পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করেন ড. কামাল হোসেন। অথচ তিনি দলীয় নির্দেশ অমান্য করে শপথ নেতা মোকাব্বির খান ইস্যুতে নিজেই অপরিচ্ছন্ন রাজনীতি চর্চা করছেন। দলের নেতাকর্মীদের অন্ধকারে রেখেছেন। মতিঝিলের অফিসে এলে মোকাব্বিরকে বের করে দেন; বেইলি রোডের বাসায় গেলে সংসদে যাওয়ার পরামর্শ দেন; আবার মহানগর নাট্যমঞ্চে বিশেষ কাউন্সিলে পাশে বসিয়ে বক্তৃতা করেন। প্রবীণ এই রাজনীতিকের ত্রিমুখী নীতির প্রতিবাদে গণফোরামে উঠেছে ঝড় । তবে বৈশাখী এই ঝড় থামাতে তিনি নতুন কমিটি দেয়া স্থগিত করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘সুবোধ বালকের মতো’ ঐক্যফ্রন্টের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিএনপিকে ‘ঘুমিয়ে’ রাখার মতোই কৌশলের মতোই নতুন কৌশল নিয়ে গণফোরামের ঝড় থামালেন ড. কামাল হোসেন। দলের সাধারণ সম্পাদক পদে রদবদলের লক্ষ্যেই ‘বিশেষ জাতীয় কাউন্সিল’ আয়োজন করা হয়। নতুন সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় ছিল অধ্যাপক আবু সাঈদ ও ড. রেজা কিবরিয়ার নাম। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে এমপি হিসেবে শপথ নেয়া মোকাব্বির খান সম্মেলনের মঞ্চে কামাল হোসেনের পাশে বসায় হঠাৎ গণফোরামে ওঠে বৈশাখী ঝড়। সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু কাউন্সিল বর্জন করেন এবং রফিকুল ইসলাম পথিক পদত্যাগ করেন। আরো কয়েকজন নেতা পদত্যাগের হুমকি দেন। বাধ্য হয়েই নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া বন্ধ করে পুরনো কমিটিই এক বছরের জন্য বহাল রাখার কৌশল নেয়া হয়। এর মাধ্যমে গণফোরামে ঝড় থামানোর উদ্যোন নেয়া হলেও মোকাব্বির প্রশ্নে কামাল হোসেনের অবস্থান জানতে চাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণফোরামের এক নেতা বলেন, পরিচ্ছন্ন রাজনীতির স্লোগান দিয়ে রাজনীতি করা কামাল হোসেন নিজেই মোকাব্বির প্রশ্নে অপরিচ্ছন্ন রাজনীতিতে ডুবে রয়েছেন। বিএনপির উচিত ড. কামালকে মোকাব্বিরের ব্যাপারে গণফোরামের অবস্থান পরিষ্কারের জন্য চাপ দেয়া।
গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, গণফোরামের মধ্যে মোস্তফা মোহসিন মন্টুকে বাদ দেয়ার আলোচনা ছিল ভেতরে ভেতরে। ড. কামাল মনে করেন মন্টু দলের জন্য কিছু করেননি। সব ধরনের সক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও মোস্তফা মোহসীন মন্টু সংগঠনের জন্য কাজ করেননি। আবার নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে অর্থ আয়ের অভিযোগ ছিল। কুমিল্লার ধানের শীষের এক প্রার্থী মন্টুকে নেতাকর্মীদের সামনে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন। ২০১১ সাল থেকে মোস্তফা মোহসীন মন্টু সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর তিনি ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন।
২৬ এপ্রিল কাউন্সিলের প্রথম পর্ব শেষে এবং দ্বিতীয় পর্ব শুরুর সময় গণফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘কাউন্সিলের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে। দল পুনর্গঠন করতেই বিশেষ কাউন্সিল হচ্ছে। শিগগিরই নতুন কমিটি সম্পর্কে জানা যাবে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক নেতা জানান, পাবনার আবু সাঈদ সাধারণ সম্পাদক হওয়ার চেষ্টা তদবির করছেন; তবে ড. কামাল হোসেন সিদ্ধান্ত ড. রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করবেন। রেজা কিবরিয়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি গণফোরামে যোগ দেন। সে সময়ই সাবেক তথ্যপ্রতিমন্ত্রী আবু সাঈদও যোগ দেন।
গণফোরাম নেতারা জানান, মহানগর নাট্যমঞ্চে বিশেষ জাতীয় কাউন্সিলের সভা শুরু হওয়ার পর দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে ওঠেন ড. কামাল হোসেন। এ সময় মোকাব্বির খানও মঞ্চে এসে চেয়ারে বসেন। তাকে দেখে কামাল হোসেনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে কর্মীরা স্লোগান দেন। দলের প্রভাবশালী নেতা প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক তাৎক্ষণিক পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, মোকাব্বির খান অফিসে এলে ড. কামাল বলেন গেট-আউট। আর বাসায় গেলে বলেন তুমি সংসদে যাও। ড. কামালের এই দ্বিমুখী নীতির প্রতিবাদে আমি দল থেকে পদত্যাগ করেছি। এখনও পদত্যাগপত্র জমা দেইনি। কয়েক দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করতে পারি। দলের আরো কয়েকজন নেতা কামাল হোসেনকে ঝড় ঠেকাতে এই মুহূর্তে নতুন কমিটি না দেয়ার পরামর্শ দেন। অতঃপর থেমে যান ড. কামাল হোসেন।
ড. কামাল হোসেনের ওপর এই ঝড় নতুন নয়। ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে ১৯৯৩ সালের আগস্ট মাসে তিন দিনব্যাপী জাতীয় মহাসম্মেলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ফোরাম গঠন করেন। অতপর ‘তান্ত্রিক’ শব্দটি বাদ দিয়ে গঠন করেন গণফোরাম। এ সময় দেশবিদেশে তাঁর নতুন দল নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। গণফোরামে যোগ দেন সিপিবি নেতা সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক, সামসুদ্দোহা এমপি, ন্যাপ নেতা পংকজ ভট্টাচার্য, মাওলানা আহমেদুর রহমান আজমী, ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম, আবুল মাল আব্দুল মুহিত, শাহজাহান সিরাজ, আবদুর রউফসহ শতাধিক সিনিয়র নেতা। প্রথম আহ্বায়ক হন ড. কামাল সদস্যসচিব হন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এর পরের বছর কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক হন সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক। তার মৃত্যুর পর সাধারণ সম্পাদক হন পর্যায়ক্রমে ইঞ্জিনিয়ার কাসেম, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। ২০১১’র ২৯ আগস্ট মোস্তফা মহসিন মন্টু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগে শাজাহান সিরাজ বিএনপিতে চলে যান। গণফোরাম ত্যাগ করে পঙ্কজ ভট্টচার্য ঐক্যন্যাপ গঠন করেন। একে একে সবাই ড. কামাল হোসেনকে ছেড়ে চলে যান। দল নামের খোসল নিয়ে তিনি পড়ে থাকেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর দেশের রাজনীতিতে নতুন সূর্যের মতো উদয় ঘটে ড. কামাল হোসেনের। কিন্তু নির্বাচনী সভা-সমাবেশে ব্যাপক মিডিয়া কভারেজ তাকে রাজনীতির গগণে উঠালেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ‘গণভবনে’ একের পর এক সংলাপে অর্জন জিরো হওয়ায় বিএনপির অনেক নেতাই তার ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সংশয় প্রকাশ করেন। তবে ঐক্যের খাতিরে কিছুই বলেননি। এর মধ্যেই এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বোমা ফাটানো তথ্য দেন, ‘ঐক্যফ্রন্টে ড. কামালের সঙ্গে যারা ছিলেন তারা সরকারের কাছ থেকে টাকা দিয়েছেন। কারা নেগোসিয়েশন করেছেন কোন নেতা টাকা নিয়েছেন সে তথ্য আমার কাছে আছে’। কর্নেল অলির এই বক্তব্য প্রকাশের পর বিএনপির কেন্দ্র থেকে শুরু করে শেকড় পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে সন্দেহের উদ্বেগ হয়। মোকাব্বির শপথ নেয়ার পর ড. কামালের রহস্যজনক ভূমিকা এবং ‘গেট-আউট’ ‘শোকজ’ ইত্যাদি সেই সন্দেহের ডালপালা ছড়িয়ে দেয়। এখন গণফোরামেও একই অবস্থা। দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে শপথ নেয়া মোকাব্বির খান প্রশ্নে ড. কামাল হোসেনের অবস্থান জানতে চাচ্ছেন। গণফোরমের পদত্যাগ করা প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক বলেছেন, মোকাব্বির খান যখন শপথ নিতে যান তখন দলে দুই ধরনের মত ছিল। পরে বলা হয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় যা সিদ্ধান্ত হবে তা-ই সবাই মেনে নেবেন। ২০ এপ্রিল কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তাকে শোকজ করা হবে। কিন্তু তিনি এখন ড. কামাল হোসেনের পাশেই বসেন। গণফোরামের নেতাকর্মীদের প্রশ্ন পরিচ্ছন্ন রাজনীতির স্লোগান দেয়া ড. কামাল হোসেন এখন মোদাব্বির ইস্যুতে অপরিচ্ছন্ন রাজনীতির পথে আর কতদিন হাঁটবেন?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।