বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নিমন্ত্রণে এসপির বাসভবনে আসেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি একেএম শামীম ওসমান। এ সময় দুইজন এক টেবিলে বসে পান্তা-ইলিশ খান। রোববার বেলা পৌনে ২টায় এসপির বাংলোয় যান এমপি শামীম ওসমান। এমপির আগমনে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
পরে এসপির বাসভবনের ভেতরে এক টেবিলে খেতে বসেন এমপি শামীম ওসমান ও এসপি হারুন অর রশীদ। এ সময় অতিথিকে খাবার পরিবেশন করে দেন এসপি। খাওয়া শেষে বেলা আড়াইটার দিকে চলে যান শামীম ওসমান।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, জেলা আদালতের পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল প্রমুখ।
কয়েকদিন ধরে জেলাজুড়ে আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। দুই প্রান্ত থেকে দুই পক্ষই করেছেন আকার-ইঙ্গিতে বাকযুদ্ধ। তবে এবার সেই মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে ভাটা পড়েছে, গলেছে বরফ। এক টেবিলে খেতে বসেছেন আলোচিত দুই ব্যক্তি।
আজকের এই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পয়লা বৈশাখ ১৪২৬ উপলক্ষে জেলা পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ষবরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বাঙালি খাবারের আয়োজন করা হয়। যেখানে ছিল পান্তাভাত, ইলিশ মাছ ভাজা, বিভিন্ন রকম ভর্তা, ফল, চটপটি ও কফির আয়োজন।
এতে অংশ নেন এমপি শামীম ওসমানও। উপভোগ করেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি। দুপুর সোয়া ২টার দিকে এক টেবিলে বসেই খাবার খান পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ ও এমপি শামীম ওসমান। এ সময় শামীম ওসমানের পাশেই উপস্থিত ছিলেন পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন।
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজামের বিরুদ্ধে জিডি ও শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুকে জড়িয়ে নানা অভিযোগে উত্তপ্ত ছিল নগরী। নারায়ণগঞ্জে পুলিশ প্রশাসন ও ওসমান পরিবারের দ্বন্দ্বের বিষয়টি এখন টক অব দ্য টাউন। এসপি হারুন সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
গত ৬ এপ্রিল নগরের ইসদাইরে অবস্থিত বাংলা ভবন কমিউনিটি সেন্টারে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে নেতা-কর্মীদের নিয়ে জরুরি কর্মিসভায় শামীম ওসমান এসপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘শাহ নিজামের (নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক) বিরুদ্ধে জিডি করবেন। টিটুর (শামীম ওসমানের শ্যালক) বিরুদ্ধে মদ স্লাপাইয়ের মামলা দিয়েছেন বলে আমি ভয় পেয়ে গেছি। মানুষ পোশাকধারী সন্ত্রাসীকে দেখতে চায় না। মশা মারতে কামান দাগাতে চাই না। আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে টের পাইবেন।’
ওই দিনই এসপি হারুন পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারি দেন, ‘মাদক, সন্ত্রাস ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। অপরাধী যত বড় আর শক্তিশালী হোক না কেন, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ দুজনের এমন কথার সপ্তাহখানেকের মধ্যেই এসপির বাংলোয় কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গেলেন সাংসদ।
প্রসঙ্গত, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ যোগদানের পর ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর পুলিশের ব্যবহৃত ওয়্যারলেস সেট (বেতারবার্তা) দিয়ে গোপন নির্দেশনা ও তথ্য ফাঁস করার অভিযোগে সাংসদ শামীম ওসমানের দেহরক্ষী কনস্টেবল মামুন ফকিরের কাছ থেকে ওয়্যারলেস সেট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। চলতি বছরের মার্চে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে সাংসদের ছেলে অয়ন ওসমানের সঙ্গে কক্সবাজারে থাকার দায়ে দেহরক্ষী মামুন ফকিরকে কিশোরগঞ্জে বদলি করা হয়। এরপর শামীম ওসমানকে দেহরক্ষী দেওয়া হলেও তিনি তা এখনো নেননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।