বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এই পৃথিবীর সকল প্রকার কাজ বা অনুষ্ঠানের যেমন ভিত্তি আছে, তেমনি নৈতিক চরিত্রেরও ভিত্তি আছে। আর এই ভিত্তি হচ্ছে গোনাহ বা পাপের কাজ পরিহার করা, তাকওয়ামূলক জীবনধারা প্রতিষ্ঠা করা এবং মানুষের প্রতি দয়া ও অনুকম্পা প্রদর্শন করা।
আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘তোমাদের যা নির্দেশ করা হয়েছে তার মধ্যে যা গুরুতর পাপ তা হতে বিরত থাকলে, তোমাদের লঘুতর পাপগুলো মোচন করে দেবো এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে দাখিল করব।’ (সূরা নিসা : আয়াত ৩১)।
এই আয়াতের আলোকে পাপ ও নিষিদ্ধ কাজ পরিহার করার বিষয়টি সুস্পষ্ট জানা যায়। হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘হে আয়েশা, ছোট ও ক্ষুদ্র গোনাহ হতেও দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ, এগুলো সম্পর্কেও আল্লাহপাকের দরবারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (ইবনে মাজাহ)।
বস্তুত ছোট এবং বড় উভয় প্রকার পাপকাজ হতে বিরত থাকলে তাকওয়ামূলক অধিষ্ঠান অর্জিত হয় এবং মানুষের নৈতিক জীবন হয় সুন্দর, নির্মল ও পরিশীলিত।
এ প্রসঙ্গে হযরত আতিয়াতাছ ছা’দী রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘বান্দা মুত্তাকি লোকদের মধ্যে ততক্ষণ পর্যন্ত পরিগণিত হতে পারে না, যতক্ষণ সে কোনো জাহান্নামের কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কায় সেসব জিনিস পরিত্যাগ না করবে, যাতে বাহ্যিকভাবে কোনো দোষ নেই।’ (জামে তিরমিজী)।
এই পৃথিবীর ঘূর্ণায়মান চক্রে আবর্তিত মানবজীবন স্বভাবতই চঞ্চল ও গতিশীল। কালের খাতায় এবং জীবনের পাতায় এই চঞ্চলতার রূপ সার্বিকভাবে ফুটে ওঠে। এই চঞ্চলতার ভেতর দিয়ে প্রকৃত মানুষ তাকওয়া ও পরহেজগারিসুলভ জীবনধারার প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং পবিত্র জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠে এবং এরই রেশ ধরে সাধারণ লোকদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করার প্রবণতা দানা বেঁধে ওঠে এবং মানবতার পরিপূর্ণ আদর্শ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।
এ প্রসঙ্গে হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সাধারণ মানুষের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ বর্ষণ করে না, তার প্রতি আল্লাহ তায়ালাও দয়া ও অনুকম্পা বর্ষণ করেন না।’ (সহি বুখারি ও মুসলিম)।
প্রকৃতপক্ষে সকল মানুষের এই অধিকার রয়েছে যে, যেকোনো অবস্থানে বা যেকোনো পরিবেশে দিন গুজরান করা হোক না কেন, সাধারণ দয়া, অনুগ্রহ ও অনুকম্পা সে পাবেই। এটাই মানবতার প্রকৃত অধিকার। এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, সংরক্ষণ করা ও এর লালন করা ইসলামী নৈতিক চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যটি রাসূলুল্লাহ সা.-এর এই বাণীর মাঝে সুস্পষ্টরূপে ফুটে উঠেছে।
হযরত হোজায়ফাহ রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তোমরা অপরকে দেখে কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ো না এমনভাবে যে, তোমরা বলবে- অপর লোক ভালো কাজ ও ভালো ব্যবহার করলে আমরাও ভালো কাজ ও ভালো ব্যবহার করব।
আর অপর লোক যদি জুলুম ও নিগ্রহের নীতি গ্রহণ করে তাহলে আমরাও জুলুম করতে শুরু করব। বরং তোমরা নিজেদের অন্তরকে এভাবে সুদৃঢ় ও মজবুত করে লও যে, অপর লোকেরা যদি অনুগ্রহ প্রদর্শন করে ও ভালো ব্যবহার করে তাহলে তোমরাও তা করবে। আর অপর লোকেরা যদি খারাপ ব্যবহার করে বা জুলুম করে তবুও তোমরা খারাপ কাজ ও জুলুম কখনো করবে না।’ (জামে তিরমিজী)।
এই হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, অপর লোকদের কাজের ওপর মুসলমানদের কাজ নির্ভরশীল নয়। অপর লোকেরা ভালো ও মন্দ যাই করুক না কেন, মুসলমানগণ কখনো খারাপ ও জুলুম করতে পারে না। এই না পারাই ইসলামী নৈতিক চরিত্রের ভিত্তি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।