পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পারভেজ মৃধা সাজ্জাদ ওমরা হজ পালন শেষে দেশে ফিরে সপ্তাহের চাকা না ঘুরতেই বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুনে শেষ। তিনি আগুনে পুড়ে মারা যাননি। আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়া থেকে বাঁচতে নিচে নামার সময় রাস্তায় পড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
এফ আর টাওয়ারের ১১ তলায় কার্গো পরিবহন কোম্পানি স্ক্যানওয়েল লজিস্টিকসের সিনিয়র ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন পারভেজ। এক এক করে এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ১৫টি বছর পার করেছেন। কর্মস্থলে তিনি সবার কাছেই সাজ্জাদ ভাই নামে পরিচিত ছিলেন। মৃত্যুর আগে স্ত্রী ফাতেমা বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কয়েক মিনিট কথা বলতে পেরেছিলেন সাজ্জাদ।
ঘটনার সময় পারভেজ মৃধা সাজ্জাদ জোহরের নামাজ আদায় করে খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। প্রতিদিনের রুটিন অনুযায়ী সহকর্মীদের খাবারের জন্য ডাকেন। তিনি সবাইকে এক সঙ্গে নিয়ে খাবার খেতে পছন্দ করতেন। সহকর্মীদের ডাক দিয়ে রোজ ফিরতি জবাব পেতেন, ‘আসছি সাজ্জাদ ভাই’। ওই দিন তিনটি পরিচিত শব্দ তিনি শুনতে পাননি।
অফিসের সবাই ছুটোছুটি করছে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডর মধ্যে সাজ্জাদ ভয়ঙ্কর খবর শুনে একেবারে হিম হয়ে যান। অফিস ১১ তলায়। নিচ থেকে আগুন দাউ দাউ করে উপরের দিকে আসছে। সে সঙ্গে কালো ধোয়ায় ভবনের সিড়ি অন্ধকার হয়ে গেছে। আর রুমের অভ্যন্তরে ধোয়া ঢুকে যাওয়ায় যে যার মতো জীবন বাঁচাতে ছুটোছুটি করছেন। দুপুরের খাবারের দিকে কারো নজরই নেই। সবকিছু ফেলে নিরাপদে ১১ তলা থেকে বের হওয়ার জন্য অফিসের সবাই মোবাইল ফোনে বাইরে যোগাযোগ করছেন। লিফট কিংবা সিড়ি ব্যবহার করে নিচে নামা অথবা উপরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভবনের অভ্যন্তর একেবারে কালো ধোয়ায় ছেয়ে গেছে। সবারই শ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। জীবন বাঁচাতে পারবেন কিনা সে চিন্তায় সাজ্জাদ নিজেও অফিসের ভেতরে ছুটোছুটি করছেন। কিন্তু দ্রুত সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। অবস্থা বেগতিক দেখে স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে মোবাইল ফোনে ধরেন। স্ত্রীকে বলেন, ‘আমাদের ভবনে আগুন লেগেছে। এই মুহূর্তে আগুন দাউ দাউ করে জলছে। এখান থেকে বের হতে পারবো কি না জানি না। আমার জন্য দোয়া করো।’
মুহূর্তের মধ্যে সাজ্জাদ সিদ্ধান্ত নিলেন যে ভাবেই হোক ১১ তলায় আগুনে পুড়ে মরার চেয়ে জানালা দিয়ে বাইরে লাফ দেবেন। সহকর্মীদের কয়েকজন লাফ দিতে নিষেধ করেন। তাদের যুক্তি লাফ দিলে নিচে পড়ে মারা যাবেন। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন নিশ্চই তাদের সবাইকে ১১ তলা থেকে নিচে নামিয়ে নিবে।
সাজ্জাদ একেবারে মৃত্যুর কাছাকাছি অবস্থান করে দ্রুত বাঁচার জন্য ১১ তলার জানালার কাছে যান। তিনি ডিশ লাইনের তার দুই হাতে ধরে নিচে নামতে শুরু করেন। এফ আর টাওয়ারের নিচে ১৭ নম্বর সড়কে হাজার লোক এই দৃশ্য দেখছিল। একটু একটু করে তিনি ১১ তলা থেকে ৭ তলায় নেমে আসেন। এরপর নিচের দিকে নামতে গেলে ৭ তলার এসির বক্সের সাথে ধাক্কা লাগলে ডিশ লাইনের তারে ধরে রাখা দুই হাত ছুটে যায়। চোখের পলকে সাজ্জাদ নিচে পড়ে যান।
সঙ্গে সঙ্গে থকে লেগে নিচে এটিই ছিলো তার সাথে আমার শেষ কথা। তারপর থেকেই তার মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। । তার কানে পান এ সময় আগুন দেখে জীবনের শেষ সময় টুকু স্বজনদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন। আগুন থেকে জীবন বাঁচতে ডিশলাইনের কেবল বেয়ে নামার চেষ্টা করতে গিয়ে পড়ে যান সাজ্জাদ। ১১ তলা থেকে ৭ তলা পর্যন্ত নেমে এসির বক্সের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে মারা যান।
ভবনের নিচে জড়ো হওয়া লোকজন সাজ্জাদকে দ্রুত নিয়ে যান বনানী ১৫ নম্বর সড়কে বনানী ক্লিনিকে। চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন নিচে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হয়েছে। লাশ রাখা হয় ক্লিনিকের বারান্দায়। তার ছোট ভাই পারভেজ খসরু বলেন, দুপুরে মোবাইল ফোনে কথা বলার পর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বিকালে এক লোকের মাধ্যমে মৃত্যুর খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে বনানী ক্লিনিকের বারান্দায় ভাইয়ের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখি।
সাজ্জাদ ওমরাহ হজ পালন করে গত ২৫ মার্চ দেশে ফিরেন। আর ফিরেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন নিজের কর্মস্থলে। স্ত্রী ফাতেমা বেগম ও একমাত্র ছেলে সিয়ামকে নিয়ে তিনি ঢাকায় থাকতেন। সিয়াম রাজধানীর মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সাজ্জাদ ধার্মিক ও দয়ালু ছিলেন। অন্যকে সহায়তা করা তার অভ্যাস ছিল। গ্রামের মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করতেন। এলাকার মসজিদ, মাদরাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অনুদান দিয়েছেন। সমাজিক ও ধর্মীয় কাজের প্রতি তিনি ছিলেন নিবেদিত।
সাজ্জাদের এমন মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বলুগ্রাম। তার চলে যাওয়াকে গ্রামের লোকজন যেমন মেনে নিতে পারছেন না। তেমনি থামছে না স্ত্রী ও সন্তানের আহাজারি। স্ত্রীর কথা, সবে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে একমাত্র ছেলে। তার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঢাকা পড়ে গেল। আগুন সাজ্জাদকে নিয়ে গেছে। কিন্তু স্ত্রী ও সন্তানের জীবনকে অনিশ্চিত অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।