Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুশাসন স্বচ্ছতা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ উন্নয়ন

ঢাকা-ওয়াশিংটন বৈঠকে পম্পেও’র তাগিদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার উল্লেখ করে এদেশে সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উন্নয়নের তাগিদ দিয়েছেন। ওয়াশিংটন সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ তাগিদ দেন। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র মরগান ওরটাগাস এক বার্তায় জানান, বৈঠকে তারা দুই দেশের অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ সংক্রান্ত চলমান সহযোগিতা আরও বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন সফরে রয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। গত সোমবার স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ৯টা (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সোয়া ৭টা) থেকে ঘন্টাব্যাপী দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করেন।
ওদিকে ওয়াশিংটনের একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বৈঠকে পূর্ব নির্ধারিত এজেন্ডার অনেক কিছুই আলোচনা হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তা পরিস্থিতি, বাংলাদেশের ডিসেম্বরের নির্বাচন, নতুন সরকার, মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মূখপাত্রের বার্তায় বলা হয়, সেক্রেটারি অব স্টেট পম্পেও মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়াসহ বিপুল সংখ্যক ওই জনগোষ্ঠির প্রতি বাংলাদেশ যে সহমর্মিতা দেখাচ্ছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
একই সঙ্গে তিনি গুরুত্বারোপ করেন, কীভাবে দুই দেশ একত্রে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সঙ্গে মিলে কাজ করতে পারে শরনার্থী ও হোস্ট কমিউনিটির প্রতি সহায়তা আরো বাড়াতে। রোহিঙ্গা সংকটের চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি এবং মিয়ানমারের অবস্থানের বিষয়েও আলোচনা করেন তারা।
সেক্রেটারি অব স্টেট জোর দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি যেহেতু মিয়ানমারে তাই এর সমাধানে তাদেরকেই (মিয়ানমার) এগিয়ে আসতে হবে। অবশ্যই বাস্তুচ্যুতদের স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার জন্য রাখাইনে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মাকিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও বাংলাদেশকে ইন্দোপ্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার উল্লেখ করে এ দেশের সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উন্নয়নের তাগিদ দেন।
ওই বৈঠকের বিষয়ে ঢাকার তরফে আগেই জানানো হয়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওসহ দেশটির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সিরিজ বৈঠকের এজেন্ডা বেশ বিস্তৃত। সেখানে নিরাপত্তা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীর প্রত্যাবাসন, রোহিঙ্গা সংকট, ইন্দো-প্যাসিফিক, শ্রমঅধিকার, অভিবাসনসহ দুই দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ই থাকছে।
বাংলাদেশ মিশনের উপ-প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ বৈঠক চলাকালে (সন্ধ্যায়) জানান, ওই বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রিন্সিপাল ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এলিস জি ওয়েলস এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন। মোমেন-পম্পেও বৈঠকের জন্য ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারও এখন ওয়াশিংটনে।
বাংলাদেশ মিশন জানায়, ওই বৈঠকের পর স্টেট ডিপার্টমেন্টের তিন ব্যুরো প্রধানের সঙ্গে যৌথ বৈঠক করেন মন্ত্রী মোমেন। ব্যুরো তিনটি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরো; গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম বিষয়ক ব্যুরো এবং জনসংখ্যা, উদ্বাস্তু ও অভিবাসনবিষয়ক ব্যুরো। মন্ত্রীর সম্মানে দুপুরে প্রিন্সিপাল ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এলিস জে ওয়েলস ওয়ার্কিং লাঞ্চের আয়োজন করেন। সেখানে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অন্য কর্মকর্তারাও ছিলেন। বিকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপ-প্রধান চার্লস কুপারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন।
গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রী ড. মোমেন মার্কিন আইন প্রণেতা সিনেটর ক্রিস মারফি ও ইউএসএইডের প্রধান মার্ক গ্রিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ক্রিস মারফি সিনেটে দক্ষিণ এশিয়া ও কাউন্টার টেরোরিজম বিষয়ক উপ-কমিটির র‌্যাংকিং সদস্য। বাংলাদেশের বহুল আলোচিত ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর নব প্রতিষ্ঠিত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কোন প্রতিনিধির এটাই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর। তাছাড়া মন্ত্রী হিসাবেও মোমেনের এটা প্রথম ওয়াশিংটন সফর।
এদিকে বাংলাদেশে ভ্রমণবিষয়ক সতর্কতা জারির পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের ব্যাপারে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের বৈঠকে বিষয়টি আলোচিত হওয়ার কথাও জানিয়েছিল ঢাকা। কিন্তু এটি আদৌ আলোচনা হয়েছে কি না? বা কতটা আলোচনায় স্থান পেয়েছে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গত সপ্তাহে বাংলাদেশে ভ্রমণবিষয়ক সতর্কতা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের এক সভায় যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ সতর্কতা জারির সমালোচনা করেন। এ প্রেক্ষাপটে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান বিষয়টি ঢাকার অগ্রাধিকার। নিরাপত্তা উপ-প্রধান কুপারম্যানের সঙ্গে আলোচনায় এটি তোলার কথা। ওই কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য একটি চুক্তি সইয়ের প্রস্তাব পেয়েছে ঢাকা। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কোনও দেশকে বিস্তারিত তথ্য দিতে গেলে চুক্তি থাকতে হয়। অন্যথায় তারা কেবল প্রাথমিক তথ্য দিতে পারে বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মার্কিন

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ