Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

এসএমই ঋণ কমেছে সাত শতাংশ

উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে অনেক ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নতুন শিল্পের বিকাশের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা (এসএমই)। এ খাত সম্প্রসারণে সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তাই বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। তার পরও ঋণপ্রবাহ বাড়ছে না খাতটিতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত বছর দেশের এসএমই খাতে ব্যাংকঋণ কমেছে সাত শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে দেশের এসএমই খাতে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভ‚ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ২৪৫ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশের এসএমই খাতে ঋণ কমেছে ১৪ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটের অজুহাত তুলে গত বছর এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে অনেক ব্যাংক। এ সময় এসএমই খাতে ঋণ বিতরণের তুলনায় আদায় করাতেই মনোযোগ বেশি ছিল ব্যাংকগুলোর। ফলে মূলধনপ্রবাহ কমে সংকুচিত হয়ে পড়ছে এসএমই খাত। যদিও কয়েক বছর ধরেই বড় ঋণ গুটিয়ে এসএমই খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধির তাগিদ দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এর ভিন্ন চিত্র। এসএমইতে ঋণের স্থিতি সংকুচিত হয়ে আসার পরও ২০১৮ সালে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। এ সময় মূলত বৃহৎ শিল্পে মেয়াদি ঋণই বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। বিতরণের চেয়ে আদায় বাড়ার কারণেই এসএমই খাতে ঋণ স্থিতি কমেছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে বড় ঋণের তুলনায় এসএমই ঋণ আদায়ের হার বেশি। এ কারণে এসএমই খাতে ঋণ স্থিতি কমেছে। গতানুগতিক ব্যাংকিং ধারা থেকে বেরিয়ে উৎপাদনমুখী এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময়ই ব্যাংকারদের উৎসাহিত করছে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনাও রয়েছে। আশা করছি, ব্যাংকগুলো নিজেদের স্বার্থেই এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াবে।
২০১৮ সালে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ঋণের ১৯ শতাংশ এসএমই খাতে বিতরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে বিতরণকৃত মোট ঋণ স্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অবদান ১৫ শতাংশ। এ সময় খাতটিতে ঋণের স্থিতি সবচেয়ে বেশি কমেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। এসএমই খাতে এসব ব্যাংকের ঋণ স্থিতি কমেছে ১৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ সময় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বৃহদায়তনেরই ঋণ দিয়েছে বেশি। যদিও ম‚লত বৃহদায়তনের ঋণ বিতরণ করতে গিয়েই হলমার্ক, এননটেক্স, ক্রিসেন্টসহ দেশের ব্যাংকিং খাতের বৃহৎ কেলেঙ্কারিগুলোর সম্মুখীন হতে হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে। এসব বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার জন্য ব্যাংকগুলোকে এসএমই খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে আসছিল অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক।
দেশে গত বছর এসএমই খাতের মোট ঋণে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অবদান ছিল ৭৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ। যদিও এ সময় খাতটিতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ স্থিতি কমেছে ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। একই সময়ে এ খাতে ১৪ শতাংশ ঋণ কমেছে বিদেশী ব্যাংকগুলোর। যদিও এসএমই খাতে মোট ঋণের বিদেশী ব্যাংকগুলোর অবদান মাত্র ১ শতাংশ।
ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ২০১৮ সালের পুরোটা সময় দেশের ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট ছিল। বিনিয়োগযোগ্য তারল্যের অভাবে অনেক ব্যাংকের ঋণপ্রবাহ শ্লথ ছিল। এসএমই খাতে বিতরণকৃত ঋণের ঝুঁকিও বেশি। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের গড় হার ১০ শতাংশ হলেও এসএমই খাতে এ হার প্রায় ১৪ শতাংশ। এ কারণে ব্যাংকগুলো এসএমই খাতে ঋণ বিতরণে কম ঝুঁকি নিয়েছে।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বড় শিল্প গ্রæপগুলো সম্পর্কে ব্যাংকারদের ধারণা স্বচ্ছ থাকে। এ কারণে সব ব্যাংকার নিরাপদ ভেবে করপোরেট সুশাসন আছে এমন শিল্প গ্রুপকে ঋণ দিতে চায়। ঝুঁকি না নেয়ার মনোভাবই আমাদের ব্যাংকিং খাতে বৈচিত্র্য আনার প্রধান প্রতিবন্ধক।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট আমানত ছিল ১০ লাখ ১৪ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা।
একই সময়ে সরকারি-বেসরকারি খাতে মোট ১০ লাখ ৮৭ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ব্যাংকঋণ ছিল ৯ লাখ ৭০ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। এ ঋণের মধ্যে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা খেলাপির খাতায় যুক্ত হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ