Inqilab Logo

বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

জীবন দিয়ে ব্যবসা নয়

মতবিনিময় সভায় সাঈদ খোকন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

পুরান ঢাকার কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, আপনারা মনে রাখবেন মানুষ জীবনের জন্য ব্যবসা করে। জীবনের বিনিময়ে কোনো ব্যবসা হতে পারে না। এমন ব্যবসা যা মানুষের জীবন মুহুর্তেই শেষ করে দেয়, তা কোনো ব্যবসা হতে পারে না। আমরা ব্যবসা করবো জীবনকে নিরাপদ রেখে। গতকাল রোববার পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় ‘কেমিক্যাল এবং পারফিউমারি ব্যবসার সঙ্কট ও সমাধান’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
সাঈদ খোকন বলেন, আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি আপনাদের ব্যবসা নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। দোকানগুলোতে দুটি ফায়ার এক্সটিংগুইসার, এক বালতি পানি, এক বালতি বালু রাখুন। এগুলো রাখতে আপনাদের বেশি টাকা খরচ হবে না। এর আগেও আমি এ ঘোষণা দিয়েছিলাম। বেশিরভাগই এগুলো দোকানে রেখেছেন। এর কারণেই স¤প্রতি শহীদনগরের একটি আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছিলাম।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্য এই কেমিক্যাল ব্যবসা থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুরান ঢাকার এই কেমিক্যাল ব্যবসা নিয়ে আমাকে অনেকেই অনেক কথা বলেন, অনেকে সাজেশন দেন। আমি শুধু তাদের কথা শুনি। আমার কেমিক্যাল ব্যবসায়ী ভাইদের জন্য কী করতে হবে তা আমি জানি। আমার শুধু একটাই অনুরোধ, যে ৩৫টি কেমিক্যাল রাখা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলো যাতে কারও দোকানে না থাকে, তা দেখভালের দায়িত্বটা আপনারাই পালন করেন। কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের বিষয়ে তিনি বলেন, আপনাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। জমি অধিগ্রহণ হলে সেখানে কেমিক্যালপল্লী করা হবে। কেমিক্যাল ব্যবসায়ীসহ পুরান ঢাকাবাসীকে সচেতন করতে ও অগ্নিনিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতে ৯ এপ্রিল আরমানিটোলা মাঠে ফায়ার সার্ভিসের মহড়া আয়োজন করা হবে, আপনারা সবাই আসবেন, দেখবেন।
এ ছাড়া ব্যবসাযীরা ৪০-৫০টি ছোট ছোট গ্রুপ করে ফায়ার সার্ভিসের কাছে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেবেন। আমাদের একটাই লক্ষ্য আগুন লাগলে যেন আপনারা নিজেরাই আগুন তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। আরেকটা কথা মনে রাখবেন নগর কর্তৃপক্ষ পুরান ঢাকার ব্যবসার প্রসারে যা যা প্রয়োজন তাই করবে। আপনারা আমার ওপর আস্থা রাখুন, আমার পাশে থাকুন। বক্তব্যের পর মেয়র এলাকাবাসীর কথা শোনেন। তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে পুরনো ঢাকার কেমিক্যাল মার্কেটের আশপাশে ফায়ার স্টেশন করা হবে। এছাড়া যদি আমাদের জায়গায় দেওয়া হয় তা হলে আরও ৭-৮টি ফায়ার স্টেশন করে দেব। এজন্য আমরা প্রস্তুতও আছি। তিনি বলেন. এই এলাকায় আর যেন আগুন ট্রাডেজির ঘটনা না ঘটে সেজন্যই আমরা চেষ্টা করছি। অবশ্য এ জন্য স্থানীয়দেরও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা দরকার। তাহলে পুরনো ঢাকায় আর কোন আগুন ঝুঁকি থাকবে না।
সভায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন বলেন, শুধু পুরান ঢাকা নয়, নতুন ঢাকাও অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন ঢাকার মোট ৭২ হাজার অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। তারা এখন অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা একটা কারণে দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমরা দেখছি বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ফায়ার স্টিংগুইসারসহ নানা অগ্নিনিরাপত্তামূলক যন্ত্রপাতি লাগানো হচ্ছে, অথচ অনেক আগেই মেয়র সাঈদ খোকনের নির্দেশে আমরা পুরান ঢাকায় এসব যন্ত্রপাতি কিনেছি। তিনি বলেন, পুরান ঢাকায় ৩৫টি অতি দাহ্য পদার্থ অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বিস্ফোরক অধিদফতরের নিজস্ব জায়গায় সেগুলো রেখে আসি। তবে এই কার্যক্রমে প্রশাসনিক কর্মচারীদের দ্বারা আমাদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। আশা করছি ভবিষ্যতে এমন হবে না।
মেয়রের কাছে কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের পক্ষে তিনি কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, বিস্ফোরক অধিদফতরের পাশাপাশি ঢাকায় উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরি এবং ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে কেমিক্যালের জায়গা বরাদ্দ, কেরানীগঞ্জের ব্রাহ্মণকির্তায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জমি বরাদ্দ করে কেমিক্যালগুলো সেখানে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা, পুরান ঢাকার যেসব ভবনের নিচে গোডাউন এবং উপরে মানুষ বসবাস করে সেগুলোতে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পুরান ঢাকায় কেমিক্যালের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান, জেল-জরিমানা না করে আমাদের ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। এসময় একজন বাড়িওয়ালা অভিযোগ করেন, টাস্কফোর্সের অভিযানের ভয়ে ভাড়াটিয়ারা বাড়ি ছাড়ছেন। তার বাড়িতে এখন কোনো ভাড়াটিয়া নেই। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল জলিল, সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন, ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (মেইনটেইনেন্স অ্যান্ড অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোহাম্মদ শরীফ আহমেদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউসুফ আলী সরদার উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৭১ জন নিহত হন। ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডের পর পুরান ঢাকার কেমিক্যাল ব্যবসার ঝুঁকির বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ