘণ্টা লেগেছে।
ট্রাফিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাসে যেখানে সার্ক ফোয়ারা, বাংলামটর এলাকায় ঘণ্টায় ৮০০ গাড়ি অতিক্রম করত, মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় এই সংখ্যা নেমে গেছে ঘণ্টায় ৫০০ টিতে। সকাল ও বিকেলের যানজটের কারণে এই সংখ্যা আরও কমে যায়। এ কারণে যানজট ছড়িয়ে পড়ছে ঢাকা শহরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সড়কে।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) ট্রাফিকের উত্তর ও দক্ষিণ বিভাগে মোট ১৫টি জোন রয়েছে। প্রত্যেক জোনে একজন করে সহকারী কমিশনার দায়িত্ব পালন করেন। এসব জোনের অধীনে শতাধিক ট্রাফিক ইনস্পেক্টর এবং অন্তত ৯০০ জনের মতো সার্জেন্ট দায়িত্ব পালন করেন। যদিও ট্রাফিক পুলিশকে মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে মামলা দেওয়া ছাড়া যথাযথভাবে যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে খুব একটা দেখা যায় না বলে অভিযোগ নগরবাসীর।
গত বছর এক জরিপে উঠে আসে- যানজটে শুধু ঢাকায় নষ্ট হচ্ছে দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা, যার বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে, সর্বশেষ গত মার্চ পর্যন্ত রাজধানীতে গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার ৫৬৭টি। এ বছরের প্রথম তিন মাসেই নিবন্ধিত হয়েছে ৪০ হাজার ৬৭টি গাড়ি। যানজট নিয়ন্ত্রণে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার জনবল আছে প্রায় ৮ হাজার। রমজান মাসে বাড়তি জনবল নিয়েও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না যানজট। ঢাকায় দিনে গড়ে নিবন্ধিত হচ্ছে ৪৪৫টি গাড়ি।
এআরআইয়ের গবেষক ও বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বলেন, রমজান মাসে সুষ্ঠুভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করতে গণপরিবহনের চলাচলের পরিমাণ বাড়াতে হবে। তাদের তথ্যমতে, ঢাকার ১৩ লাখ যানবাহনের মধ্যে বাস বা গণপরিবহন রয়েছে মাত্র সাড়ে ৪ হাজার। প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলে ১২ লাখ মানুষ চলাচল করতে পারেন। বাকি প্রায় ৭০ লাখ মানুষের ভরসা এই সাড়ে ৪ হাজার গণপরিবহন।
জানা গেছে, রোজার মাসে যানজট কমাতে গত ২৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঢাকার ট্রাফিক পুলিশ ও মেট্রো রেল নির্মাণকাজ পরিচালনাকারী ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়েছে। পরে গত ২৫ এপ্রিল ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সঙ্গে পরিবহন মালিক, শ্রমিক, বিভিন্ন বিপণিবিতানের প্রতিনিধি ছাড়াও ডিএমটিসিএল ওয়াসা ও ট্রাফিক বিভাগের বিশেষ বৈঠক হয়। গত সোমবার রমজানে যানজট নিরসনে ১৪টি নির্দেশনা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।



 

Show all comments
  • Morshed Alam ১১ মে, ২০১৯, ১:০৩ এএম says : 0
    এইটা মনে হয় আজীবনের একটা ভোগান্তি।।
    Total Reply(0) Reply
  • নন্দীর হাট চট্রগ্রাম বিএনপি ১১ মে, ২০১৯, ১:০৩ এএম says : 0
    সবার জানা থাকা উচিত !যে ট্রাক গুলা যাচ্ছে কই?
    Total Reply(0) Reply
  • Abir Abir Abir Khan ১১ মে, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
    এই মেঘনা ব্রিজ টা একটা অপয়া ব্রিজ
    Total Reply(0) Reply
  • Abir Abir Abir Khan ১১ মে, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
    এই মেঘনা ব্রিজ টা একটা অপয়া ব্রিজ
    Total Reply(0) Reply
  • Masud Jahangir ১১ মে, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
    মহাসড়কে যানযট মানে ঈদ আসন্ন
    Total Reply(0) Reply
  • Ilias Kalam ১১ মে, ২০১৯, ১:০৫ এএম says : 0
    চাঁদাবাজির জন্য দায়িত্বশীলদের দ্বারা সৃষ্ট যানজট। উর্ধতন কতৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে হবে।ত নাহলে কেয়ামত পর্যন্ত এই যানজট মুক্ত হবে না। যখন ঢাকায় যাতায়াতে ফেরি পরা পার হতে হতো, তখন থেকে আজ পর্যন্ত খুব একটা উন্নতি হয়নি। প্রগতিশীল রাষ্ট্রের জন্যে এটা খুবই ভয়ঙ্কর বিষয়। আমাদের অর্জন কম হয়নি, যানজট আমাদের জীবন থেকে কর্মঘন্টা কেড়ে নিচ্ছে। আর বেপরোয়া যানবাহন কেড়ে নিচ্ছে মহা মূল্যবান জীবন।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdullah Al Kaioum ১১ মে, ২০১৯, ১:০৫ এএম says : 0
    উন্নয়নের ঠেলায় জান জট নিত্য দিনের ব্যপার ।।
    Total Reply(0) Reply
  • Absar Hussain ১১ মে, ২০১৯, ১:০৫ এএম says : 0
    অব্যাবস্থাপনা। ট্রাফিক পুলিশ ডিউটিই করেনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Shafi Khan ১১ মে, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
    Only for this railway services must be increased n widened in the country which will also save money energy n time simultaneously. But conspiracy is going on by throwing Stone in train by the vested quarters to discourage train journey of the passengers.
    Total Reply(0) Reply
  • Kash Full ১১ মে, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
    ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে জ্যাম এ আর নতুন কি?
    Total Reply(0) Reply
  • Dipak Debnath ১১ মে, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
    এইভাবে এলোমেলো হয়ে গাড়ি চলাচল করলে কার বাপের সাধ্য আছে যানযট দূর করবে?
    Total Reply(0) Reply
  • Hossain Zuberee ১১ মে, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
    বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এসব হবেনা তো কি হবে। বাকীটা বলে লাভ নেই। আমরা যারা জীবিত এই সৌভাগ্য।
    Total Reply(0) Reply
  • রুহুল আমিন ১১ মে, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
    ইদের ২৬ দিন আগে থেকেই শুরু হইলো মনে হয়!
    Total Reply(0) Reply
  • Zafar Imam ১১ মে, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
    ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার বিশেষ করে যারা এই রাস্তায় নিয়মিত যাতায়াত করেন তারা এই ভোগান্তির শিকার যত তারাতাড়ি মেঘনা দাউদকান্দি ব্রিজ দুটো উদ্ভোধন করা যায় ততই মংগল....
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Mosharaf hossin ১১ মে, ২০১৯, ১০:৩৪ এএম says : 0
    কোনো ব্যাপার না সার্থনেষী কিছু পুলিশ কর্মকর্তার পকেট ভারী হচ্ছে। কৈ আজতু মেঘনা ব্রিজ এ কোনো জেম নাই। কি এমন অলৈকিক ঘটনা গটল। ............সব পুলিশ এর কার সাজি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যানজট

১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
৯ জানুয়ারি, ২০২৩
১৯ ডিসেম্বর, ২০২২
২৭ নভেম্বর, ২০২২
২৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ