পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গোলায় উঠছে নতুন ধান। কিন্তু কৃষকের মুখ মলিন। তৃপ্তি নেই কৃষকের মনে। একদিকে উৎপাদন খরচ বেশি, অন্যদিকে বিক্রির বেলায় দাম কম। উৎপাদক কৃষকরা ধানসহ অন্যান্য ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। তাদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত বা সহজ করে দেয়ার জন্য কোনো ব্যবস্থা বা পদক্ষেপই ফলপ্রসূ হচ্ছে না। মাঝে মধ্যস্বত্বভোগী ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের পোয়াবারো। সেদিকে কর্তৃপক্ষের কোনো খেয়াল নেই। প্রতি বছরই সার, বীজ, কৃষিপণ্য কৃষকরা যাতে সঠিক সময়ে এবং ন্যায্যমূল্যে পান, সে বিষয়ে সরকারের তৎপরতা দেখা যায়। কিন্তু নতুন ধান উঠলেই দাম নিয়ে দিশেহারা হয়ে যায় কৃষক। সরকার পদক্ষেপ নিতে নিতে কৃষকের ধান বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এতে করে প্রান্তিক কৃষকের ঘরে সুফল যায় না। মধ্যস্বত্বভোগীরাই সরকারের সব উদ্যোগের ফসল ঘরে তোলে।
কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, ধান উৎপাদন যত বেশি হবে ততই বাজারে দাম কমবে। আমরা চেষ্টা করছি ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করা জন্য। গত বছরে আমাদের টার্গেট ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ মে.টন। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ মে. টন। এবার বোরার ধানের আমাদের টার্গেট ছিল ১ কোটি ৫৩ লাখ মে. টন ছিল। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯৬ লাখ মে. টন। যা টার্গেটের চেয়ে বেশি ৪৩ লাখ মে.টন ধান বেশি উৎপাদন হয়েছে। বাজারে যাতে কৃষকরা দাম বৃদ্ধি পায় সে জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় এবার ১৪ লাখ মে.টন চাল ক্রয় করবে। যখন খাদ্য মন্ত্রণালয় চাল ক্রয় শুরু করবে তখন বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, আগামীতে কৃষককের জন্য বিকল্প বব্যস্থা নেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশের কৃষক এখন ধানের পাশাপাশি সবজিও বেশি উৎপাদন করা শুরু করেছে। যেখানে সবজি লাগে কোটি মে, টন সেখানে উৎপাদন হয় ১ কোটি ৬৬ লাখ মে.টন। বাজি সবজি গুলো আমরা বিদেশে বিক্রি করার চেষ্টা করছি।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে আভাস দেয়া হয়েছে, বাংলাদেশে এবার ধানের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হবে। জাতীয় সংসদে খাদ্যমন্ত্রীও তাই জানিয়েছেন। যদিও শেষ সময়ে ঘূর্ণিঝড় ফণির কারণে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তারপরেও এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে দেশের অধিকাংশ এলাকাতেই। কিন্তু উৎপাদন খরচের তুলনায় ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত। কৃষি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বছরই এমন অবস্থা দেখা যায়। এজন্য সরকারকে আগে থেকেই তৎপর হতে হবে। বিশেষ করে ফড়িয়া বা মধ্যস্বত্ত¡ভোগিদের হাত থেকে কৃষকদের রক্ষার জন্য কৃষকের কাছে থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করার ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে কৃষক লাভবান হবে। তাদের মধ্যে আর হতাশা থাকবে না। যশোর থেকে মিজানুর রহমান তোতা জানান, প্রতিক‚ল আবহাওয়া ও প্রতিনিয়ত নানামুখী সমস্যা মোকাবিলা করে সেচনির্ভর বোরো আবাদ করে কৃষকরা বিরাট সফল হয়েছেন। যশোর অঞ্চলে বাম্পার ফলন হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক সমীর কুমার গোস্বামী গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান। তিনি জানান, মোট ৩লাখ ৮২হাজার ৫শ’১৯ হেক্টরে বোরো আবাদ হয়। ইতোমধ্যে ৫৭% ধান কর্তন হয়েছে। হেক্টরে হাইব্রিড জাতে ৪দশমিক ৪ মেট্রিক টন চাল ও উফসী জাতে হেক্টরে ৩দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে। কৃষকদের কথা বাম্পার হলেও আমাদের ¤øান হয়ে যাচ্ছে ধান বিক্রি করতে গিয়ে। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ব্রজবাকসা গ্রামের আদর্শ কৃষক মো. ইউনুফ আলী সরদার জানান, বীজতলা তৈরি, জমি চাষ, রোপন, সার, পরিচর্যা, সেচ খরচ, ধান কাটা, মাড়াই ও বাজারে তোলা পর্যন্ত বিঘাপ্রতি কমপক্ষে ১৪হাজার টাকা খরচ হয়। বিঘাপ্রতি উৎপাদন হয়েছে ১৮মণ থেকে ২৪ মণ পর্যন্ত। প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ থেকে ৮শ’৫০টাকা। গড়ে লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে।
কৃষকদের কথা, এখনই ধানের বাজারে খোঁজ খবর নেওয়া না হলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ধানের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে এখনও নতুন ধান পুরাদমে উঠতে কয়েকদিন সময় লাগবে। সামগ্রিকভাবে বোরো চাষিরা ধানের দাম নিয়ে মারাত্মক শঙ্কায় আছেন।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠে মাঠ শুধু ধান আর ধান। রোদেলা বাতাসে ভাসছে গোছা ভরা ধানের দোল খাওয়ার শোন শোন শব্দ। ধানে পাক ধরেছে। কোথাও কোথাও অল্প বিস্তর কাটা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে নাটোরের চলন বিল অঞ্চলে।
রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ আটলাখ হেক্টরের কিছু বেশি জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরলেও বাস্তবে হয়েছে বেশি। আর ফলন ধরা হয়েছে তেত্রিশ লাখ টনের বেশি চাল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হওয়া আর আবহাওয়া অনুক‚ল থাকায় ফলন ভাল হয়েছে। যেটুকু কাটা হয়েছে তাতে ফলন মিলছে বিঘা প্রতি আঠারো থেকে কুড়ি মণ। এবার শুরুতে বৃষ্টিপাত হওয়ায় সেচ খরচ কিছুটা কম হলেও অন্যান্য খরচ বেড়ে যাবার কারণে উৎপাদন খরচ কমেনি।
সব মিলিয়ে প্রতিমণ ধান উৎপাদনে খরচ পড়েছে সাড়ে সাতশো টাকা। আর শুরুতে ধান বিক্রি হচ্ছে ছয়শো হতে সাড়ে ছয়শত টাকা মণ। এমণ দামে কৃষকের মণপ্রতি লোকসান হচ্ছে এক দেড়শো টাকা। যদিও এখন ধান কিনছে ফড়িয়ারা। পুরো দমে ধান কাটাই মাড়াই শুরু হলে বোঝা যাবে ধানের দামের গতি প্রকৃতি। এমনটাবলছেন কৃষকরা। উৎপাদকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে।
কৃষকরা বলছেন সরকারিভাবে ধানের মূল্য ধরা হয়েছে কেজিপ্রতি ২৬ টাকা। সে হিসাবে মণপ্রতি হয় হাজার চল্লিশ টাকা। এ দামটি পেলে কৃষক বেঁচে যেত। কিন্তু সেটি হবার নয়। কখনো সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারেনা কৃষক। সব যায় ফড়িয়া আর মধ্যস্বত্ব ভোগীর কাছে। সরকারের কাছে কৃষকের ধান বেচার স্বপ্ন স্বপ্ন রয়ে যায়।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায় এবার বরেন্দ্র অঞ্চলে (রাজশাহী, নওগা, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জে) সাড়ে তিনলাখ হেক্টরের বেশি জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। মাঠের ফসল দেখে বলা যায় সব ঠিকঠাক থাকলে বোরোর বাম্পার ফলন হবে।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবার বগুড়ায় বোরোধানের ফলন হয়েছে বাম্পার । বগুড়া কৃষি বিভাগের মূল্যায়নে এবার ফলন হয়েছে ভাল । ভাল ও মন্দ জমি মিলিয়ে গড়ে ফলন হয়েছে ১৫/১৬ মণ । সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ফনির কারণে সৃষ্ট মৃদু ঝঢ়ো বাতাস ও দুদিনের ধারাবাহিক বর্ষণেও ধানের জমির তেমন ক্ষতি হয়নি। তেমণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে মধ্য মে’র মধ্যেই শতভাগ ধান কাটামাড়াইয়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে । এত কিছুর পরেও ধানের নিম্ন মুল্যের কারণে হতাশ উৎপাদক চাষীরা।
বগুড়ার ধানের পাইকারি হাট বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোথাও সাড়ে ৬শ’ টাকার বেশি দরে ধান বিক্রি হচ্ছেনা । মিল মালিক ও পাইকারদের সাথে কখা বলে জানা গেছে , বিগত বছরে কম এলসি মার্জিনের কারণে বিপুল পরিমাণে ভারতীয় চাল আমদানী হওয়ায় গতবছরের ধানের মজুদ এখনও আছে। সীমান্ত এলাকায় ভারত থেকেও ধান ঢুকছে। ফলে চাহিদার তুলনায় বাজারে ধানের যোগান বেশি হওয়ায় বাড়ছেনা ধানের দাম।
এদিকে চাষীরা জানিয়েছে , ধান চাষে সেচ ও কামলা খরচ প্রতিবছর বাড়লেও কমছে ধানের দাম । ফলে বাম্পার ফলনে তাদের মুখে ফুটছেনা হাঁসির ঝিলিক।
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জের ১১ টি উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও দাম নিয়ে হতাশ কৃষকরা। এতে ধানের বাম্পার ফসলে কৃষকদের সেই প্রত্যাশায় গুড়েবালি হয়েছে।
জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর তেঘরি গ্রামের কৃষক শিবলু মিয়া জানান, তিনি প্রায় ৩ একর বোরো জমি চাষ করেছেন। তিনি জানান, ফলন যাই হোক ধানের মূল্য না থাকায় কৃষকরা খুবই বিপাকে। জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের কৃষক বিছনা গ্রামের জানমাহমুদ জানান, ২ একর জমি চাষ করেছেন। তবে ধানের মূল্য অত্যন্ত কম থাকায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছে।
আদমদীঘি (বগুড়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বগুড়ার আদমদীঘিতে আবহাওয়া ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কায় চলতি মৌসুমের ইরি-বোরো ধান কাটা মারড়াই কাজ আগাম শুরু হয়েছে। ধানের বাম্পার ফলন হলেও বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। সেচের দাম এবং শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ার কৃষকদের কমদামে ধান বিক্রি করে লোকশান গুনতে হচ্ছে।
বর্তমানে প্রতি মণ ধান ৬২০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ধানের চেয়ে খড়ের দাম ভালো পাওয়ার ফলে স্থানীয় কৃষক কৃষাণীরা ধান মাড়াইযের কাজের পাশাপশি খড় শুকানোর শুকানো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, এলাকার হাট-বাজারে বর্তমানে ৬২০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা মণ দামে ধান বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকদেরর ধানকাটার পর শ্রমিকের মজুরি পর্যন্ত উঠছেনা। কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এনজি ও মহাজনদের নিকট রিণ নেওয়া কৃষকরা মহা বিপাকে পরেছে। ধানের কাজের সাথে লোকসান পুশিয়ে নিতে খড়ের মুল্য বেশির আশায় এলাকার কৃষক কৃষাণী ধানের পাশাপাশি খড় শুকানো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।