Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাঙছে ইছামতি : পাল্টাচ্ছে মানচিত্র

সাতক্ষীরা থেকে আবদুল ওয়াজেদ কচি | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

আন্তঃসীমান্ত নদী ইছামতির বাংলাদেশ পাড়ে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ক্রমান্বয়ে ভ‚মি হারাচ্ছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পাড়ের দেবহাটা উপজেলার ছয়টি মৌজার অন্তত ২১০ একর ভূমি নদীগর্ভে চলে গেছে। একই সাথে ভাঙন আতংকে দিন কাটাচ্ছে ইছামতি পাড়ের লাখো মানুষ। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যদিয়ে দিন কাটছে তাদের।
দেবহাটা উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেবহাটার ভাতশালা সীমান্তের ৫৫ একর, টাউন শ্রীপুর মৌজার ২৬১৩ ও ৯৯৫ দাগের ৯৬.৬৩ একর, সুশিলগাতী মৌজার ১১৫০ দাগের ২২.৪১ একর, শিবনগর মৌজার ৭০৭ ও ৭৩৮ দাগের ২৫.২১ একর, দেবহাটা মৌজার ৫৫০৫ দাগের ৯.৪৪ একর, বসন্তপুর মৌজার ১ ও ২ দাগের ১.৩৭ একর জমি ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইছামতির ওপারে ভাঙন ঠেকাতে ভারত সরকার নদীর পাড়ে ইটভাটা স্থাপন, আরসিসি বøক স্থাপনসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও বাংলাদেশের এপারে ভাঙছেই। আর এতে ভূ-খন্ড হারাচ্ছে বাংলাদেশ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দেবহাটা উপজেলার নাংলা হতে নওয়াপাড়া সুইচ গেট পর্যন্ত ইছামতি নদীর বেড়িবাধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেছে। দুর্বল ও জরাজীর্ণ এই বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে বসেছে। কোথাও কোথাও ভাঙতে ভাঙতে মাত্র এক দেড় ফুট অবশিষ্ট আছে। আর এই ভাঙন আরও তীব্রতর করে তুলেছে সম্প্রতি বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ফণি।
এতে যে কোন সময় বাঁধ ভেঙে দেবহাটা উপজেলার ইছামতি সীমান্ত সংলগ্ন খানজিয়া, নাংলা, নওয়াপাড়া, ছুটিপুর, গাংআটি, হাদিপুর, বসন্তপুর, খানজিয়া, শুলপুর, নলতা, শেহারা, দুরদুরে, মাঘুরালীসহ ১০-১৫টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশংকা বিরাজ করছে।
আর তা হলে শত শত মৎস্যঘের, হাজার হাজার বিঘা জমির ফসলের আবাদ ভেসে যাওয়াসহ জনজীবনে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসার আশংকা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, দেবহাটা থানা ভবন হতে কয়েক গজ দূরে সুশীলগাঁতী নামক স্থানে ২০০৯ সালে বেড়িবাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এরপর ২০১৩ সালে আবারো ভাঙন দেখা দেয় একই স্থানে। পরে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ভাঙন দেখা দেয় নাংলা বাজার, দেবহাটা পাঠবাড়ি ও সুশীলগাঁতী-টাউনশ্রীপুরের বেশ কিছু পয়েন্টে। সে সময় সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ অনেকেই পরিদর্শন করেন ভাঙনকবলিত এলাকা। তারপরও অদ্যাবধি ভাঙনকবলিত বেড়িবাঁধ স্থায়ীভাবে সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আর প্রতিবছর ভাঙনের ফলে নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে বাংলাদেশের মানচিত্রের একটি অংশ।
সীমান্ত পাড়ের বাসিন্দা সাইদুর রহমান জানান, বেড়িবাঁধ ভাঙনে আমাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। সীমান্তবর্তী এই বেড়িবাঁধ দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও তাতে নজর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
স্থানীয় নজরুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও নদীর পাড়ে পর্যাপ্ত বনভূমি না থাকায় ভাঙছে ইছামতির পাড়। আমাদের দাবি আরসিসি বøক দিয়ে বেড়িবাঁধ রক্ষা করা হোক।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর সেকশন অফিসার ওবায়দুল হক মল্লিক জানান, ইছামতির ভাঙনকবলিত বেড়িবাঁধ সংস্কারে টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। খুব দ্রæত কাজ শুরু হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ