Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না

প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:০০ এএম, ২৭ মে, ২০১৬

মুহাম্মদ রেজাউর রহমান
জাতীয় দৈনিক ইনকিলাব-এর গত ২১ মে সংখ্যায় প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি উড্রো উইলসন সেন্টারের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক উইলিয়াম বি মাইলাম কর্তৃক লিখিত ও বহুল প্রচারিত দৈনিক দি নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত নিবন্ধের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে প্রাক্তন এই মার্কিন রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেছেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি আলোচিত হত্যাকা-ের জন্য সন্ত্রাসবাদ যতটা দায়ী তারচেয়ে বেশি দায়ী সুশাসনের অভাব। বাংলাদেশে উগ্রপন্থিদের উত্থানের জন্য ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের পরে সরকার কর্তৃক রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়নই জঙ্গিদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইলাম আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক আচরণের মান অনুযায়ী যেসব মতামত তার লিখিত নিবন্ধে তুলে ধরেছেন, গণতন্ত্র বাংলাদেশ স্টাইলের সাথে তার যথেষ্ট গরমিল রয়েছে। বাংলাদেশে যখনই যে দল ক্ষমতায় এসেছে তারাই বিরোধী দল ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন-পীড়নে নতুন নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাই আমরা দেখি, ক্ষমতায় নয় বছর থেকে স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার পরিচালনার পর বিরোধী দলসমূহের সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনের জন্য এরশাদ কর্র্তৃক ছাত্র-জনতার মিছিলের ওপর ট্রাক চালিয়ে দিয়ে বিক্ষোভরত দুজনকে হত্যা, শান্তিপূর্ণভাবে নিজের উদোম শরীরে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লেখা নূর হোসেনকে গুলি করে হত্যা, পতনোন্মুখ সময়েও ঢাকা মেডিকেল কলেজে কর্তব্য পালনে যাওয়ার প্রাক্কালে ডা. মিলনকে গুলি করে হত্যা, স্কুলছাত্র মতিউর রহমানকে হত্যা, ছাত্রনেতা আসাদকে গুলি করে হত্যা ইত্যাদি ছাড়াও গণগ্রেফতার-কারফিউ জারির মাধ্যমে ক্ষমতা প্রলম্বিত করার আপ্রাণ প্রয়াস।
এরশাদোত্তর সময়ে ক্ষমতায় আসা বিএনপিও তাদের প্রথম পাঁচ বছরের শাসনামলের মাঝামাঝি সময়ে মাগুরা উপনির্বাচনে বহু বছর যাবৎ আসনটি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ধরে রাখার পরে কেবল দল কর্তৃক মনোনীত প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার জন্য যে কারচুপির আশ্রয় নেয়, বিরোধীদলীয় কর্মীদের ওপর যে নির্যাতন চালায়, তারই ফলশ্রুতিতে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে সাধারণ নির্বাচনের দাবি আওয়ামী লীগ কর্তৃক উত্থাপিত হয়, তা দমনের লক্ষ্যেও সরকারি দল বিএনপি যথাসাধ্য নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ফলে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখে যে সাধারণ নির্বাচন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার অজুহাতে অনুষ্ঠিত হয়, তাতে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেনি। ওই বছরের জুন মাসে পুনরায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সদ্য অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের অধীনে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রায় ২১ বছর পরে ক্ষমতায় আসীন হয়।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার ও বিরোধী দল দমন-নিপীড়নে বিভিন্ন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। পল্টন ময়দানে জনসভা অনুষ্ঠানের কর্মসূচিকে চিরতরে বন্ধ করার লক্ষ্যে তারা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ফলে শহরের কেন্দ্রস্থলে জনসভা করার সুবিধা থেকে বিরোধী দলসমূহ বঞ্চিত হয়, যা আজও বহাল রয়েছে। এ ছাড়াও তারা বিরোধী দলসমূহের সভা, মিছিল, বিক্ষোভ ইত্যাদির ওপর নতুন নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করে।
২০০১ সালে পুনরায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় বিএনপিবিএনপির শাসনামলের দ্বিতীয় মেয়াদে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের জনসভায় চালানো হয় গ্রেনেড হামলা। হতাহত হন অনেকে। আওয়ামী মহিলা লীগ সভানেত্রী আইভি রহমানও এতে নিহত হন। গ্রেনেড হামলার পরে তদন্ত ও মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ঘটে চরম নাটকীয়তা। নিরপরাধ জজ মিয়া নামক একজন সাধারণ নাগরিককে গ্রেফতার করে তাকে দেখানো হয় প্রধান আসামি হিসেবে।
তবে বিএনপি সবচেয়ে বেশি ভুল করে ২০০৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে গঠিতব্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে দেশের প্রেসিডেন্টকে তারা দ্বিতীয় আরো একটি সাংবিধানিক পদ প্রধান উপদেষ্টা হতে বাধ্য করে ও আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংগঠিত প্রতিবাদ কর্মসূচি যথা সাধারণ ধর্মঘট, সভা, মিছিল বিক্ষোভ ইত্যাদি দমনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। দেশে সৃষ্টি হয় এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। এর অবসান ঘটে সামরিক বাহিনী সমর্থিত ড. ফখরুদ্দীন আহমদ কর্তৃক প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের মধ্যে দিয়ে। ড. ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি ও প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করার কাজে সফল হয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসের ২৯ তারিখে যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ বছরের মেয়াদে ক্ষমতায় আসে।
দীর্ঘদিন থাকার নীলনকশায় সংবিধান সংশোধন করে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই তারা নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখে অর্থাৎ যারা ১৯৯৫-৯৬ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি করে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল এবং দাবি আদায় করেছিল তারাই ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী গ্রহণ করে  তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে। ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কারচুপির আশঙ্কায় নির্বাচন অবাধ হবে না এই বক্তব্য দিয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আন্দোলনের ডাক দিলে সরকার তা কঠোর হস্তে দমন করে। ১৯৯৬ সালের ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অধীনে যেমন আওয়ামী লীগ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে, তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, কমিউনিস্ট পার্টি, আ স ম আবদুর রবের জাসদ, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা দল ও সরকারবিরোধী বামপন্থি দলসমূহ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। এই প্রথম বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে ১৫৩ জন জাতীয় সংসদ বা পার্লামেন্টের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে সমগ্র বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। বিরোধী দল প্রধানত বিএনপি সমর্থক তৃণমূলের কর্মী ও জেলা এবং জাতীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ অনেকেই কারাবন্দী হন ও একাধিক মামলার শিকার হন।
যাই হোক, মি. মাইলামের নিবন্ধে বলা হয়েছে যে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ কার্যত বাংলাদেশকে এক দলের রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দমনে আইন বিভাগ ও পুলিশকে ব্যবহার করেছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশে জঙ্গিদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার কারণ হিসেবে মি. মাইলাম ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকেই রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দমন-পীড়নই দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ২৫টি হত্যাকা-ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন যে, অন্তত ২০টি হত্যার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। আর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর মাত্র দুটি হামলার দায় স্বীকার করেছে বাংলাদেশের জঙ্গিগোষ্ঠী জমিয়াতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ বা জেএমবি এবং আনসার আল ইসলাম। বাংলাদেশের দুই বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পারস্পরিক শত্রুতামূলক মনোভাব আজ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সরকারি ও বিরোধী দলের ভূমিকায় পালাবদল করে আসা-যাওয়া করা এই দুটি দলের মধ্যে আর কোনো দিন জাতীয় ইস্যুগুলোতে ঐক্যবদ্ধ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে বলে কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষকই মনে করেন না। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব দৃশ্যত সেসব রাজনৈতিক ফাঁদে যেন কতকটা ইচ্ছে করেই পা দিয়েছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায়ই অনুষ্ঠিত হবে এটা জাতীয় সংসদে গৃহীত পঞ্চদশ সংশোধনী দ্বারা ২০১১ সালের জুন মাসেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। পৃথিবীর বহু দেশেই তা স্বাভাবিক। বিএনপি ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে তুলত। সাধারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বিদেশ থেকে আসত অন্তত কয়েকশ পর্যবেক্ষক। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পেলেও একটি উল্লেখ করার মতো সংখ্যার আসন লাভ করত বিএনপি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি নির্বাচন করে ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত মেয়াদের মতো পুনরায় ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বিরোধী দল হিসেবে অবস্থান করা  হয়তো আকর্ষণীয় বলে মনে হয়নি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে ক্ষমতায় গেলে পাঁচ বছরের মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে ২০০৯-১৩ মেয়াদে বিরোধী দল দমনে আওয়ামী লীগ যা যা করেছে সেসব দৃষ্টান্ত আওয়ামী লীগের ওপরই প্রয়োগ করতে পারত বিএনপি
বিরোধী দলে থেকে সরকারের বিরোধিতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষায় সরকারকে সাহায্য করা বাংলাদেশে কল্পনারও বাইরে। শুধু তাই নয়, জাতীয় সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়ে সংসদের ভিতরেও নিজেদের যথাযথ ভূমিকা পালনে কর্তব্য রক্ষা করাও সম্ভব হয়নি কোনো বিরোধী দলের। এ ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক অবশ্য আওয়ামী লীগই। এরশাদোত্তর ১৯৯১-৯৬ সালের শেষের দিকে বিএনপির শাসনামলেই তারা প্রথম সংসদ অধিবেশন বর্জনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এরপর ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী দল বিএনপিও তা অনুসরণ করে এবং ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপির শাসনামলে আওয়ামী লীগ তা পুনরায় অনুসরণ করে। ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে আওয়ামী লীগ শাসনামলে পুনরায় বিএনপি তা অনুসরণ করে। তেইশ বছরের মাঝে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটানা দুই বছর ২০০৭-২০০৮ ব্যতীত জাতীয় সংসদের অধিবেশন পুরোপুরি বর্জন করে বৃহত্তম দুটি রাজনৈতিক দল। বস্তুত কোনো দলের শাসনামলেই কার্যকর কোনো জাতীয় সংসদ ছিল না দেশে। বাংলাদেশে প্রতিটি দলের শাসনামলেই বিরোধী দল দমন-পীড়নের চাপে ছিল উল্লেখ করে মি. মাইলাম মন্তব্য করেছেন যে, এ কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কারণ সরকার ব্যস্ত থেকেছে দমন-পীড়নের কর্মসূচি বাস্তবায়নে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশে এগিয়ে আসতে হয়েছে বেসরকারি খাতকে। এ বিষয়েও মি. মাইলামের বক্তব্য যে সঠিক তা অনেকেই স্বীকার করবেন। মি. মাইলাম আরো উল্লেখ করেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়ন যেগুলো শতভাগ সরকারি পর্যায়ে হওয়া উচিত সেগুলোরও সার্থক বাস্তবায়ন দেশে কর্মরত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকেই বহন করতে হয়। প্রকৃতপক্ষেই আমরা দেখতে পাই যে, শিক্ষার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরেও সরকার শিক্ষাকে একটি পণ্যে পরিণত করার বেসরকারি উদ্যোগের অবসান ঘটাতে পারেনি। স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল হলেও বেসরকারি চিকিৎসাসেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন অধিকাংশ নাগরিক। সামাজিক উন্নয়মূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নেও সরকারকে নিতে হচ্ছে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহের সাহায্য। প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মি. মাইলাম মন্তব্য করেছেন যে, গত দুই দশক যাবৎ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপের দিকেই গেছে।
আমরাও দেখতে পাই যে, বহু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনের পরেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। ঝড়ের আগে যখন সবকিছু থমকে থাকে সেই পরিবেশকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বলা যায় না। এরশাদের আমলের শেষদিকেও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু জনগণ খাঁচায় আবদ্ধ থেকে ভালো খাবার, ভালো থাকা চায়নি। তারা ফুঁসে উঠেছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতা, কথা বলার অধিকার, সভা-সমিতি করার অধিকার আদায় করার জন্য। বিরোধী দল বিশেষকে দুর্বল করা সম্ভব, তাদের শক্তি ক্ষয় করা সম্ভব, কিন্তু জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়া সম্ভব নয়। দল বিশেষ ক্ষমতায় থেকে যেভাবে মি. মাইলামের কথায় বিরোধী দলকে চাপে ফেলে তাদের দমন-পীড়নের লক্ষ্যে আইন প্রয়োগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে যাচ্ছেÑএসবই যে দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে না এবং ভবিষ্যতে কোনো বিশেষ দল কর্তৃক না হোক অন্য কোনো দল দ্বারা অনুসরণ ও প্রয়োগ করা হবে না তা নিশ্চয়তা সহকারে বলা যায় না। সবারই বিশেষ করে যারা ক্ষমতায় থেকে মনে করেন যে, তারা কোনো দিনই বিরোধী দলে যাবেন না তাদের মনে রাখা উচিত ‘তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে।’
লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ