Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে কিশোরীকে ধর্ষণ

মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরীকে সাত দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়। এরপর তার চুল কেটে গালে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়া হয়। মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের এ ঘটনা রেকর্ড করা হয় মোবাইলে। এ কাহিনী প্রকাশ না করতে দেয়া হয় হুমকি।
নির্যাতনে বিধ্বস্ত আতঙ্কিত কিশোরী আশ্রয় নেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। ঘটনার এক সপ্তাহ পর খবর পেয়ে সোমবার রাতে পুলিশ কিশোরীকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। অভিযুক্ত যুবককে তার পরিবারের পাঁচ সদস্যসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- মেয়েটির কথিত প্রেমিক নিজাম উদ্দিন (৩০), তার স্ত্রী তানিয়া বেগম (২৭), তানিয়ার বোন সোনিয়া বেগম (২২), সোনিয়ার স্বামী মো. লিটন (২৯) তাদের খালা পপি বেগম (৩০) ও নানী ফিরোজা বেগম (৬৫)। সদরঘাট থানার ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, গ্রেফতারকৃতরা গত ৭ এপ্রিল ১৬ বছর বয়সী কিশোরীকে মারধর পর তার চুল কেটে দিয়ে মুখে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়। ভয়ে নির্যাতনের বিষয়টি মেয়েটি কাউকে জানায়নি, এক স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিল। এক নারীর কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেফতার করা হয় ছয়জনকে। ওসি নেজাম বলেন, নিজাম পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক। বাবা-মা ছাড়া মেয়েটি আশ্রয়ের জন্য নিজামকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। নিজামও নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে মেয়েটিকে বিয়ের আশ্বাস দেয়। আগ্রাবাদ চৌমুহুনি এলাকায় বাসা ভাড়া করে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে গত ১ এপ্রিল থেকে বসবাস করছিল তারা। পরে মেয়েটি জানতে পারে নিজামের স্ত্রী-সন্তান আছে। মেয়েটিকে নিজাম সাতদিন ওই বাসায় আটকে রাখে। বিষয়টি জানতে পেরে নিজামের স্ত্রী তানিয়া স্বজনদের নিয়ে ওই বাসা থেকে মেয়েটিকে ধরে নিজের বাসায় নিয়ে যায়।
পশ্চিম মাদারবাড়ি এক নম্বর গলিতে সোনিয়ার বাসায় এনে মেয়েটিকে সবাই মিলে মারধর করে চুল কেটে দেয়। ফিরোজা বেগম মেয়েটির মুখে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়। এ ঘটনা তারা মোবাইলে ভিডিও করে রাখে এবং সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়, যাতে কাউকে না বলে। মেয়েটি যাতে মামলা না করে সেজন্য সোমবার সকালেও মেয়েটিকে হুমকি দিয়ে আসে। মেয়েটিকে উদ্ধারের পর ভিডিও ধারণ করা দুইটি মোবাইল ফোন, কাঁচিসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয় বলে জানান ওসি।
নির্যাতনের শিকার কিশোরী জানিয়েছে, মায়ের মৃত্যুর পর তার রিকশাচালক বাবা আবার বিয়ে করলে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে সে চট্টগ্রামে ফুফুর বাসায় আসে। পরে আগ্রাবাদে একটি গার্মেন্টে চাকরি নেয়। গার্মেন্টসে যাওয়া-আসার পথে অটোচালক নিজামের সাথে পরিচয়। ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক হয়। মেয়েটি জানায়, নিজাম তাকে বিয়ে করার আশ্বাস দেওয়ায় গত ১ এপ্রিল ফুফুর বাসা থেকে নিজামের সাথে চৌমুহুনি এলাকায় নতুন বাসায় উঠে। কিন্তু তাকে বিয়ের কথা বললেই সময়ক্ষেপণ করত। গত ৭ এপ্রিল সকালে তাদের বাসায় তানিয়া লোকজন নিয়ে হাজির হলে সে জানতে পারে নিজাম বিবাহিত ও তার দুইটি সন্তান আছে। ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, অভিযোগের পর সোমবার রাতে আগ্রাবাদ মিস্ত্রী পাড়ার গ্যারেজ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
একই সময়ে পুলিশের আরেকটি দল পশ্চিম মাদারবাড়ি ল্যাংটা ফকির মাজার গলির নিজামের বাসা থেকে তার স্ত্রী তানিয়া, পশ্চিম মাদারবাড়ি ১ নম্বর গলি থেকে সোনিয়া ও তার স্বামীকে যুগী চাঁদ মসজিদ এলাকা থেকে ফিরোজা বেগম ও এনায়েত বাজার এলাকা থেকে পপি বেগমকে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে, নারী ও শিশু নির্যাতন ও তথ্যপ্রযুক্তি আইন ও দন্ডবিধির ৪৬৫ ধারায় মামলা হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর মেয়েটিকে পরিবারের কাছে দেওয়া হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ