Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোজা শোকরগোজারির প্রশিক্ষণ-১

মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৯, ১২:৩৩ এএম

বান্দার শোকর ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বড় পছন্দ। তিনি চান বান্দা প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর শোকর আদায় করুক, যাতে তিনি নিয়ামত-অনুগ্রহে তাকে ভরিয়ে দিতে পারেন এবং যা দিয়েছেন, বাড়তি দান দ্বারা তাকে পরিপূর্ণ করে তুলতে পারেন। যত শোকর ততোধিক দান- এটাই তাঁর বিধান। তিনি এর নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, তুমি যদি শোকর আদায় করো, আমি তোমাকে আরো বেশি দেবো। শোকরগোজার হওয়ার জন্য এটা এক ঐশী প্রণোদনা।
এ রকম অনুপ্রেরণাদায়ী আয়াত কুরআন মজীদের পাতায় পাতায় চোখে পড়ে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসও আছে প্রচুর। জ্ঞানবান ও বুদ্ধিমানের জন্য তাতে শোকরগোজারির যথেষ্ট সবক রয়েছে। কিন্তু দয়াময় আল্লাহ বান্দাকে তো জানেন। আলস্য ও উদাসীনতা তার মজ্জায় মেশানো। বড় আনমনা। মনের সংযোগ ছাড়া তো সবক হাসিল হয় না। তাই মনোযোগ সৃষ্টির জন্য চোখের সামনে খুলে দিয়েছেন নানা দৃশ্যপট, যা দেখলেই মনে কৃতজ্ঞতা জাগার কথা।
প্রতিটি মানুষের সামনেই এমন কত দৃশ্যই না বিরাজ করে, যা তার বহুবিধ সম্পন্নতা স্মরণ করিয়ে দেয়, যেন বলে দেয়-আহা, চেয়ে দেখো তোমার কত আছে! শিক্ষানবিস মন ঠিকই তা থেকে সবক গ্রহণ করে। সে কৃতজ্ঞতায় আনত হয়ে বলে ওঠে- রাব্বুল আলামিনের শিক্ষা কারিকুলাম বড় বিচিত্র এবং তা অতি পূর্ণাঙ্গ। তিনি ছবির সাহায্যে শিক্ষা দিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি বান্দাকে হাতে-কলমেও শোকরের তালিম দিয়েছেন। বাস্তব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শোকরগোজার রূপে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করেছেন।
দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাপ্রবাহ ও বয়ে চলা জিন্দেগির চড়াই-উতরাইয়ের প্রতি লক্ষ করুন না, একি কেবলই প্রাকৃতিক আয়ু পূরণের চলমানতা? এর ভেতর কি কোনো পরিকল্পিত নির্মাণ নেই? এ কালক্ষয় নয়, নাকি কোনো পূর্ণতা বিধানের সুব্যবস্থিত প্রক্রিয়া? আচরিত জীবনে বান্দা যত অবস্থার সম্মুখীন হয়, তার প্রতিটি দ্বারাই মহান আল্লাহ মূলত বান্দাকে তাঁর সত্যিকারের বান্দারূপে গড়ে তোলার বাস্তব প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।
বান্দা যদি তাতে নিজ ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করে, তবে এ প্রশিক্ষণের সুফল সে পাবেই। ওই ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগটুকু তার দরকার, যেহেতু সে জড় নয়, বুদ্ধিমান জীব। বান্দা ইচ্ছা করলে তার প্রতিটি হাল থেকেই নিজেকে কৃতজ্ঞরূপে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ নিতে পারে। কিন্তু পার্থিব জীবনে মোহাচ্ছন্ন মানুষ বড় স্থূলদর্শী।
আপাতদৃষ্টির সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে সে নিজেকে আরো বিস্তার ও আরো গভীরে নিয়ে যেতে পারে না বা নিয়ে যেতে চায় না। ফলে সে কুদরতি প্রশিক্ষণের সুফল ভোগ থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। কিন্তু সে কি চিরবঞ্চিতই থেকে যাবে? দয়াময় আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা সে রকম নয়। তিনি দিতেই চান।
সুতরাং পরবর্তী ধাপরূপে তিনি বাধ্যতামূলক কিছু কর্মসূচি দিয়েছেন, যা পালন করলে মানুষ বাস্তবিক শোকরগোজার বান্দা হয়ে উঠতে পারে। সেই কর্মসূচির অন্যতম প্রধান অঙ্গ রমজানের রোজা।
রোজার অপর নাম সবর। রোজায় সবরের প্রশিক্ষণ হয় সরাসরি এবং তা অতি স্পষ্ট। কিন্তু এতে যে শোকরেরও সবক এবং প্রশিক্ষণ রয়েছে, সেদিকে নজর কমই যায়। অথচ এ প্রশিক্ষণও অস্পষ্ট নয়।



 

Show all comments
  • Mahabub Rahman ৪ মে, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
    সাওম হলো, প্রত্যেক সন্তান, বালেগ মুসলমান নর-নারীকে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়তে পনাহার, স্ত্রী সহবাস ও রোজা ভঙ্গকারী সকল কাজ থেকে বিরত থাকা।
    Total Reply(0) Reply
  • মনিরুল ইসলাম ৪ মে, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
    রোজা শুধু আল্লাহর জন্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজের সঙ্গে রোজার সম্পর্ক ঘোষণা করেছেন। এমনিভাবে তিনি সব ইবাদত-বন্দেগি থেকে রোজাকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম ৪ মে, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
    নেক আমলের মাঝে রোজা রাখার গুরুত্ব আল্লাহর কাছে কত বেশি।
    Total Reply(0) Reply
  • মিরাজ আলী ৪ মে, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
    রোজার এত মর্যাদার কারণ কী, তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালো জানেন। তবে আমরা যা দেখি তা হলো, রোজা এমন একটি আমল, যাতে লোকদেখানো ভাব থাকে না। এটি বান্দা ও আল্লাহর মধ্যকার একটি অতি গোপন বিষয়।
    Total Reply(0) Reply
  • হৃদয় ৪ মে, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
    হাদিসে এসেছে, আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিন, যার দ্বারা আমি লাভবান হতে পারি। তিনি বললেন, 'তুমি রোজা রাখো। কেননা, এর সমকক্ষ আর কোনো ইবাদত নেই। ' (নাসায়ি -২২২০)
    Total Reply(0) Reply
  • বাছিত ৪ মে, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
    প্রত্যেক নেক আমলের নির্ধারিত সওয়াব ও প্রতিদান রয়েছে যার মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন। কিন্তু রোজার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ রোজার বিষয়ে আছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক অনন্য ঘোষণা।
    Total Reply(0) Reply
  • মেঘদূত পারভেজ ৪ মে, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের সকলকে হাদিস ও সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুক। আমিন ইয়া রাব্বুল আলামিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোজা


আরও
আরও পড়ুন