Inqilab Logo

বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

জয়পুরহাটে বেপরোয়া বাস উল্টে খাদে : নিহত ৮

সোনারগাঁয়ে দায়িত্বরত এসআইসহ নিহত আরো ৩

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বগুড়া থেকে যাত্রী নিয়ে জয়পুরহাটের উদ্দেশে মীর পরিবহন বাসটি ছেড়েছিল গতকাল দুপুর দেড়টায়। তিনকিলোমিটার পথ অতিক্রম করা বাসটি স্বাভাবিকভাবে চললেও গতি ছিল বেপরোয়া। যাত্রীরা বারবার ধীরে চালানোর তাগিদ দিলেও পাত্তা দেইনি চালক। বাসস্ট্যান্ড থেকে ৩ কিঃমিঃ দুরে বানিয়াপাড়া নামক স্থানে আসার পর বাসটি পুলিশ বক্সের নিকট একটি ছোট ব্রীজ অতিক্রম করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পার্শ্বে খাদে পড়ে উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলে তিনশিশুসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হয়ে ২৬ জন । আহতদের জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি আছে। ৯ জনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বন্দর মালিবাগ এলাকায় দায়িত্বরত অবস্থায় কাঁচপুর হাইওয়ে থানার এসআই ফরিদ আহাম্মেদকে চাপা দেয় যন্ত্রদানব কাভার্ডভ্যান। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এছাড়া হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে সিএনজিচালিত অটোরিকশার পেছনে ট্রাকের ধাক্কায় এক ব্যবসায়ী ও মেহেরপুরের গাংনীতে ট্রাকচাপায় এক কৃষক নিহত হয়েছেন। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন : 

জয়পুরহাট থেকে আবু মুসা জানান, জয়পুরহাট সদরের নিহত ৮ জনের মধ্যে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর গ্রামের সামসুদ্দিনের স্ত্রী জাকিয়া (৬০), কড়িয়া গ্রামের হুমায়ুন কবিরের ৭ মাসের শিশুকন্যা হুমাইদা, কালাই উপজেলার পাঁচশিরা গ্রামের আবু বক্করের স্ত্রী হেনা পারভীন (৪৫), গাইবান্ধা জেলার আমবাড়ির আব্দুল জলিলের মেয়ে শারমিন (১৭), রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার আলামপুর গ্রামের দিলীপ মুর্মুর শিশুকন্যা রীপা মুর্মু (৩)। এ ঘটনায় আহত হয়ে ২৬ জন ।
ঘটনাস্থল ঘুরে জানা গেছে, বগুড়া থেকে জয়পুরহাটের দিকে আসা যাত্রীবাহী বাস মীর পরিবহন (এমপি) (ঢাকা-মেট্রো-জ-০৪-০৩৫০) বাসটি বাসস্ট্যান্ড থেকে ৩ কি:মি: দূরে বানিয়াপাড়া নামক স্থানে পুলিশ বক্সের নিকট নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পার্শ্বে খাদে পড়ে উল্টে যায়। এসময় ঘটনাস্থলেই ৩ শিশুসহ ৮ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে ৫ জন মহিলা ও ৩ জন শিশু। ৩ শিশুর মধ্যে ২ জন মেয়ে ও ১ জন ছেলে। বাসের আহত যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাসটি ব্রীজ পার হবার সময় হঠাৎ করেই উল্টে যায়। দ্রæত গতি থাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পার্শ্বে খাদে পড়ে উল্টে যায়।
জয়পুরহাট সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মোমিনুল হক জানান, আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত নিহত ৩ জনের পরিচয় জানা যায়নি। এ ঘটনায় গাড়ীর ড্রাইভার ও হেলপার এখন পর্যন্ত পলাতক আছে। জয়পুরহাটে হঠাৎ করে দুপুর বেলায় একসঙ্গে ৮ জন মারা যাওয়ার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া পড়েছে। জেলার সর্বত্রই এখন একই আলাপ চলছে।পুরো জেলাবাসী শোকে কাতর।
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁ সংবাদদাতা জানান, দায়িত্বরত অবস্থায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বন্দর মালিবাগ এলাকায় কাঁচপুর হাইওয়ে থানার এসআই ফরিদ আহাম্মেদ কাভার্ডভ্যান চাপায় নিহত হয়েছেন। গতকাল ভার ৫টায় এ ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত এসআইয়ের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা মর্গে প্রেরণ করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ ঘাতক কাভার্ডভ্যানটি আটক করলেও চালক পালিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, রাত থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছিলেন এসআই ফরিদ আহাম্মেদ। গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ এলাকায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমী স্নান উৎসব উপলক্ষে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় বন্দরের মালিবাগ ক্যাসেল এলাকায় যানজটে আটকে যাওয়া এক ট্রাকের চালক গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েন। এতে যানজট আরও তীব্র আকার ধারণ করতে থাকে। পরে যানজট নিরসনে ফরিদ আহাম্মেদ পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হয়ে ঘুমিয়ে থাকা ওই ট্রাকচালককে ডেকে তুলেন ও গাড়ি চালানোর জন্য অনুরোধ করেন। পরে ওই ট্রাকচালক গাড়ি চালানো শুরু করলে পেছন থেকে একটি কাভার্ডভ্যান (এমকে এন্টারপ্রাইজ, ঢাকা মেট্টো-ট-১৮-৭০৪০) এসআই ফরিদ আহম্মেদকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। নিহত এসআই ফরিদ আহম্মেদের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানার ঘেরারু এলাকায়। তার বাবার নাম মানিক জমাদ্দার।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাইয়ুম সরদার বলেন, শুক্রবার ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বন্দর মালিবাগ এলাকায় যানজট নিরসনে দায়িত্ব পালন করার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় এসআই ফরিদ নিহত হয়েছেন। পুলিশ ঘাতক কাভার্ডভ্যানটিকে আটক করলেও চালক পালিয়ে যায়। তবে এ ঘটনায় থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।
হবিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে গতকাল সিএনজিচালিত অটোরিকশার পেছনে ট্রাকের ধাক্কায় আরফাজ আলী (৬০) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন। নিহত আরফাজ ওই উপজেলার ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নের বিশাউড়া গ্রামের বাসিন্দা। গুরুতর আহতরা হলেন- বিলাল মিয়ি (৩৫), মর্জিনা বেগম (২৮), ইমন মিয়া (২৫) ও তৌহিদ মিয়া (৪০)। শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন আহত পাঁচ যাত্রীকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
মেহেরপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, মেহেরপুরের গাংনীতে গতকাল ট্রাকচাপায় সিদ্দিক হোসেন (৬০) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। নিহত সিদ্দিক হোসেন হাড়িয়াদহ গ্রামের মৃত আবুল মন্ডলের ছেলে। ট্রাকটি হেলপার চালানোর কারণে এ দুর্ঘটনা বলে জানান স্থানীয়রা। ট্রাক ও হেলপার জহুরুলকে আটক করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, চালকের অনুপস্থিতিতে হেলপার জহুরুল ট্রাক চালাচ্ছিলেন। অদক্ষ হাতে ট্রাক চালানোয় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। গাংনী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ট্রাক, হেলপার জহুরুল ও লাশ পুলিশ হেফাজতে নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিহত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ