পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1719833983](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় ‘গেটআউট’ বলে যাকে ক’দিন আগে মতিঝিলের চেম্বার থেকে বের করে দিয়েছিলেন, সেই মোকাব্বির খানকে গতকাল পাশে বসিয়ে গণফোরামের কাউন্সিল করলেন ড. কামাল হোসেন। প্রতিবাদে কাউন্সিলে যোগ দেননি দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু। দল থেকে পদত্যাগ করেছেন দলের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক। তীব্র প্রতিবাদ করে কাউন্সিল থেকে বেরিয়ে যান নেতাকর্মীরা। এর আগে গত মাসে সিলেটের এক সেমিনারে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেয়ায় মোকাব্বির খানকে লাঞ্ছিত করেন।
সিলেট-২ আসন থেকে গণফোরামের ‘উদীয়মান সূর্য’ প্রতীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিজয়ী মোকাব্বির খান দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদে যোগ দিলে তার বিরুদ্ধে দলের ভেতর থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ওঠে। গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খান। তিনি বলেছিলেন ড. কামাল হোসেনের অনুমতি নিয়ে সংসদে শপথ গ্রহণ করেছেন। শপথের দুই দিন পর মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের সাথে দেখা করতে গেলে মোকাব্বির চরমভাবে হেনস্তা হন। ড. কামাল তাকে ‘গেটআউট’ বলে চেম্বার থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। ড. কামাল বলেছিলেন, ‘আপনি এখান থেকে বেরিয়ে যান। আমার চেম্বার ও অফিস আপনার জন্য চিরতরে বন্ধ।’ কামাল হোসেনের সেই বন্ধ দুয়ার খুলে গেছে মোকাব্বিরের জন্য। গতকাল গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে সকাল পৌনে ১১টায় ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে এই বিশেষ কাউন্সিল শুরু হয়। দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে এই অধিবেশন শুরু হয়। এর আগেই ড. কামাল হোসেনের গাড়িবহরের মধ্যে অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত হন মোকাব্বির খান।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের আসনের প্রথম সারিতে তিন চেয়ারের পরই মোকাব্বির খান বসেন। তার এক পাশে বসেন রেজা কিবরিয়া, অন্য পাশে অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ।
গত ২ এপ্রিল দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মোকাব্বির খান স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর কাছ থেকে শপথ গ্রহণ করে সংসদে যোগ দেন। এর আগে ৭ মার্চ দলের সদস্য সুলতান মো. মনসুর শপথ গ্রহণ করেন। অবশ্যই প্রাথমিক সদস্য হওয়ায় সেদিনই সুলতান মো. মনসুরকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
কিন্তু মোকাব্বির খান প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ায় ২৪ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বৈঠকে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
মোকাব্বির খানের মঞ্চে বসা নিয়ে দলের কাউন্সিলরদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। গ্যালারিতে বসা নেতাকর্মীরা তার প্রতি অশালীন ভাষা প্রয়োগ করেন।
নেতাকর্মীরা মোকাব্বির খানের উদ্দেশে বলেন, ‘তুই ওখানে বসে আছিস কেন? তোর মতো প্রতারকের ওখানে বসার জায়গা নয়। ড. কামালের ওপরও ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলটির কেউ কেউ।
কাউন্সিল অধিবেশনে অনুপস্থিত ছিলেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু।
কাউন্সিলে মোকাব্বির খানের যোগদানের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি জানি ও শুনেছি ঘটনা। হাউজে অনেকে বিরোধিতা ও প্রতিবাদ করেছেন। এটা সভাপতি বলতে পারবেন মোকাব্বির খান কেন গেলেন, কিভাবে গেলেন। তাকেই জিজ্ঞেস করুন।
দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারী বিশেষ কাউন্সিলে আসার বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটাকে আমি অগ্রহণযোগ্য ও অনৈতিক কাজ হয়েছে বলে মনে করি। এটা জাতির সাথে প্রতারণা হয়েছে। আমি এ রকম সম্মেলনে যাবো না।
এ দিকে মোকাব্বির খানের কাউন্সিলে অংশগ্রহণে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। দলের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক বলেন, মোকাব্বির খানের মতো একজন বিতর্কিত ব্যক্তির অংশগ্রহণ কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। ড. কামাল দু’মুখী ভূমিকা নিয়েছে, যা দুঃখজনক। মোকাব্বির খান সভাপতির বাসায় গেলে তাকে অনুমতি দেন, আবার মতিঝিলের চেম্বারে গেলে তাকে গেটআউট করেন। সভাপতির এরকম দ্বৈত ভূমিকা আমরা কখনোই প্রত্যাশা করিনি। মোকাব্বির খানের ব্যাপারে যখন কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনা হয় তখন আমরা অধিকাংশই বলেছি তাকে বহিষ্কার করতে। সেখানে তিনি (ড. কামাল হোসেন) সভাপতি হয়ে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বললেন কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে।
ড. কামাল হোসেনের বক্তব্য
কাউন্সিলে উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, নিরাশ হলে চলবে না। জনগণের বিজয় হবেই হবে। দু-তিন বছর কেউ এভাবে চলতে পারে। জনগণ ঠিকই সময়মতো জবাব দেবে। এ দেশের মানুষ কখনোই স্বৈরাচার মেনে নেয়নি, নেবেও না। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, জনগণ কার্যকর ভ‚মিকা না রাখলে সংবিধানকে অবজ্ঞা করে যারা ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় তারা লাভবান হবে।
ড. কামাল হোসেন বলেন, জনগণ এ দেশের মালিক। স্বাধীনতা ও সংবিধানকে রক্ষা করতে হলে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে, ঝুঁকি নিতে হবে। একই সঙ্গে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ে জনগণকে সজাগ থাকতে হবে।
গণফোরাম সভাপতি বলেন, যারা রাষ্ট্রক্ষমতা পায় তারা জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে সে ক্ষমতা পায়। তিনি বলেন, জনগণকে দেখতে হবে এসব জনপ্রতিনিধি সংবিধানে দেয়া ক্ষমতা মেনে চলে দেশ চালাচ্ছে কি না? তিনি বলেন, দেশের মালিক জনগণ। এ সময় তিনি সকলকে নিজের দিকে তাকিয়ে বলেন, আপনরাই দেশের মালিক।
তিনি সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার প্রশংসা করে বলেন, তার ভূমিকাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি অনেক সাহসী ভূমিকা রেখেছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। তিনি তার ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন নেতিবাচক পদক্ষেপের ব্যাপারে বলেন, তারা (সরকার) তার ব্যাপারে এ ধরনের সিদ্ধান্ত না নিলেও পারত। তিনি বলেন, দেশে সাবেক বিচারপতির ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ সময় গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মফিজুল ইসলাম খান কামাল, অ্যাডভোকেট এস এম আলতাফ হোসেন, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, ড. রেজা কিবরিয়া, মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন, ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল হক, অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, আওম শফিকুল্লাহ, মোশতাক আহমেদ, এম. শফিউর রহমান খান বাচ্চু, ফরিদা ইয়াছমীন, মাহমুদ উল্লাহ মধু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বেলা পৌনে ১১টার দিকে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে গণফোরামের জাতীয় কাউন্সিল আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। কাউন্সিল উদ্বোধন করেন দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। কাউন্সিলে সারা দেশের সাংগঠনিক জেলার প্রতিনিধিরা যোগদান করেন। সর্বশেষ গণফোরামের কাউন্সিল হয় ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে ১৯৯৩ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম গঠিত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।