Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আশা জাগানো ইলিশ

৭৫ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

জাতীয় মাছ ইলিশ। ইলিশের উৎপাদন চলতি বছরে সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন অতিক্রম করতে পারে। গতবছর ইলিশ উৎপাদনের পরিমান ৪ লাখ মেট্রিক টনের কিছু বেশি। টানা দশ বছর ধরে ইলিশ উৎপাদন ঊর্ধ্বমুখী। যা ৪০ বছরের হিসাবে প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমানে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার ইলিশ-বাণিজ্য হচ্ছে। এরমধ্যে মাছের রাজা ইলিশের প্রত্যক্ষ বাজার মূল্য ৩৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বাদবাকি অর্থনৈতিক মূল্য ধরা হয় জেলে ও বিক্রেতাদের কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন উপখাত।
তবে নদ-নদী মোহনা সাগর উপক‚ল থেকে যে ইলিশ মাছ শিকার করা হয় তার প্রায় অর্ধেক অপরিণত বয়সের। তাছাড়া এখনও আড়ালে কিংবা প্রকাশ্যে ধরা হচ্ছে মা ইলিশ ও জাটকা। ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনে যাচ্ছে চোরাপথে। মূল্যবান সম্পদ ইলিশ চোরাচালান দমন, মা ও জাটকা নিধন রোধ, প্রজনন মৌসুমে ইলিশ শিকার পুরোপুরি বন্ধ থাকাটা নিশ্চিত হলে উৎপাদন বাড়বে কমপক্ষে দ্বিগুণ।
গত এক দশকে প্রতি বছরই ধারাবাহিকভাবে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনায় ইলিশ মৎস্যসম্পদ সুরক্ষা ও বৃদ্ধির নানামুখী উদ্যোগ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে প্রশাসনের নজরদারি, কর্মহীন সময়ে চাল বিতরণসহ গরীব জেলে-বান্ধব বিকল্প সহায়তা কর্মসূচির বাস্তবায়ন সুফল বয়ে এনেছে। এরফলে দেশের নদ-নদী ও সমুদ্র উপক‚লে ইলিশের বংশ বিস্তারের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
ইলিশ সম্পদ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. হোসেন জামাল গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেছেন, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি দেশের অর্থনীতির জন্য নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ও সুখবর। ইলিশের মূল্য অন্যান্য মাছের তুলনায় বেশি। পুষ্টিগুণ ও স্বাদে বাংলাদেশের ইলিশ অতুলনীয়। সরকারের উদোগে জাটকা ও মা ইলিশ শিকার রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে ইলিশ উৎপাদন বেড়ে গেছে। ডিমওয়ালা মা ইলিশ ঝাঁকে ঝাঁকে লোনা পানির সমুদ্র এলাকা ছেড়ে নদ-নদীর মিঠাপানিতে এসে কোটি কোটি ডিম ছাড়ে। সেই ডিম-রেণু-পোনা থেকে জাটকা ইলিশে পরিণত হয়ে পুনরায় সমুদ্রে চলে যায়। সেখানে হৃষ্টপুষ্ট ও বড় হতে থাকে। এ সময় কোনো না কোনোভাবে শিকার কিংবা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হলে ইলিশ প্রজনন এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
তিনি বলেন, ইলিশ সুরক্ষায় আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রকৃতির উৎস থেকে মাছ শিকারে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা থাকতে হবে। কেননা আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও তাদের জন্য খাদ্য-শৃঙ্খল তৈরি করে দিয়েছেন। তা ব্যাহত করা যাবে না। ইলিশ উৎপাদন আরও বেশি হলে আমরা বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। এরফলে দেশের অর্থনীতি সুসমৃদ্ধ হবে।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, পৃথিবীতে আহরিত ইলিশের ৬৫ শতাংশই বাংলাদেশের। আবার দেশের নদ-নদী উপক‚লে আহরিত মাছের ১২ শতাংশ ইলিশ। ইলিশ সুরক্ষায় জাটকা ও মা মাছ শিকার রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বিগত ২০০৮-০৯ সাল থেকে ইলিশের উৎপাদন ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। ২০০৮-০৯ সালে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৯২১ টন, ২০০৯-১০ সালে ৩ লাখ ১৩ হাজার টন, ২০১০-১১ সালে ৩ লাখ ৪০ হাজার টন, ২০১২-১৩ সালে ৩ লাখ ৫১ হাজার টন, ২০১৩-১৪ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার টন, ২০১৪-১৫ সালে ৩ লাখ ৮৫ হাজার এবং ২০১৫-১৬ সালে ৩ লাখ ৯৮ হাজার টন, ২০১৬-১৭ সালে ৪ লাখ টন, ২০১৭-১৮ সালে ৪ লাখ ৮ হাজার টন ইলিশ আহরণ করা হয়। চলতি ২০১৮-১৯ সালে সাড়ে ৪ লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞ মহল আশাবাদী, ইলিশ সুরক্ষায় আরও সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে বার্ষিক উৎপাদন ৫ থেকে ৬ লাখ টনেরও বেশি হবে। অর্থনৈতিক মূল্য এক লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করবে।
এদিকে পয়লা বৈশাখে শহর-নগরে ইলিশের আস্বাদ গ্রহণের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এ চাহিদাকে পুঁজি করে কতিপয় অতিলোভী মৎস্য আড়তদার ও ফড়িয়া চক্রের প্ররোচনার কারণে সাধারণ জেলেদের একাংশ সমুদ্র উপক‚লে অপরিণত বা জাটকা ইলিশ ও মা মাছ নির্বিচারে নিধন করছে। আবার সেই আহরিত মাছের একটি বড় অংশ পাচার হয়ে যাচ্ছে ভারত, শ্রীলংকা ও মিয়ানমারে।
এতে করে ইলিশের স্বাভাবিক প্রজনন ও উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। অথচ পয়লা বৈশাখের ডামাডোলকে ঘিরে অসাধু চক্রের প্রলোভনের কারণে কিছু সংখ্যক দরিদ্র জেলের নীরবে জাটকা ও মা ইলিশ শিকার বন্ধে এ মুহূর্তে তেমন কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। গত কয়েকদিন যাবৎ বাজারে জাটকা ও ডিমওয়ালা মা ইলিশ প্রকাশ্যে বেচাকেনা হতে দেখা যাচ্ছে। হতদরিদ্র জেলেদের বিকল্প আয়-রোজগার ও সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।



 

Show all comments
  • Farjana ১০ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:৩৩ এএম says : 0
    ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি দেশের অর্থনীতির জন্য নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ও সুখবর।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Elias ১০ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:৩৩ এএম says : 0
    এত হতাশার মাঝে এখটা ভালো খবর শুনে খুব ভালো লাগতেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Saiful Islam ১০ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:৩৪ এএম says : 0
    ইলিশ সুরক্ষায় আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রকৃতির উৎস থেকে মাছ শিকারে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Golam Murshed ১০ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:৩৫ এএম says : 0
    আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও তাদের জন্য খাদ্য-শৃঙ্খল তৈরি করে দিয়েছেন। তা ব্যাহত করা যাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Joynal Abedin ১০ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:৩৫ এএম says : 0
    Thanks a lot for this report
    Total Reply(0) Reply
  • Tikku Zaman ১০ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:৩৬ এএম says : 0
    ইলিশ উৎপাদন আরও বেশি হলে আমরা বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। এরফলে দেশের অর্থনীতি সুসমৃদ্ধ হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইলিশ

২০ নভেম্বর, ২০২২
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ