পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রংপুর বিভাগের তিন জেলার প্রায় পাঁচ লাখ কৃষককে এবার বোরো জমিতে সেচ নিয়ে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প থেকে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের কারণে তারা এ সুফল পেয়েছেন। এর সাথে যোগ হয়েছে অসময়ের বৃষ্টি। তাতে শেষের দিকে কৃষকদের সেচ প্রকল্প থেকে আর পানি নিতে হয়নি। এতে তাদের খরচও কমে এসেছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবি) নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ইনকিলাবকে বলেন, গত ১০ বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ সেচের পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। এতে করে এবার আবাদি জমির পরিমান বেড়েছে ৯ হাজার হেক্টরেরও বেশি। পাশাপাশি এবার ফলনও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
পাউবি রংপুরের কর্মকর্তারা জানান, এ সেচ প্রকল্প তিস্তা নদীর পানি প্রাপ্তির ওপর নির্ভরশীল। ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত নদীতে পানি প্রায় ২০০ থেকে ৪০০ কিউসেকের মধ্যে নেমে আসায় সেচ প্রকল্পও সংকটে ছিল। গত বছর থেকে সে ধরনের কোনো সংকট নেই। এছাড়া খাল সংস্কার করায় পানি সরবরাহে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। কর্মকর্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, এবার আউশ মৌসুমেও কোনো সমস্যা হবে না।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বড়বিল এলাকার কৃষক জমির উদ্দিন এবার ১ একর ২৫ শতক জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। এ জমিতে ধান আবাদে সেচ বাবদ তাকে তেমন কোনো টাকা খরচ করতে হয়নি। অথচ বছর দুয়েক আগে সেচ বাবদ তার ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হতো। একইভাবে সেচের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি পেয়েছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার চরাইখোলা ইউনিয়নের কৃষক মতি জোরদার। সেচের পানি নিয়ে সংকট না থাকায় এখন তিনি আউশ ধান আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রংপুর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ মৌসুমে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের পানি দিয়ে তিন জেলার ১৩টি উপজেলায় ৪০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হয়েছে, যা আগের মৌসুমের চেয়ে ৯ হাজার ৪০০ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে রংপুর জেলায় আট হাজার হেক্টর, নীলফামারী জেলায় ২২ হাজার হেক্টর এবং দিনাজপুর জেলায় সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হয়েছে। ২০১৭-১৮ মৌসুমে এসব জেলায় ব্যারেজের পানি দিয়ে সেচ দেয়া হয়েছিল ৩১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। তিন জেলার যেসব উপজেলায় ব্যারেজের পানি দিয়ে সেচ দেয়া হচ্ছে, সেগুলো হলো রংপুর সদর, গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ, নীলফামারীর সদর, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ ও সৈয়দপুর এবং দিনাজপুরের চিরির বন্দর, খানসামা ও পার্বতীপুর।
সৈয়দপুর কামারপাড়া ইউনিয়নের কৃষক মোতালেব সরকার বলেন, চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি পাচ্ছি। তাই বোরো মৌসুমে কোনো পানির সংকট হয়নি। আশা করি, আগামী আউশ মৌসুমেও পানি সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। তিনি জানান, একরপ্রতি তিস্তা ব্যারেজের পানি দিয়ে সেচ দিতে সার্ভিস চার্জ বাবদ খরচ হয় ৪৮০ টাকা। অন্য উৎস থেকে পানি নিতে এর কয়েক গুণ বেশি টাকা দিতে হয়।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ মৌসুমে রংপুর, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলায় মোট ৩ লাখ ৮৯ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর জেলায় ১ লাখ ৩০ হাজার ৮৭০ হেক্টর, নীলফামারীতে ৮৩ হাজার ৬৪৫ হেক্টর এবং দিনাজপুরে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। টানা দুই মৌসুমে তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প থেকে নিরবচ্ছিন্ন পানি পাওয়ায় এসব জেলায় সেচের ভোগান্তি কমে এসেছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে অসময়ে বৃষ্টি এই অঞ্চলের কৃষকদের শেষ মুহূর্তের সেচের সুবিধা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পানি দরকার না হওয়ায় অনেকে তাদের জমিসংলগ্ন খালের পানি বন্ধ করে দিয়েছেন। কৃষকরা জানান, ২০১৩ সাল থেকে টানা ছয় বছর তিস্তা ব্যারেজ থেকে পানি না পাওয়ায় সেচের জন্য তাদেরকে বিকল্প উৎস খুঁজতে হয়েছে। এবার আর সে কষ্ট পোহাতে হয়নি। এবার শুরু থেকেই পানি মিলছে।
পাউবোর একজন কর্মকর্তা জানান, তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পটি (প্রথম পর্যায়) ১৯৯৪-৯৫ মৌসুম থেকে চালু রয়েছে। মূলত এটি শুষ্ক আমন মৌসুমে সেচ (সম্পূরক) দেয়ার জন্য নির্মাণ করা হয়। পরে কৃষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বোরো মৌসুমেও সেচের কার্যক্রম বর্ধিত করা হয়। চারটি বিভাগের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কৃষকদের পানি নিতে মৌসুমপ্রতি একরে খরচ হয় মাত্র ৪৮০ টাকা। তাও ২০ শতাংশ আদায় হয় না। অন্যদিকে বিএমডিএ ও বিএডিসির পানি নিতে প্রতি একরে কৃষকদের খরচ হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা।
পাউবো রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, এ বছর কৃষকরা যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে বোরো মৌসুমে পানি পান, সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রধান খাল, উপখাল ও শাখা খালের কিছু সংস্কার করা হয়েছে। ফলে বোরো মৌসুমে পানি নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ ছিল না। তিনি বলেন, এবার অসময়ে বৃষ্টিতে কৃষকের উপকার হয়েছে। শেষের দিকে তাদের আর প্রকল্প থেকে পানি নিতে হয়নি। কৃষকরা পানি না নেয়ায় আমরা সেই পানি তিস্তা নদীতে ফেলেছি। এতে করে তিস্তা নদীর পানিও এবার তুলনামূলক বেড়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।