Inqilab Logo

রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ভুয়া বিআরটিএর ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার! গ্রেফতার ৫

টার্গেট অদক্ষ চালক ও ফিটনেসহীন গাড়ি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০১৯, ১২:২৮ এএম

দীর্ঘ এক যুগ ধরে টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) রুট পারমিট দিয়ে আসছে একটি চক্র। একটি গাড়ি রাস্তায় চলাচলের জন্য শুধু রুট পারমিটই নয়, ট্যাক্স টোকেন, ফিটনেস সনদ, বেজিস্ট্রেশন, ইন্সুরেন্স সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ডিজিটাল নম্বর প্লেটসহ যতো কাগজ প্রয়োজন হয়- তার নকল কাগজপত্র প্রস্তুত করে সরবরাহ করতো চক্রটির সদস্যরা। আর এজন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার গড়ে তুলেছিলো তারা। চক্রটি গাড়ি ও চালকের ধরন বা চাহিদা ভেদে বিভিন্ন অংকের অর্থের বিনিময়ে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিসের’ ন্যায় সব ধরনের জাল সার্টিফিকেট প্রস্তুত করে দিত। আর এর মূল গ্রাহক ছিলেন অদক্ষ ড্রাইভার এবং চোরাই বা ত্রুটিযুক্ত গাড়ির মালিকরা। তারাই স্বল্প খরচে এই চক্রের মাধ্যমে জাল কাগজপত্র সংগ্রহ করতেন। এ চক্রের কাছে আছে বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সিল, স্ট্যাম্প সবই। কিন্তু প্রতিটি জিনিসই জাল। এ যেন এক বিকল্প বিআরটিএ।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, এই জালিয়াত চক্রটি প্রতারণা করে আসছিলো গেলো ১০ থেকে ১২ বছর ধরে। এদের মধ্যে আনোয়ারুল হক শিমুল এবং আব্দুল জলিল আগেও গ্রেফতার হয়েছিল। জামিনে বের হয়ে আবারো একই কাজ করছিল তারা।
গত মঙ্গলবার মধ্যে রাতে বিআরটিএর জাল কাগজপত্র প্রস্তুতকারী এ চক্রের ৫ সদস্যকের গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আবদুল খালেক (৬৭), আনোয়ারুল হক শিমুল (৪২), আবদুল জলিল (৬৪), আবদুর রহিম (৩১) ও মোতালেব হোসেন (৫৮)। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ মোটরযানের জাল রুট পারমিট ফরম, রুট পারমিট, রেজিস্ট্রেশন সনদপত্র, ফিটনেস সনদপত্র, ট্যাক্স টোকেন ফরম, বীমা ফরম, বীমা স্ট্যাম্প স্টিকার, ডকুমেন্ট প্রাপ্তি রশিদ, রেজিস্ট্রেশন আবেদন ফরম, বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও অফিসের ১৫০টি সিল এবং গাড়ির ডিজিটাল নম্বর প্লেট জব্দ করেছে বলে দাবি করেছে গোয়েন্দারা। এছাড়াও এসব কাগজপত্র জাল করতে ব্যবহৃত ১টি ১৭ ইঞ্চি কালার মনিটর, ১টি সিপিইউ, ১৬০ জিবি হার্ডডিস্ক এবং ১টি প্রিন্টার জব্দ করা হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, এই প্রতারিত কাগজ দিয়ে শুধু রাষ্ট্রকে ফাঁকি দেয়াই হয় না, অদক্ষ ও ফিটনেসহীন গাড়িগুলোকেও রাস্তায় নিয়ে আসা হয়। এতে দেখা যায়, দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে যেসব গাড়ি দেখা যাবে এসব ফেক ফিটনেস নিয়েই গাড়িগুলো চলছে। এরকম অসংখ্য জাল সার্টিফিকেট বাজারে ছড়িয়ে দিয়েছে চক্রটি। এর পেছনে বিআরটিএর কেউ আছে কি না তা যেমন তদন্ত হবে, পাশাপাশি সংস্থাটির সেবাদানে হয়রানি কমলে এ ধরণের প্রতারণা অনেকটাই কমবে বলে আশা পুলিশের।
আবদুল বাতেন বলেন, অনেক সময় মানুষ হ্যারেসমেন্ট থেকে মুক্তি পেতে তাদের শরনাপন্ন হয়। লাগে ৫ হাজার টাকা করতে পারে দু হাজার টাকায়। এদিকে, যে লাইসেন্স নিচ্ছে সে হয়ত জানেও নাযে ফেক লাইসেন্স নিয়ে চলছে।
গোয়েন্দারা জানায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এ চক্রটি গ্রাহক সংগ্রহ করে বিভিন্ন এডিটিং সফটওয়্যার এর সাহায্যে নকল এসকল কাগজপত্র বানিয়ে নিজেরাই সিল স্বাক্ষর করে পুনরায় গ্রাহকদের সরবরাহ করত। গ্রাহকদের বেশিরভাগই যারা অদক্ষ ড্রাইভার হিসেবে অথবা চোরাই বা ত্রæটিযুক্ত গাড়ির জন্য স্বল্প খরচে এই চক্রের মাধ্যমে জাল কাগজপত্র সংগ্রহ করত।
জানা গেছে, গত রোববার ধানমন্ডি এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে মোস্তফা কামাল নামে একজন গ্রেফতার হয় ড্রাইভিং লাইসেন্স জাল করার দায়ে। তার দেয়া তথ্যে ভিত্তিতেই রাজধানীর কাফরুলে অভিযান চালিয়ে এই চক্রটিকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দারা।
##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ