Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষকরা আশা-যাওয়া করেন জমির আইল দিয়ে

সড়ক সঙ্কটে নিকলীর গ্রামীণ জনপদ

নিকলী (কিশোরগঞ্জ) থেকে মো. হেলাল উদ্দিন | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

হাওর অঞ্চল হিসাবে খ্যাত কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার দুর্গম এলাকা সিংপুর ইউনিয়নের ধনু নদীর তীরের ডুবি গ্রাম। এ গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা প্রতিদিন ক্ষেতের আইল দিয়ে কাঁদা মাটি ভেঙে কখনো জলাধারের পানিতে জামা-কাপড় ভিজিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে হয়। শিক্ষকদের এ সংগ্রাম দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এ সব সংগ্রামী শিক্ষকদের স্বপ্ন হাওর এলাকায় উন্নয়ন। একদিন হয়তো হাওরের বুকচিরে তাদের আসা যাওয়ার সড়কটি দৃশ্যমান হবে। ডুবি গ্রাম হতে উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ২৫ কি.মি.। নদী পথ ছাড়া এ এলাকার মানুষের অন্য কোনো সড়ক নেই। ডুবি গ্রামে রয়েছে দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অপরটি ডুবি শরিয়ত উল্লাহ দাখিল মাদরাসা। বর্ষা মৌসুমে নৌকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করেন। শুকনো মৌসুমে হেটে। গ্রামে কোন কাঁচা বা পাকা রাস্তা না থাকায় ধানের জমির আইল দিয়ে শিক্ষকগণ বিদ্যালয়ে এসে পাঠদান করেন।
এলাকার সড়ক নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষদের সাথে কথা হলে তারা ইনকিলাবকে বলেন, যে আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি করিমগঞ্জের সুতারপাড়া হয়ে গাংগাটিয়া কিশোরগঞ্জ সংযোগ সড়ক। এ সড়কটি নির্মাণ হলে গ্রামের মানুষেরা সহজে জেলা সদর ও সদ্যনির্মিত রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সড়ক দিয়ে উপজেলা সদরে যাতায়াত সহজ হবে। রাস্তাটি নির্মাণ হলে এ এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে, কম খরচে মালামাল, কৃষিপন্য পরিবহন ও ধান-চাল রপ্তানি সহজ হবে। গড়ে উঠতে পারে হাওরে পর্যটক কেন্দ্রও।
সড়ক নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে, ডুবি মাদরাসার দশম শ্রেণীর আকরাম, নবম শ্রেণীর নুরে রাফিয়া, অষ্টম শ্রেণীর ইমরান, ৬ষ্ট শ্রেণীর বর্ষা বলেন- আমরা যখন বর্ষায় নৌকায় মাদরাসায় আসি প্রায় সময় আমাদের বইখাতা কলম পানিতে হারিয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, কিশোগঞ্জের নিকলী উপজেলার দুর্গম এলাকা সিংপুর ইউনিয়নের ডুবি গ্রাম। এ গ্রামের মানুষদের উপজেলা সদরে যাওয়ার কোন সড়ক নেই। নৌকায় যাতায়াত করতে হয়। এতে করে দুর্ভোগের অন্ত নেই। এ এলাকাবাসীর হটাৎ কোন বড় সমস্যা দেখা দিলে উপজেলা সদরে যাওয়ার উপায় থাকে না। গর্ভবতী মায়ের ডেলিভারি ব্যাথার সময় হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয় না।
ডুবি হতে উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ২৫ কি.মি.। নৌ পথে নিকলীতে আসতে যে সময় খরচ হয়, সড়ক পথ থাকলে অনেক কম সময়ে উপজেলা পৌঁছা যেত।
দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা আমিনুল ইসলাম ইনকিলাকে বলেন, আমাদের এ গ্রামের সাথে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের সাথে সংযোগ সড়ক না থাকায় সময়মতো আমরা অনেক কাজ কর্ম করতে পারি না।
এলাকার রাস্তা নিয়ে মোঠফোনে কথা হয় নিকলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ এম রহুল কদ্দুস ভুঞা জনি’র সাথে। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন দেখে ছিলেন তা বাস্তবায়নের লক্ষে নিকলী-বাজিতপুরের সংসদ সদস্য আলহাজ আফজাল হোসেনের সহযোগিতায় ডুবির জনমানুষের সার্বিক উন্নয়নে উপজেলা সদরে যাওয়ার জন্য সুতারপাড়া নদীর পাড় হতে একটি সড়ক নির্মাণের চেষ্টা করবো।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহমান মহিমের সাথে মোঠফোনে কথা হলে তিনি জানান, সিংপুর ইউনিয়নের ডুবি গ্রামে আপাদত নতুন কোন রাস্তার প্রকল্প আমাদের হাতে নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ