পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উন্নয়ন কাজে অধিগ্রহণ করা জমির মালিকদের দ্রুত অর্থ বুঝিয়ে দেয়ার প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা থাকলেও রাজউক ও ডিসি অফিস তা যথাযথভাবে কার্যকর করছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৯ এপ্রিল একনেক বৈঠকে জমির মালিকদের টাকা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেন। বাস্তব পর্যায়ে সে নির্দেশনা কার্যকর হচ্ছে না।
জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, অধিগ্রহণের ফলে ভূমি মালিকরা সহজে যাতে ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে পারেন সে জন্য কাজ করছি। পুরনো অনেক আইনকানুন-বিধি পরিবর্তন কিংবা পরিমার্জন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা সরকার তিন গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। ভূমি সচিব মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারী ইনকিলাবকে বলেন, জমি অধিগ্রহণের টাকা নিয়ে যারা দুনীতি করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যস্থা নেয়া হচ্ছে। ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। এ শাখা থেকে ঘুষ-দুর্নীতি, জালিয়াতি ও হয়রানি নির্মূলের জন্য সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এবং রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, পটুয়াখালীর, সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুরপাবনাসহ বিভিন্ন জেলায় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এস উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের পর রাজউক-জেলা প্রশানের উদাসীনতায় ভুমির মালিকরা টাকা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে ঢাকার হাতিরঝিল-তেজঁগাও এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ কিন্তু জমি অধিগ্রহণের টাকা এখনো পাননি জমির অনেক মালিক।
এছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং ঢাকা জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তহীনতায় অভাবে রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পের মতো গুলশান-বনানী-বারিধারার লেক উন্নয়ন প্রকল্প কাজ প্রায় অচল হওয়ার উপকৃম। অথচ লেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু না হতেই ইতোমধ্যে ৪১৪ কোটি টাকা ব্যয় করেছে রাজউক। প্রকল্পের কাজ শুরু না হতেই ৪১৪ কোটি টাকা ব্যয় করেছে রাজউক।
এদিকে মামলা, হামলা আর অভিযোগসহ নানা অঘটনের পরও ঢাকা, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় অনিয়ম-দুর্নীীত থেমে নেই। এত কিছুর পরও জমির মালিকেরা এখনও অসহায়। তাই অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালাল সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে আছে জমির মালিকেরা। জমির মালিকদের জিম্মি করে কমিশনের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডিকেট। প্রকাশ্যে এই কমিশন বাণিজ্য চললেও জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী জমি মালিকদের। কিন্তু ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে শুধুমাত্র একটি অংশ। এই সংখ্যা বেশি হলে ১০ শতাংশ হবে। বাকি ৯০ শতাংশ মানুষ কোনো ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, অধিগ্রহণের ফলে ভূমি মালিকরা বিভিন্নভাবে ক্ষতির শিকার হন, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সহজে যাতে ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে পারেন সে জন্য কাজ করছি। পুরনো অনেক আইনকানুন-বিধি পরিবর্তন কিংবা পরিমার্জন করা হয়েছে। যে সকল প্রকল্পে এখনো কাজ শুরু হয়নি তাদের তিন গুলোর ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আগে জমির মালিকদের ক্ষতিপূণ টাকা পরে কাজ। ঢাকায় আমরা সে ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে। ভূমিমালিকদের হাতে যেন ক্ষতিপূরণের টাকা পৌঁছানের সব রকম ব্যবস্থা আমরা করব।
ভূমি সচিব মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারী ইনকিলাবকে বলেন, জমি অধিগ্রহণের টাকা নিয়ে যারা দুনীতি করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যস্থা নেয়া হচ্ছে। দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলে ভূমি ব্যবস্থাপনায় সু-শাসন নিশ্চিত করা সম্ভব। গতকাল থেকে সারাদেশে ভূমি সপ্তাহ ও ভূমি উন্নয়ন কর মেলা শুরু করা হয়েছে।
রাজধানীর জোয়ারসাহারা, বিশ্বরোড ও কুড়িল এলাকার শত শত ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিক বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন না। ভূমি অগ্রিহণ শাখায় ঘুরতে ঘুরতে তাঁরা সর্বস্বান্ত। অনেকের বাড়িঘর অধিগ্রহণের ফলে তাঁদের ভাড়া বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় তাঁরা বাসাভাড়া পর্যন্ত পরিশোধ করতে পারছেন না। ধারদেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। অথচ ক্ষতিপূরণের প্রায় দেড়/ দুই হাজার রকোটি টাকা অলস পড়ে আছে। বর্তমান উত্তরার সাত নম্বর সেক্টর বাসিন্দা মোহর আলী মারা গেছেন ২০০ বিঘা জমির মালিক ছিলেন, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণের শিকার হয়েছেন। নানা জটিলতা, জালিয়াতি, হয়রানির কারণে যুগ যুগ ঘুরেও ঢাকা জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝে পায়নি তার পরিবার।
ঢাকা, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় গিয়ে অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা জানা গেছে। ডিসি আফিসে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, হয়রানি আর ঘুষ বাণিজ্যের ঘটনা ওপেন সিক্রেট। এসব দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে প্রতিবাদকারীদের হয়রানী করা হয়। প্রশাসনের হয়রানীতে তাদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। অনেকের জীবন বিপন্নও হয়। দেশের প্রতিটি জেলায়ই ভূমি মালিকদের হয়রানি করার একটি সাধারণ নিয়ম পরিণত হয়েছে। সেটা হলো একটি জমির মালিকানা কয়েকবার পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক। তবে সর্বশেষ দলিলগ্রহীতা, নামজারি ও দাখিলা প্রদানকারীই হলেন জমির প্রকৃত মালিক।
ঢাকা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার ‘অপকর্মে’ তাঁদের মানসম্মান ধুলায় মিশে যাচ্ছে। এতটা নোংরাভাবে সেখানে ঘুষ আদায় করা হয়, তা সত্যি নজিরবিহীন। নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুষ না দিলে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের বছরের পর বছর হয়রানি করা হয়। তবে বর্তমান ডিসি এসে এ গুলো পরির্বতন করেছেন।
জোয়ারসাহারা খাঁ পাড়ার আলম খান বলেন, ‘তিন শতাংশ জমির মালিকানা সংক্রান্ত একটি মামলার কারণে পুরো এলাকার ভূমি মালিকদের কপাল পুড়ছে। কয়েক বছর ধরে ঘোরাঘুরি করেও পাওনা পাচ্ছেন না। নগরীর হাতিরঝিল, ৩০০ ফুট সড়ক, জোয়ারসাহারা, খিলক্ষেত, উত্তরা এলাকার ক্ষতিগ্রস্তরা আক্ষেপ করে বলেন, আগুনে পুড়লেও ছাই পাওয়া যায়। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ হলে কিছুই পাওয়া যায় না। রেলপথ, বেড়িবাঁধ, উত্তরা মডেল টাউন, বিমানবন্দর, ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড নির্মাণের অজুহাতে তাঁদের সব জমিজমা সরকার অধিগ্রহণ করে নেয়। ফলে তাঁরা নিজস্ব বাগানবাড়ি, কবরস্থান, ফলের বাগান, সবজিবাগান এবং ধানি জমি হারিয়েছেন। কিন্তু এসবের ক্ষতিপূরণের যৎসামান্য অর্থ ছাড়া সিংহভাগ টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ক্ষতিপূরণের জন্য ঘুরতে ঘুরতে তাঁদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেছে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার অসাধু কর্মকর্তা ও দালালরা সক্রিয়। তাই ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে অপেক্ষা করতে হয় জমির মালিকদের। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক শায়লা ফারজানা বলেন, ৭ ধারায় নোটিশ করে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত জমির মালিকদেরই সঠিক বাজারমূল্যে ক্ষতিপূরণ েেদয়া হয়েছে। মাদারীপুরের পদ্মা সেতুর প্রকল্পে অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত করার কাজে প্রশাসনের কতিপয় কর্মচারীর অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত চলছে। এখনো কেনো কিছুই হয়নি। পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার এশিয়ার বৃহত্তম বীজ বর্ধন খামারের অধিগ্রহণের টাকা পাচ্ছে না জমির মালিকরা। ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদনের পর একই বছরের ১ এপ্রিল কৃষি মন্ত্রনালয়ের প্রশাসনিক অনুমতি নিয়ে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হযেছে ২৪ হাজার ৪শ› ৯৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
জমির মালিক আব্দুস সাত্তার হাওলাদার ভুমি সচিবের কাঝে অভিযোগ পত্র জামা দিয়েছেন। দেশের বৃহত্তর কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, তরল গ্যাসের ডিপো স্থাপন ও বিশেষ বাহিনীর স্থায়ী বৃহৎ স্থাপনা নির্মাণের জন্য মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি, ধলঘাটা, কালামারছড়া ও হোয়ানকের চাষযোগ্য জমি অধিগ্রহণ করে জমি হুকুমদখল করেছে। মাতারবাড়ির ইউপি চেয়ারম্যান মো. উল্লাহ জানান, মাতারবাড়ি, হোয়ানক ও কালারমারছড়ার মানুষ পুরোপুরিই লবণ ও পানচাষের ওপর নির্ভর। ভুক্তোভোগীদের দাবি প্রধানমন্ত্রী দেশকে উন্নয়নের মহা সড়কে উঠিয়েছেন। সেটা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা দ্রুত কার্যকর করা হোক। অধিগ্রহণ করা জমির মালিকদের টাকা দিতে যারা গড়িমসি করছেন সেই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।