পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ক্রয়, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহসহ স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম-দুর্নীতি দীর্ঘদিন থেকেই যেন নিয়মে পরিনত হয়ে আসছে। আর এই নিয়মের মধ্যেই বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গত ৫ বছর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নানামুখী তৎপরতায় কিছুটা আড়ালেই ছিলেন জাহিদ মালেক। তবে ওই সময়ে তিনি তার কার্যক্রমে সততা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছেন পরবর্তী ধাপের জন্য। আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা অনেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী তাদের পদ হারালেও জাহিদ মালেক ঠিকই তার কর্মগুণের পুরষ্কার পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে পেয়েছেন পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা। মন্ত্রীত্ব পেয়েই জাহিদ মালেক স্বাস্থ্য খাতের দীর্ঘদিনের চলমান বিশৃঙ্খলা দূর করে শৃঙ্খলা ফেরানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে গত পাঁচ বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্য খাতকে জনবান্ধব খাতে পরিণত করার কথা বলেছেন।
ইতোমধ্যে সরকারের নির্দিষ্ট কর্মসূচির অংশহিসেবে একশ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। গত ১৬ জানুয়ারি ঘোষিত এসব কর্মসূচি গত ২৫ এপ্রিল শেষ হয়েছে। এই সময়ে ১২টি পৃথক কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যার অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের কর্মসূচি ঘোষণার পূর্বে সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে নিলে ভাল হতো। তাহলে সমাজের সকলের প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে আরও কার্যকরী কর্মসূচি গ্রহণ করা সম্ভব হতো।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মন্ত্রণালয় থেকে ১০০ দিনের কর্মসূচি গ্রহনের পর এসব বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওপর। ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে অধিদপ্তরের কয়েকটি বিভাগের কর্মীদের দিন রাত খাটাখাটি করতে হয়েছে। যদিও অভিযোগ রয়েছে- যেসব কর্মসূচি নেয়া হয়েছে, তার বেশকিছু কর্মসূচি একই ধরনের। আবার কিছু কর্মসূচি সাধারনের জীবন ঘনিষ্ট নয়। এমনকি এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে অবগত করা হলেও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে কঠোর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি বেসরকারি পর্যায়ে ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেয়া হয়নি বিশেষ কোন ব্যবস্থা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, ১০০ দিনের যে কর্মসূচি নেয়া হয়েছে সেটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তবে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোলডারদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে আরও ভাল হতো। এ ধরনের একটি কর্মসূচি যে সরকার নিয়েছে, সেটি সাধারণ মানুষের নজরে আনা প্রয়োজন ছিল। কেননা যাদের জন্য এসব কর্মসূচি তারাই যদি না জানে তাহলে গৃহিত কর্মসূচি গুরুত্ব হারাবে। তিনি বলেন, যে কর্মসূচিই নেয়া হোক না কেন, তা সরকারের একার পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই ব্যপক প্রচারের মাধ্যমে সবাইকে সম্পৃক্ত করলে বাস্তবায়ন সহজ হয়। এছাড়া দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে নির্ধারিত সময়ের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত সংবাদ সম্মেলনে করে গৃহিত কর্মসূচি কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে সে বিষয়ে দেশবাসীকে অবহিত করা।
গত ১৬ জানুয়ারি যেসব কর্মসূচি গৃহিত হয়েছে সেগুলো হলো- সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত কার্যক্রমের ভিত্তিতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ সপ্তাহ উদযাপন, যেসব নতুন প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুত হয়েছে সে সকল ডিপিপি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ, মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমের তদারকির প্রক্রিয়া চালু বিশেষ করে যন্ত্রপাতি, জনবলের কর্মক্ষেত্রে উপস্থিতি তদারকি করা, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন করা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রমসমূহ পরিদর্শনের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে সফর, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বিভিন্ন পদে ইতোমধ্যে গৃহীত পদোন্নতি প্রক্রিয়া শেষ করা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে যথাযথ প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম গ্রহণ, সব হাসপাতালে সহজে দৃশ্যমান সাইনবোর্ডসহ নিওন সাইন-এর সাইনবোর্ড স্থাপন, প্রতিটি হাসপাতালে প্রদেয় সেবা এবং গ্রহীতব্য বিভিন্ন ইউজার চার্জের তালিকা যথাযথ ভাবে প্রদর্শন নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতারা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন সেসব সমস্যা এবং তার সমাধানের বিষয়ে গ্রহীতাদের পরামর্শ গ্রহণের জন্য ওয়েবসাইটে অভিযোগ কর্ণার চালু করা এবং হাসপাতালে অ্যাম্বুুলেন্স ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জন্য জীপ গাড়ি প্রদান করা।
এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি মনে করি ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার প্রায় শতভাগ। তবে কর্মসূচির প্রথমটি বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারের পূর্ণ মেয়াদ প্রয়োজন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সপ্তাহ ইতিমধ্যে উদযাপন শুরু হয়েছে। যেসব ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়েছে সেগুলে বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে রয়েছে। মন্ত্রনালয় থেকে মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন সম্পন্ন হয়েছে। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সচিব বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া প্রচার-প্রচারণা কর্যক্রমও নিয়মানুযায়ী চলছে। মহাপরিচালক জানান, সরকারি পর্যায়ের সব হাসপাতালে দৃশ্যমান সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে এবং বিভিন্ন ইউজার চার্জের তালিকায়ও যথাযথভাবে প্রদর্শনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে বেসরকারি হাসপাতালে এসব কর্মসূচি সঠিক ভাবে পালিত হচ্ছে কিনা, সেটি মনিটরিং করা সম্ভব হয়নি। তিনি জানান, সেবা গ্রহীতাদের পরামর্শ গ্রহনের জন্য ওয়েবসাইটে অভিযোগ কর্ণার ইতিমধ্যে চালু আছে। তাছাড়া ১৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বিভিন্ন হাসপাতালে জন্য ৪০টি অ্যাম্বুলেন্স এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জন্য ৪৮টি জীপ গাড়ি প্রদান করেছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েও দেশের স্বাস্থ্য খাত এখন বিশ্বের কাছে রোল মডেল। নানা সংকট থাকলেও আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা অনুসারে দেশের স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবেই দেশের যে কোনো প্রান্তের তৃণমূলের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। এখন আমরা এই ব্যবস্থাপনাকে আরো অধিকতর কার্যকর ও মানসম্পন্ন করার কাজ করে যাচ্ছি। আরো কতটা সহজে মানুষ এই সেবা পেতে পারে সেদিকেই এখন আমাদের নজর। একই সঙ্গে যেসব সীমাবদ্ধতা আছে সেগুলো কাটানোর চেষ্টা করছি বলে উল্লেখ করেন জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনাকে আরও শক্তিশালী করতে স্বাস্থ্যসেবার সবচেয়ে বড় কর্মযজ্ঞ কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রমকে আরও জোরদার করা হচ্ছে। পাশাপাশি হাসপাতালে বরাদ্দ ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের স্বচ্ছতা বজায় রাখার কথা উল্লেখ করেন তিনি। নতুন অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, মানসম্মত সেবার প্রয়োজনেই স্বাস্থ্য খাতে বাজেট আরো বাড়ানো উচিত। অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী এদিকে নজর রাখছেন বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।