Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিচার বিভাগে ডিজিটালের ছোঁয়া

সরকারের ১০০ দিন

মালেক মল্লিক | প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

১ হাজার ৪০০টি ই-আদালত কক্ষ : ৬৩ জেলায় মাইক্রো ডাটা সেন্টার : মামলার রেকর্ড ও রায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ


‘ডিজিটাল’ আর স্বপ্ন নয়, সবখানে এখন ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া। এর থেকে পিছিয়ে নেই বিচার বিভাগও। টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি, বিচারের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং মামলা জট কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে বিচারাঙ্গনকে আধুনিকায়ন করতে এবার চালু করতে যাচ্ছে ই-জুডিসিয়ারি তথা (অনলাইনে বিচারকার্যক্রম)। আইন মন্ত্রণালয় ২ হাজার ২১০ কোটি টাকার ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যা একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায়। ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের আওতায় রয়েছে- ৬৪ জেলায় ১ হাজার ৪০০টি ই-আদালত কক্ষ, মামলার রেকর্ড ও রায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ, ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেমের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ এবং ডিজিটাল এভিডেন্স রেকর্ডিং, বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম স্থাপন।
এতে করে দেশের যে কোনো প্রান্তে বসেই বিচার প্রার্থীরা জানতে পারবে মামলার সর্বশেষ তথ্য। কমবে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি। বাড়বে বিচারিক সুবিধা এবং এক ক্লিকেই জানা যাবে বিচার কার্যক্রমের যাবতীয় তথ্য এমনটি জানিয়েছেন আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোটের কর্মকর্তারা। প্রকল্পটির ই ফাইলিং কার্যক্রম উদ্বোধনকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সারা দেশের বিচার বিভাগকে তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এতে করে বিচারপ্রার্থী জনগণের কাছে তড়িৎ বিচার পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষ ও স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, বিচার ব্যবস্থার জন্য প্রশাসনিক এবং বিচার কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় করা, ই-আদালত কক্ষ প্রতিষ্ঠা করা এবং আইসিটি বিষয়ের জ্ঞান ও দক্ষতা দ্বারা বিচারক, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনজীবীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২ হাজার ২১০ কোটি টাকার ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প গ্রহণ করেছে মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় এই প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে এবং তা এখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। সারা দেশে সাড়ে ৩৫ লাখ মামলা বিচারাধীন আছে। অথচ মামলা নিষ্পত্তির জন্য উচ্চ আদালতে ১০৩ জন এবং নিন্ম আদালতে ১ হাজার ৭৫০ জনের মতো বিচারক কমর্রত রয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে মামলাজট নিরসনে সরকার ও আইন মন্ত্রণালয় দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।
এর আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ইউএনডিপির অর্থায়নে সিলেট জেলা আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণে ভয়েস রেকর্ডিং ব্যবস্থা চালু করা হয়। এরপর সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ অনুসারে আইন মন্ত্রণালয় বিচার বিভাগে ই-জুডিশিয়ারি’ চালুর বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিক্রমে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এতে থাকছে ১৪টি বিষয় মূল কার্যক্রম। বিশেষ করে বিচার ব্যবস্থার জন্য এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার উন্নয়ন, এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং সফটওয়্যার উন্নয়ন, বিচার ব্যবস্থার সব অফিসের জন্য ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক স্থাপন, আইন ও বিচার বিভাগের ডাটা- সেন্টার আপগ্রেডেশন এবং নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার স্থাপন, সুপ্রিম কোর্টের ডাটা সেন্টার আপগ্রেডেশন এবং নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার স্থাপন। প্রকল্পের আওতায় দেশের ৬৪ জেলায় এক হাজার ৪০০টি আদালত কক্ষকে ই-আদালত কক্ষে রূপান্তর, ঢাকা জেলা ব্যতীত ৬৩ জেলায় মাইক্রো ডাটা সেন্টার স্থাপন, আইন ও বিচার বিভাগ এবং সুপ্রিম কোর্টের কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টারের সঙ্গে আন্তসংযোগ স্থাপন করা হবে। ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের আওতায় আরও রয়েছে বিচারকদের জন্য দুই হাজার ল্যাপটপ সরবরাহ, আগের মামলার রেকর্ড ও রায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ, ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেমের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ এবং ডিজিটাল এভিডেন্স রেকর্ডিং, বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম স্থাপন, ই কোর্ট রুম বাস্তবায়নের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন ও প্রচলিত আইনসমূহের প্রয়োজনীয় সংশোধন, বিচার ব্যবস্থার কর্মকর্তাদের ডেস্কটপ কম্পিউটার সরবরাহ এবং বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন মন্তনালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ড. মো. রেজাউল করিম ইনকিলাবকে বলেন, প্রকল্প নিয়ে কাজ চলছে। আশা করছি দ্রæত সময়ের মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
অনলাইনে কার্যতালিকা ও জামিন আদেশ: উচ্চ আদারতের কাগজের পাশাপাশি অনলাইনেও প্রতিদিনের কার্যতালিকা দেখা যাচ্ছে।ওয়েব ঠিকানায় গেলেই উভয় বিভাগের কার্যতালিকা, মামলার সংক্ষিপ্ত ফলাফল, সর্বশেষ অবস্থা, রায় ও আদেশ অনুলিপি পাওয়া যায়। সারাদেশে এ কার্যক্রম চালু হলে বিচারপ্রার্থীরা ঘরে বসেই তার মামলার তথ্য জানতে পারবে। উচ্চ আদালতে কোনো আসামির জামিন হয়েছে কিনা, তা যাচাইয়ের জন্য আগে বিচারিক আদালতথেকে উচ্চ আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় টেলিফোনে যোগাযোগ করা হতো। ফলে ভোগান্তির শিকার হতেন বিচারপ্রার্থীরা, আবার জালিয়াতির ঘটনাও ঘটত। কিন্তু এখন অনলাইনেই জামিন আদেশ যাচাই করা হয়।
বিচার বিভাগীয় বাতায়ন: এখন থেকে এক ক্লিকেই জানা যাবে বিচার বিভাগের সকল তথ্য। দেশের যে কোনো প্রান্তে বসেই বিচার প্রার্থীরা জানতে পারবে বিচার বিভাগীয় কার্যক্রমসমূহ। সুপ্রিমকোর্ট এবং এটুআই এর যৌথ উদ্যোগে বিচার বিভাগীয় বাতায়ন তৈরি করা হয়েছে। ২০১৬ সালে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিচার বিভাগীয় তথ্য বাতায়নের ওয়েবসাইটের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধোধন করেন। জাতীয় তথ্য বাতায়ন,জেলা তথ্য বাতায়নের মতো জুডিশিয়াল পোর্টাল থাকবে বিচার বিভাগ সম্পর্কিত নানা বিষয়। এটা কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে সুপ্রিমকোর্ট। প্রথম দিকে যৌথভাবে চালু হলেও পরবর্তীতে এটা এককভাবে পরিচালনা করবে সুপ্রিম কোর্ট। এছাড়াও ৬৪টি জেলার জজ আদালতসমূহে থাকবে বাতায়নের জেলা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। বর্তমানে সিলেট জেলায় চালু আছে। পর্যায়ক্রমে সকল আদালতে চালু হবে। এতে করে যাবতীয় বিচারিক তথ্য, অলাইন বিচারিক সেবা, আদালত দিনপঞ্জিকা, উচচ আদালতের সিদ্ধান্ত, কোন আদালতে কোন মামলা করা যাবে, মামলার মূল্যায়ন, নারী ও শিশু সংক্রান্ত মামলার তথ্য এবং মামলার কার্যপদ্ধতি। এতে আরও থাকবে, মামলার কার্যতালিকা, কোর্ট ফির তথ্য, অনুলিপি সেবা, লিগ্যাল এইড, ফরম,ই-ডিরেক্টরি, আইন ও মানবাধিকার, এবং বার কাউন্সিলের আইনজীবীদের তথ্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিচার বিভাগ

৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ