Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এমভি বাঙালী ঢাকায় ফিরলেও সার্ভে সনদ মেলেনি এখনো লোকশান এড়াতে প্রকল্প নির্দিষ্ট নৌপথে পরিচালনের তাগিদ

এমভি বাঙালী ঢাকায় ফিরলেও সার্ভে সনদ মেলেনি এখনো লোকশান এড়াতে প্রকল্প নির্দিষ্ট নৌপথে পরিচালনের তাগিদ

প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম


নাছিম উল আলম : সরকারী নিয়ম ভেঙে রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠানের যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি বাঙালী’ চট্টগ্রাম থেকে সাগর উপকূল পাড়ী দিয়ে প্রায় ৭ মাস পরে ঢাকায় ফিরলেও সার্ভে সনদের অভাবে এখনো তা বাণিজ্যিক পরিচালন শুরু হয়নি। দু’মাসের মেরামতের জন্য গত অক্টোবরের শেষভাগে বাঙলী’কে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ণ মেরিন শিপ বিল্ডার্স-এর চট্টগ্রাম ডকইয়ার্ডে পাঠান হলেও প্রায় ৭ মাস পরে নৌযানটি সংস্থার কাছে হস্তান্তর শেষে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে নৌযানটির উপরি কাঠামোর কিছু পরিবর্তনসহ যাত্রী সবিধা পুনর্বিন্যাস ও ডকিং করে তোলা ও খোলের মেরামত করা হয়। তবে এর খোলের স্থায়িত্বের জন্য মেরিন পেইন্ট-এর কাজটি করা হয়নি।
২০১৪-এর মার্চে এমভি বাঙালীকে বিআইডব্লিউটিসি’র কাছে হস্তান্তর করেছিল নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটি। ঐবছরই ২৯ মার্চ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ৯ এপ্রিল নৌযানটি প্রথম বাণিজ্যিক পরিচালনে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলাচল শুরু করলেও যাত্রীবান্ধব না হওয়ায় তাতে ভ্রমণে আগ্রহ ছিল না কারো। উপরন্তু অতিমাত্রায় জ্বালানি ব্যায়ের কারনে লোকসানের মাত্রা বৃদ্ধির পরেও ২০১৫-এর নভেম্বর থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটটি বন্ধ করে নৌযানটি সপ্তাহে একদিন ঢাকা-বরিশাল-মোড়েলঞ্জ রুটে পরিচালন শুরু করে লোকসানের মাত্রা আরো বৃদ্ধি করা হয়। এতে প্রতিট্রিপে লোকশান ৩ লাখ টাকায় উন্নীত হলেও কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে নীরব।
অপরদিকে চুক্তি নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড়বছর পরে গত বছর জুন-এর শেষভাগে এমভি মধুমতি’কে বিআইডব্লিউটিসি’র কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৪ জলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নৌযানটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
তবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এমভি বাঙালীর মত এমভি মধুমতি’ও ‘লাভজনক বাণিজ্যিক পরিচালন’ সম্ভব নয় বলে মনে করছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিসি’র দায়িত্বশীল মহল। সেক্ষেত্রে এসব নৌযান দীর্ঘ দুরত্বের পরিবর্তে স্বল্প দুরত্বে পরিচালন-এর পরামর্শ দিয়েছেন একাধিক ওয়াকিবাহল মহল। সাড়ে ৭শ’ যাত্রী বহক্ষম এসব নৌযানে প্রতি ঘন্টায় জ্বালানি ব্যায় প্রায় ২শ লিটার। অপরদিকে সংস্থার হাতে থাকা সাড়ে ৯শ’ যাত্রী বহনক্ষম পুনর্বাসনকৃত ৪টি প্যাডেল জাহাজে জ্বালানি  ব্যায় ঘন্টায় ১শ’ লিটারেরও কম। কিন্তু এর পরেও সংস্থাটির কারিগরি ও বাণিজ্য পরিদফতর ‘স্বেতহস্তি’ খ্যাত এসব ব্যয়বহুল নৌযান দূরপাল্লার রুট পরিচালনে অতিমাত্রায় আগ্রহী বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ সংস্থাটির একাধিক দায়িত্বশীল মহলর মতে এসব নৌযান বসিয়ে রাখলেই লোকসানের ভয় কম। এমনকি নৌযানটি দুটি প্রকল্প নির্দিষ্ট ঢাকা-বরিশাল রুটের পরিবর্তে ঢাকা-মোড়েলগঞ্জ রুটে পরিচালনের ফলে প্রতিট্রিপে গড়ে ৩ লাখ টাকা লোকশান গুণতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
যাত্রী সুবিধা পুনর্বিন্যাসসহ নানা ত্রুটি দূর করতে দু’মাস সময় নির্দিষ্ট করে গত বছর ২৮অক্টোবর ‘এমভি বাঙালী’কে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, চট্টগ্রামের ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপ বিল্ডার্স-এর ডকইয়ার্ডে পাঠান হয়েছিল। কিন্তু নৌযানটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছানের টানা একমাস পরে ২৯ নভেম্বর তা ডকিং করা হয়। তলা ও খোলের কিছু সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে একমাসের মধ্যে তা পুনরায় কর্ণফুলী নদীতে ভাসানোর কথা থাকলেও সে কাজটি করতে  প্রায় ৩ মাস অতিক্রান্ত হয়। গত ২৪ফেব্রুয়ারী বাঙালীকে আনডক করা হলেও তা ঢাকায় নিয়ে আসতে সময় লেগে যায় আরো ৩ মাস। গত ১৫ মার্চ থেকে সাগর উপকূলে ‘অশান্ত মৌসুম’ শুরু হয়ে যায়। ফলে এসময় কোন অভ্যন্তরীণ নৌযান চট্টগ্রামের কর্ণফুলী মোহনা থেকে সন্দ্বীপ-হাতিয়া চ্যানেল অতিক্রম করে ভাটি মেঘনা পাড়ি দেয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারী করে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর। কিন্তু সে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়েই গত ১১ মে সাগর উপকূল অতিক্রম করে বাঙালী’কে ঢাকায় আসা হয়। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তার মতে ঐ কাজটি  ছিল সম্পূর্ণ বেআইনী।
এদিকে নির্মাণ পরবর্তী নানা সংস্কার কাজে ওয়েস্টার্ন মেরিন আরো প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকা দাবী করছে। অপরদিকে ভ্যাট পরিষোধ না করায় গত দু’বছরেও সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর এমভি বাঙালী’র সার্ভে সনদ প্রদান করেনি। ফলে সরকারী নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের এ নৌযানটি ইতোপূর্বে অনেকটা অবৈধভাবেই চলাচল করেছে। অথচ চুক্তি অনুযায়ী সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সার্ভে সনদ সংগ্রহের দায়িত্ব ছিল নির্মান প্রতিষ্ঠানেরই। তবে ইতোমধ্যে একাজে অনেকটাই অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের জরিপকারক নৌযানটি পরিদর্শন করেছেন। আজ কালের মধ্যেই নৌযানটির মাস্টার কর্মকর্তা ও ইঞ্জিন কর্মকর্তার সাক্ষাতকার গ্রহণ শেষে সার্ভে সনদ প্রদানের চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে।
তবে এমভি বাঙালী ও এমভি মধুমতি’র লোকসান হ্রাসে কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে সে বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি’র দায়িত্বশীল মহল সুস্পষ্ট কোন কিছু বলতে পারছেন না এখনো। সংস্থাটির জিএম বাণিজ্য এনএসএম সাহদত আলী জানিয়েছেন ‘লোকসান এড়াতে সব বিকল্প ভাবনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। সে ক্ষেত্রে বর্তমান দীর্ঘ নৌপথ পাড়ি দিয়ে ট্রিপে ৩ লাখ টাকা লোকসানের পরিবর্তে নৌযানটি প্রকল্প নির্ধারিত ঢাকা-বরিশাল নৌপথে পরিচালন-এর বিষয়টিও বিবেচনা করা হতে পারে বলে তিনি আভাষ দিয়েছেন।





 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ