Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আতঙ্কে নির্ঘুম কৃষক

স্টফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ ও চান্দিনা (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

গোপালগঞ্জের মাঠের পর মাঠ পাকা বোরো ধান। প্রায় ৭০ ভাগ জমির বোরো ধান পাক ধরেছে। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই শুরু হবে পুরো দমে ধান কাটা ও মাড়াই উৎসব। কৃষকের ফসল ঘরে তোলা নিয়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ব্যস্ততা। গোপালগঞ্জের বোরো চাষিদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাজ।
গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এতে জেলার ৫ উপজেলার কৃষকদের আতঙ্ক বেড়ে গেছে। এমন অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকর। গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বোরো মৌসুমে জেলার ৫ উপজেলার ৬৮ টি ইউনিয়ন ও ৪ টি পৌরসভায় ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। কাশিয়ানী উপজেলার শিল্টা গ্রামের কৃষক সাকায়েত হোসেন বলেন, দশ বিঘা জমির পুরো ধান পেকে গেছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের আগে কাটতে পারছি না। ধান নিয়ে চরম আতঙ্কে আছি, জানি না কি হবে। সব আল্লার উপর ছেড়ে দিয়েছি। গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারেণের ভারপ্রাপ্ত ডিডি কৃষিবিদ হরলাল মধু বলেন, ইতিমধ্যে এ জেলার ৫০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঘূর্ণিঝড় ফণির কারণে ৮০ ভাগ পাকা বোরো ধান কাটতে এবং ভ‚ট্টা, চীনা বাদামসহ পরিপক্ক সব ফসল ঘরে তুলতে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি। দ্রæত ধান কেটে নিতে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা করা হয়েছে।
এদিকে কুমিল্লার বিভিন্ন জায়গায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে রোদ বৃষ্টির খেলা। নিচে ক্ষেতে পাকা ধান। এমন অবস্থায় কৃষক একবার তাকাচ্ছেন ওপরের আকাশে পরক্ষণেই মাঠের সোনালী স্বপ্নের দিকে। এমন অবস্থায় উদ্বিগ্ন কুমিল্লার কৃষকরা।
হঠাৎ ‘ফণি’ আতঙ্কে জেলার কৃষক এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ৮০ ভাগ পাকা ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জেলার বরুড়া উপজেলার কৃষক রহিম মিয়া দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, শুনেছি এ ঘূর্ণিঝড় সিডরের থেকে ভয়ঙ্কর। এখন ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় যাবো, কোথায় থাকব, চিন্তায় পড়েছি। আব্দুস সালাম বলেন, ঝড়ের কথা শুনে খুব আতঙ্কে আছি। অন্যদিকে পাকা ধান, পান, আখ ও সবজি রক্ষায় মরণপণ চেষ্টা করছেন কৃষকরা। জলোচ্ছ¡াসের আশঙ্কায় মৎস্য খামারের পাশে অতিরিক্ত নেটের বেড়া দিয়েছেন চাষিরা।
বুড়িচং উপজেলার কৃষক আবুল বাশার বলেন, ঝড়ের খবর শুনে সবাই মিলে কাঁচা-পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছি।
সবাই মিলে রাতেও ধান কাটছি। ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছে কৃষকরা ওই সব এলাকার শেখ দেলোয়ার হোসেন, ছাব্বির রহমান, ইসরফিল আমিনসহ আরও অনেকে বলেন, এতো বড় ঘূর্ণিঝড়ের কথা কখনও শুনিনি। এখন আমাদের জমিতে পাকা ধান, ঘেরে মাছ, ভিটায় সবজি কোনটা রেখে কোনটা রক্ষা করবো। সঙ্গে রয়েছে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা।
ঘূর্ণিঝড় ফণির মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন দফায় দফায় সভা জেলা সদর ও উপজেলাগুলোতে কন্ট্রোলরুম ও মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশপাশি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের সাধারণ মানুষদের প্রতি খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিলসহ রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কয়েক শত স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসবের পাশাপাশি জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ