মাহে রমজানের মানবিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক তাৎপর্য
হিজরী বর্ষের নবম মাস রমজান। রমজানের অর্থ পুড়ে ফেলা, ধ্বংস করা, নিশ্চিহ্ন করা, রোদের প্রখরতা,
মাহে রমজানে আল্লাহতাআলা অধিক রহমত-বরকত নাজিল করেন এতে বান্দার কৃত গুনাহ ও পাপ জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ নিয়ামতপূর্ণ মোবারকময় মাসে পরম করুণাময়ের অপার রহমতের দরজা তাঁর নেক বান্দাদের জন্য খুলে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের সামনে রমজান মাস উপস্থিত। এটা অতিশয় রহমত-বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসের রোজা আল্লাহ তোমাদের ওপর ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত হয়ে যায়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এ মাসে বড় বড় শয়তানকে আটক করে রাখা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে লোক এ রাতের মহাকল্যাণ লাভ থেকে বঞ্চিত থাকল, সে প্রকৃতই সবকিছু থেকে বঞ্চিত।’ (আহমাদ ও নাসাঈ)
মহা বরকত ও কল্যাণময় মাহে রমজানে বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া-দরুদ পাঠ, তওবা-ইস্তেগফার ও প্রার্থনা পেশের মাধ্যমে রহমত কামনা উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা দিয়েছেন, ‘এ মাসে পরম করুণাময় আল্লাহতাআলা তোমাদের দিকে শুভ দৃষ্টি প্রদান করেন এবং রহমত বর্ষণ করেন, তোমাদের সব গুনাহ মাফ করে দেন ও দোয়া কবুল করেন। তোমাদের মধ্যে যদি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী অধিক সৎ কাজ করে শীর্ষস্থান অধিকার করতে পারে, আল্লাহ তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যক্ষ করতে থাকেন ও ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন। তোমরা অনেক বেশি সৎ কাজ করে আল্লাহকে দেখিয়ে দাও। আল্লাহর দয়া-অনুগ্রহ থেকে এ মাসে একমাত্র হতভাগ্যরাই বঞ্চিত থাকে।’
নবী করিম (সা.) মাহে রমজানকে রহমত, বরকত ও কল্যাণের মাস বলে আখ্যায়িত করেছেন। রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর বিশেষ রহমতে পরিপূর্ণ। ঝরনাধারার মতো আল্লাহর আশিষধারা রোজাদারদের জন্য অলক্ষে বর্ষিত হতে থাকে। রমজান মাস এমন একটি মাস, যার প্রথম ১০ দিন রহমতে পরিপূর্ণ, দ্বিতীয় ১০ দিন ক্ষমা ও মাগফিরাতে পরিপূর্ণ এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নামের শাস্তি থেকে নাজাত ও মুক্তির জন্য নির্ধারিত। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘এটি এমন একটি মাস, যার প্রথম ভাগে আল্লাহর রহমত, মধ্যভাগে গুনাহের মাগফিরাত এবং শেষ ভাগে দোজখের আগুন থেকে মুক্তিলাভ রয়েছে।’ (মিশকাত)
রোজার নিয়ত
নাওয়াইতু আন আছুমা গদাম মিন শাহরি রমাদ্বানাল মুবারকি ফারদ্বল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আংতাস সামীউল আলীম। অর্থ: হে আল্লাহপাক! আপনার সন্তুষ্টির জন্য আগামীকালের রমাদ্বান শরীফ-এর ফরয রোযা রাখার নিয়ত করছি। আমার তরফ থেকে আপনি তা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাত।
ছুবহি ছাদিক্বের পূর্বে নিয়ত করতে ভুলে গেলে দ্বিপ্রহরের পূর্বে নিয়ত: ‘নাওয়াইতু আন আছুমাল ইয়াওমা মিন শাহরি রমাদ্বানাল মুবারকি ফারদ্বাল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফা তাক্বাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আংতাস সামীউল আলীম।’
ইফতারের দোয়া
আল্লাহুম্মা সুমতু লাকা, ওয়া তাওআক্কালতু আ‘লা রিঝক্বিকা, ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রহিমীন। হে আল্লাহ পাক! আমি আপনারই সন্তুষ্টির জন্য রোযা রেখেছি এবং আপনারই দেয়া রিযিক্ব দ্বারা ইফতার করছি।
তারাবি নামাজের নিয়ত
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা, রকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা’আলা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার। আমি ক্বিবলামুখি হয়ে দু’রাকাআত তারাবিহ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামাযের নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার।
তারাবি নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া
‘সুব্হানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি সুবহানাযিল ইযযাতি ওয়াল আযমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারূত। সুব্হানাল মালিকিল হায়্যিল্লাযি লা-ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।’
মাহে রমজানের ৩০ রোজার দোয়া
১ম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! আমার আজকের রোজাকে প্রকৃত রোজাদারদের রোজা হিসেবে গ্রহণ কর। আমার নামাজকে কবুল কর প্রকৃত নামাজীদের নামাজ হিসেবে। আমাকে জাগিয়ে তোলো গাফিলতির ঘুম থেকে। হে জগত সমূহের প্রতিপালক! এদিনে আমার সব গুনাহ মাফ করে দাও। ক্ষমা করে দাও আমার যাবতীয় অপরাধ। হে অপরাধীদের অপরাধ ক্ষমাকারী।
২য় রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! তোমার রহমতের উসিলায় আজ আমাকে তোমার সন্তুষ্টির কাছাকাছি নিয়ে যাও। দূরে সরিয়ে দাও তোমার ক্রোধ আর গজব থেকে। আমাকে তৌফিক দাও তোমার পবিত্র কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত করার। হে দয়াবানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়াময়।
৩য় রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! আজকের দিনে আমাকে সচেতনতা ও বিচক্ষণতা দান কর। আমাকে দূরে রাখ অজ্ঞতা , নির্বুদ্ধিতা ও ভ্রান্ত কাজ-কর্ম থেকে। এ দিনে যত ধরণের কল্যাণ দান করবে তার প্রত্যেকটি থেকে তোমার দয়ার উসিলায় আমাকে উপকৃত কর। হে দানশীলদের মধ্যে সর্বোত্তম দানশীল।
৪র্থ রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে তোমার নির্দেশ পালনের শক্তি দাও। তোমার জিকিরের মাধুর্য আমাকে আস্বাদন করাও। তোমার অপার করুণার মাধ্যমে আমাকে তোমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য প্রস্তুত কর। হে দৃষ্টিমানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দৃষ্টিমান। আমাকে এ দিনে তোমারই আশ্রয় ও হেফাজতে রক্ষা কর।
৫ম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! এই দিনে আমাকে ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর। আমাকে শামিল কর তোমার সৎ ও অনুগত বান্দাদের কাতারে। হে আল্লাহ! মেহেরবানী করে আমাকে তোমার নৈকট্যলাভকারী বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর। হে দয়াবানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়াবান।
৬ষ্ঠ রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! তোমার নির্দেশ অমান্য করার কারণে এ দিনে আমায় লাঞ্চিত ও অপদস্থ করোনা। তোমার ক্রোধের চাবুক দিয়ে আমাকে শাস্তি দিওনা। সৃষ্টির প্রতি তোমার অসীম অনুগ্রহ আর নিয়ামতের শপথ করে বলছি তোমার ক্রোধ সৃষ্টিকারী কাজ থেকে আমাকে দূরে রাখো। হে আবেদনকারীদের আবেদন কবুলের চূড়ান্ত উৎস।
৭ম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে রোজা পালন ও নামাজ কায়েমে সাহায্য কর। আমাকে অন্যায় কাজ ও সব গুনাহ থেকে রক্ষা করো। তোমার তৌফিক ও শক্তিতে সবসময় আমাকে তোমার স্মরণে থাকার সুযোগ দাও। হে পথ হারাদের পথ প্রদর্শনকারী।
৮ম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! তোমার উদারতার উসিলায় এ দিনে আমাকে এতিমদের প্রতি দয়া করার, ক্ষুধার্তদের খাদ্য দান করার, শান্তি প্রতিষ্ঠা করার ও সৎ ব্যক্তিদের সাহায্য লাভ করার তৌফিক দাও। হে আকাঙ্খাকারীদের আশ্রয়স্থল।
৯ম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে তোমার রহমতের অধিকারী কর। আমাকে পরিচালিত কর তোমার উজ্জ্বল প্রমাণের দিকে। হে আগ্রহীদের লক্ষ্যস্থল। তোমার ভালোবাসা ও মহব্বতের উসিলায় আমাকে তোমার পূর্ণাঙ্গ সন্তুষ্টির দিকে নিয়ে যাও।
১০ম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! তোমার প্রতি যারা ভরসা করেছে আমাকে সেই ভরসাকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর। তোমার অনুগ্রহের মাধ্যমে আমাকে শামিল করো সফলকামদের মধ্যে এবং আমাকে তোমার নৈকট্যলাভকারী বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত করে নাও। হে অনুসন্ধানকারীদের শেষ গন্তব্য।
১১তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! এ দিনে সৎ কাজকে আমার কাছে প্রিয় করে দাও আর অন্যায় ও নাফরমানীকে অপছন্দনীয় কর। তোমার অনুগ্রহের উসিলায় আমার জন্য তোমার ক্রোধ ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হারাম করে দাও। হে আবেদনকারীদের আবেদন শ্রবণকারী।
১২তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে আত্মিক পবিত্রতার অলঙ্কারে ভূষিত কর। অল্পে তুষ্টি ও পরিতৃপ্তির পোশাকে আবৃত্ত কর। ন্যায় ও ইনসাফে আমাকে সুসজ্জিত কর। তোমার পবিত্রতার উসিলায় আমাকে ভীতিকর সবকিছু থেকে নিরাপদে রাখ। হে খোদা ভীরুদের রক্ষাকারী।
১৩ তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে কলুষতা ও অপবিত্রতা থেকে পবিত্র কর। যা কিছু তকদীর অনুযায়ী হয় তা মেনে চলার ধৈর্য আমাকে দান কর। তোমার বিশেষ অনুগ্রহে আমাকে তাকওয়া অর্জন এবং সৎ কর্মশীলদের সাহচর্যে থাকার তৌফিক দাও। হে অসহায়দের আশ্রয়দাতা।
১৪ তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে আমার ভ্রান্তির জন্যে জিজ্ঞাসাবাদ করো না। আমার দোষ-ত্রুটিকে হিসেবের মধ্যে ধরো না। তোমার মর্যাদার উসিলায় আমাকে বিপদ-আপদ ও দুর্যোগের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত করো না। হে মুসলমানদের মর্যাদা দানকারী।
১৫ তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে তোমার বিনয়ী বান্দাদের মতো আনুগত্য করার তৌফিক দাও। তোমার আশ্রয় ও হেফাজতের উসিলায় আমার অন্তরকে প্রশস্ত করে খোদাভীরু ও বিনয়ী বান্দাদের অন্তরে পরিণত কর। হে খোদাভীরু মুত্তাকীদের আশ্রয়দাতা।
১৬ তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে তোমার সৎবান্দাদের সাহচর্য লাভের তৌফিক দাও। আমাকে মন্দ লোকদের সাথে বন্ধুত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রাখো। তোমার খোদায়ীত্বের শপথ করে বলছি, আমাকে তোমার রহমতের বেহেশতে স্থান দাও। হে জগতসমূহের প্রতিপালক।
১৭ তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে সৎকাজের দিকে পরিচালিত কর। হে মহান সত্ত্বা যার কাছে প্রয়োজনের কথা বলার ও ব্যাখ্যা দেয়ার দরকার হয় না। আমার সব প্রয়োজন ও আশা-আকাঙ্খা পূরণ করে দাও। হে তাবত দুনিয়ার রহস্যজ্ঞানী! হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর পবিত্র বংশধরদের ওপর রহমত বষর্ণ কর।
১৮ তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে সেহরীর বরকতের উসিলায় সচেতন ও জাগ্রত করে তোল। সেহরীর নূরের ঔজ্জ্বল্যে আমার অন্তরকে আলোকিত করে দাও। তোমার নূরের উসিলায় আমার প্রত্যেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গে তোমার নূরের প্রভাব বিকশিত কর। হে সাধকদের অন্তর আলোকিতকারী!
১৯তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! আমাকে এ মাসের বরকতের অধিকারী কর। এর কল্যাণ অজর্নের পথ আমার জন্য সহজ করে দাও। এ মাসের কল্যাণ লাভ থেকে আমাকে বঞ্চিত করো না। হে স্পষ্ট সত্যের দিকে পথো নির্দেশকারী।
২০তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! এ দিনে আমার জন্যে বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দাও এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দাও। আমাকে কোরআন তেলাওয়াতের তৌফিক দান কর। হে ঈমানদারদের অন্তরে প্রশান্তি দানকারী।
২১ তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে তোমার সন্তুষ্টির দিকে পরিচালিত কর। শয়তানদের আমার উপর আধিপত্য বিস্তার করতে দিওনা। জান্নাতকে আমার গন্তব্যে পরিণত কর। হে প্রার্থনাকারীদের অভাব মোচনকারী।
২২ তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! আজ তোমার করুণা ও রহমতের দরজা আমার সামনে খুলে দাও এবং বরকত নাজিল কর। আমাকে তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের তৌফিক দাও। তোমার বেহেশতের বাগানের মাঝে আমাকে স্থান করে দাও। হে অসহায়দের দোয়া কবুলকারী।
২৩ তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! আমার সকল গুনাহ ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে দাও। আমাকে সব দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র কর। তাকওয়া ও খোদাভীতির মাধ্যমে আমার অন্তরকে সকল পরিক্ষায় উত্তীর্ণ কর। হে অপরাধীদের ভুল-ত্রুটি মার্জনাকারী।
২৪ তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! আজ তোমার কাছে ঐসব আবেদন করছি যার মধ্যে তোমার সন্তুষ্টি রয়েছে। যা কিছু তোমার কাছে অপছন্দনীয় তা থেকে তোমার আশ্রয় চাই। তোমারই আনুগত্য করার এবং তোমার নাফরমানী থেকে বিরত থাকার তৌফিক দাও। হে প্রার্থীদের প্রতি দানশীল।
২৫ তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে তোমার বন্ধুদের বন্ধু এবং তোমার শত্রুদের শত্রু করে দাও। তোমার আখেরী নবীর সুন্নত ও পথ অনুযায়ী চলার তৌফিক আমাকে দান কর। হে নবীদের অন্তরের পবিত্রতা রক্ষাকারী।
২৬ তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! এ দিনে আমার প্রচেষ্টাকে গ্রহণ করে নাও। আমার সব গুনাহ মাফ করে দাও। আমার সব আমল কাজ কবুল করো এবং সব দোষ-ত্রু টি ঢেকে রাখ। হে সর্বশ্রেষ্ঠ শ্রোতা।
২৭ তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! আজকের দিনে আমাকে শবেকদরের ফজিলত দান কর। আমার কাজ কর্মকে কঠিন থেকে সহজের দিকে নিয়ে যাও। আমার অক্ষমতা কবুল কর এবং ক্ষমা করে দাও আমার সব অপরাধ। হে যোগ্য বান্দাদের প্রতি মেহেরবান।
২৮ তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে নফল এবাদতের পর্যাপ্ত সুযোগ দাও। ধর্মীয় শিক্ষার মর্যাদায় আমাকে ভূষিত কর। তোমার নৈকট্য লাভের পথকে আমার জন্যে সহজ করে দাও। হে পবিত্র সত্ত্বা! যাকে, অনুরোধকারীদের কোন আবেদন নিবেদন , ন্যায়বিচার থেকে টলাতে পারে না।
২৯ তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! আজ আমাকে তোমার রহমত দিয়ে ঢেকে দাও। গুনাহ থেকে মুক্তিসহ আমাকে সাফল্য দান কর। আমার অন্তরকে মুক্ত কর অভিযোগ ও সন্দেহের কালিমা থেকে। হে ঈমানদার বান্দাদের প্রতি দয়াবান।
৩০ তম রমজানের দোয়া
হে আল্লাহ! তুমি ও তোমার রাসুল ঠিক যেমনিভাবে খুশি হবে তেমনি করে আমার রোজাকে পুরস্কৃত কর এবং কবুল করে নাও। আমাদের নেতা হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ও তার পবিত্র বংশধরদের উসিলায় আমার সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আমলকে মূল এবাদতের সাথে যোগ করে শক্তিশালী কর। আর সব প্রশংসা ও স্তুতি জগতসমূহের প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহ।
যখন কাজা ও কাফ্ফারা ওয়াজিব
১. ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কোনো জিনিস খাওয়া বা পান করা, যা সাধারণত খাওয়া বা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। (আলমগিরি : খ. ১, পৃ. ২০৫)। ২. যদি ইচ্ছাকৃতভাবে গিবত করার পর পানাহার করে, তাহলে তার ওপর কাজা-কাফ্ফারা উভয়ই ওয়াজিব। (ফাতহুল কাদির : খ. ২, পৃ. ৩৮০)। ৩. রোজাদার যদি সমকামিতায় লিপ্ত হয়, তাহলে তার ওপর কাজা-কাফ্ফারা দুটিই ওয়াজিব।
(আল-ওয়াল ওয়ালিযিয়্যাহ : খ. ১, পৃ. ২২৩)। ৪. পুরুষ যদি মহিলার সঙ্গে জোরজবরদস্তি করে সম্ভোগ করে, তাহলে মহিলার ওপর শুধু কাজা ওয়াজিব, কাফ্ফারা নয়। আর পুরুষের ওপর কাজা-কাফ্ফারা উভয়ই ওয়াজিব। (আল-ওয়াল ওয়ালিযিয়্যাহ : খ. ১, পৃ. ২২৪)। ৫.ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রীসম্ভোগ করা। (বুখারি, হাদিস : ১৮০১)
যখন রোজা ভেঙে ফেলার অনুমতি আছে
যদি এমন অসুস্থ হয়ে পড়ে যে রোজা রাখার শক্তি নেই বা রোজা রাখার দ্বারা অসুস্থতা বেড়ে যাবে, তাহলে তার জন্য রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে হ্যাঁ, যখনই সুস্থ হয়ে যাবে, তখনই তার ওপর রোজা কাজা করে নেওয়া ওয়াজিব। (আপকে মাসায়েল : খ. ৩, পৃ. ২০২)
১. যে ব্যক্তি এমন দুর্বল হয়ে যায় যে রোজা রাখার শক্তি নেই। (আপকে মাসায়েল : খ. ৩, পৃ. ২০৩)। ২. এমন ক্ষুধা বা পিপাসা লাগে যে প্রাণ চলে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যায়। (আলমগিরি : খ. ১, পৃ. ২০৭)। ৩. গর্ভধারিণী বা স্তন্যদানকারিণী মহিলা যদি নিজের অথবা নিজের বাচ্চার প্রাণপাতের আশঙ্কা করেন, তাহলে তাঁর জন্য রোজা ভেঙে ফেলা জায়েজ আছে। (আলমগিরি : খ. ১, পৃ. ২০৭)। ৪. রোজা থাকার কারণে যদি জীবনযাপনের সামগ্রী উপার্জন করতে দুর্বল হয়ে যায়, তাহলে তার জন্য রোজা ভেঙে ফেলার অনুমতি রয়েছে। তবে তা পরে কাজা করে নিতে হবে। তা-ও সম্ভব না হলে ফিদিয়া আদায় করবে এবং প্রতি রোজার পরিবর্তে সদকায়ে ফিতর পরিমাণ দান করে ফিদিয়া আদায় করবে। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৪০০)। ৫. অনুরূপভাবে ফসল কর্তন করার ক্ষেত্রে, যদি রোজা থাকা অবস্থায় ফসল কর্তন করা সম্ভব না হয়, অন্যদিকে দেরি হলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে, তাহলে রোজা না রাখার অনুমতি আছে এবং অন্য সময় কাজা করে নেবে। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৪০০)
যখন রোজা ভাঙে না, মাকরুহও হয় না
১. ভুলে খানাপিনা বা স্ত্রীসম্ভোগ করা (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৬৫)। ২. যদি ওই ভুলকারী লোকের রোজা রাখার শক্তি থাকে, তাহলে তাকে রোজার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া। আর যদি রোজা রাখার শক্তি না থাকে, তাহলে স্মরণ না করে দেওয়া উত্তম। (আল-ওয়াল ওয়ালিযিয়্যাহ : খ. ১, পৃ. ২০২)। ৩. অনিচ্ছায় গলার মধ্যে ধোঁয়া, ধুলাবালি, মশা-মাছি চলে যাওয়া। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৬৬)। ৪. তেল, সুরমা, শিঙা লাগালে যদি গলায় তার স্বাদ পাওয়া যায়। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৬৬)। ৫. স্বপ্নদোষ হওয়া। (তিরমিজি : হাদিস ৭১৯)। ৬. যেকোনো সময় মেসওয়াক করা, কাঁচা হোক কিংবা শুষ্ক হোক। (আলমগিরি : খ. ১, পৃ. ১৯৯)। ৭. কাঠি দিয়ে কান খোঁচানোর ফলে কোনো ময়লা বের হলে তারপর ময়লাযুক্ত কাঠি বারবার কানে প্রবেশ করালে। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৬৭)। ৮. চানা বুটের চেয়ে ছোট দাঁতের ফাঁকে আটকে যাওয়া কোনো জিনিস খেলে। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৬৭)। ৯. দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে যদি হলক্বে চলে যায়। যদি থুথুর পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৬৮)। ১০. শরীর, মাথা, দাড়ি-গোঁফে তেল লাগালে। (আলমগিরি : খ. ১, পৃ. ১৯৯)। ১১. ফুল বা মৃগনাভির ঘ্রাণ নিলে। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৯৯)। ১২. ইচ্ছাকৃতভাবে নাকের শ্লেষ্মা মুখের ভেতর নিয়ে নিলে। (বিনায়া : খ. ৪, পৃ. ২৯৪)। ১৩ মুখের থুথু গিলে ফেলা। (নাওয়াজিল : পৃ. ১৫০)। ১৪. তিল পরিমাণ কোনো জিনিস বাইরে থেকে মুখে নিয়ে অস্তিত্বহীন করে দেওয়া ও গলায় তার কোনো স্বাদ অনুভব না হলে। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৯৪)। ১৫. কপালের ঘাম কিংবা চোখের দু-এক ফোঁটা অশ্রু কণ্ঠনালিতে পৌঁছে গেলে। রোজা ভাঙে না। (বিনায়া : খ. ৪, পৃ. ২৯৪)। ১৬. রোজা শুরু হওয়ার আগেই যদি লজ্জাস্থানে কোনো ওষুধ রাখা হয়। তাহলে রোজা ভাঙা যাবে। (রহিমিয়া : খ. ৪, পৃ. ২৯৪)। ১৭. যেকোনো ধরনের ইনজেকশন বা টিকা লাগানো। তবে এমন ইনজেকশন বা টিকা লাগানো মাকরুহ, যেগুলো দ্বারা রোজার কষ্ট বা দুর্বলতা দূরীভূত হয়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ : খ. ১, পৃ. ৩৭৯)। ১৮. ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্ত বের করা হলে রোজা নষ্ট হবে না। আর দুর্বলতার আশঙ্কা না থাকলে মাকরুহও হবে না। ১৯. পান খাওয়ার পর ভালোভাবে কুলি করা সত্ত্বেও যদি থুথুতে লালাভাব থেকে যায়, তাহলে রোজা মাকরুহ হবে না। (এমদাদুল ফাতাওয়া : খ. ২, পৃ. ১৩১)। ২০. ভেজা কাপড় শরীরে দেওয়া অথবা ঠান্ডার জন্য কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া অথবা গোসল করা মাকরুহ নয়। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৯৪; দারুল উলুম : খ. ৬, পৃ. ৪০৫; বুখারি)। ২১. স্বপ্নে কিংবা সহবাসে যদি গোসল ফরজ হয়ে থাকে এবং সুবেহ সাদিকের আগে গোসল না করে রোজার নিয়ত করে, তাহলে তার রোজার মধ্যে অসুবিধা হবে না। (জাওয়াহিরুল ফিকহ : খ. ১, পৃ. ৩৮০)। ২২. গলা খাঁকারি দিয়ে খাদ্যনালি থেকে মুখে কাশি বের করা, তারপর আবার গিলে ফেলা উচিত নয়। তবে এটি মাকরুহও নয়। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৭৩)। ২৩. মাথা অথবা চোখে ওষুধ দেওয়া। (এমদাদুল ফাতাওয়া : খ. ২, পৃ. ১২৭)। ২৪. হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ঘ্রাণ নেওয়া। (মাহমুদিয়া : খ. ১৫, পৃ. ১৮০)। ২৫. রোজা অবস্থায় পাইপ দ্বারা মুখে হাওয়া নিলে। (মাহমুদিয়া : খ. ১৫)। ২৬. রোজা অবস্থায় নাকের মধ্যে ওষুধ ব্যবহার করার দ্বারা ব্রেনে না পৌঁছলে। (মাহমুদিয়া : খ. ১৫, পৃ. ১৬৯)। ২৭. শরীরের কোনো ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বা রক্ত প্রবাহিত হলে বা রক্ত বের করলে রোজা নষ্ট হয় না। তবে রোজাদার থেকে বের করা মাকরুহ। (জাওয়াহিরুল ফিকহ : খ. ১, পৃ. ২৮)। ২৮. ডাক্তার যদি চিকিৎসার শুকনো কোনো যন্ত্র পেটে প্রবেশ করায়, অতঃপর তা বের করে ফেলে, তাহলে রোজা নষ্ট হবে না। (আল-ফিকহুল হানাফি)। ২৯. পানিতে ডুব দেওয়ার পর কানের ভেতর পানি চলে গেলে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে পানি দিলে রোজা মাকরুহ হয় না। (বিনায়া : খ. ৪, পৃ. ২৯৪; আলমগিরি : খ. ১, পৃ. ২০৪)। ৩০. জৈবিক উত্তেজনায় শুধু দৃষ্টিপাতের কারণে যদি বীর্যপাত হয়, তাহলে রোজা ফাসেদ হবে না। (আহকামে জিন্দেগি, পৃ. ২৪৯)
নারীদের রোজার মাসায়েল
১. মহিলারা রমজান ছাড়া স্বামীর অনুমতি ব্যতীত রোজা রাখবে না। (তিরমিজি : হাদিস নম্বর ৭৮২)। ২. যে মেয়ে বালেগ হয়েছে অথচ লজ্জার কারণে প্রকাশ করে না এবং রোজাও রাখে না, তাহলে তার ওপর তাওবা ও ছুটে যাওয়া রোজার কাজা করা ওয়াজিব। ৩. মহিলা যদি নিজের হায়েজের আর্দ্রতা তথা পবিত্রতার নিদর্শন দেখতে পায়, যার দ্বারা বুঝতে পারে যে সে এখন পাক হতে যাচ্ছে, তাহলে রাতেই রোজার নিয়ত করবে। আর যদি পবিত্রতার নিদর্শন না দেখা যায়, তাহলে ভেতরে তুলা লাগিয়ে দেবে। যদি পরিষ্কার থাকে, তাহলে রোজা রাখবে। যদি দ্বিতীয়বার হায়েজের রক্ত এসে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে ফেলবে। ৪. মহিলা যদি নিজের অভ্যাস অনুযায়ী বুঝতে পারে যে আগামীকাল তার হায়েজ জারি হবে। তাহলেও সে রোজা ভাঙবে না। যতক্ষণ না সে তার হায়েজের রক্ত দেখতে পায়। (আপকে মাসায়েল : খ. ৩, পৃ. ২৭৮)। ৫. হায়েজা মহিলার জন্য উত্তম হলো নিজের স্বাভাবিক অবস্থার ওপর থাকা। আল্লাহতাআলা তার ওপর যে ফয়সালা করেছেন, তার ওপর সন্তুষ্ট থাকা। এমন কিছু ব্যবহার না করা, যার দ্বারা রক্ত বন্ধ হয়ে যায়। বরং হায়েজ অবস্থায় রোজা ছেড়ে দেওয়া। অতঃপর কাজা করে নেওয়া। কেননা উম্মুল মুমিনিন ও আকাবির মহিলারা এমনটিই করেছেন। আর যদি ওষুধ দিয়ে রক্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলেও রোজা হয়ে যাবে। (আপকে মাসায়েল : খন্ড ৩, পৃ. ২০৭)। ৬. নেফাজওয়ালা মহিলা যদি ৪০ দিন হওয়ার আগেই পাক হয়ে যায়, তাহলে রোজা রাখবে এবং নামাজের জন্য গোসল করে নেবে। ৭. আর যদি ৪০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও রক্ত জারি থাকে, তাহলে সে রোজা রাখবে এবং গোসল করে নেবে। কেননা তার রক্ত ইস্তেহাজা (রোগ) হিসেবে গণ্য করা হবে। (বেহেশতি জেওর : পৃষ্ঠা : ১৬০, শরহে বেকায়া : খ. ১, পৃ. ১২০)। ৮. হায়েজওয়ালা মহিলা যদি সূর্য হেলার আগেই পাক হয়ে যায় এবং রোজার নিয়ত করে, তাহলে তার ফরজ আদায় হবে না। (শামি : খ. ৩, পৃষ্ঠা : ৩৮৫)। )
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।