Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঐতিহ্য হারাচ্ছে সুরমা

নাব্যতা ফেরাতে চলছে খনন

দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে আব্দুল বাছির সরদার | প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

এক সময় যে নদীগুলোতে জাহাজে করে সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কলকাতা যাওয়া যেতো, নদীতে বেশি স্রোত থাকায় নৌকা নিয়ে আসা-যাওয়া করতে ভয় হতো। সারাবছরই লঞ্চ ও কার্গো চলাচল করত। কিন্তু গত প্রায় দু’দশক ধরে স্রোতহীন নদীতে পানিই থাকে না। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসের পরই নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নদী ভরাট হয়ে মাঠে পরিণত হয়। মাঘ-চৈত্র মাসে নদীর তলদেশে গরু ঘাস খায় ও গ্রামের শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলা করে। হেমন্তে পানি সঙ্কটে জমিতে চাষাবাদে সমস্যা হয়। অপরদিকে ভরা বর্ষায় বাড়ি-ঘরে পানি উঠে ফসলের ক্ষতি করে, নদী ভরাটের ফলে বর্ষা-হেমন্তে দু’সময়েই সমস্যা হচ্ছে। সরেজমিনে ঘুরে পুরাতন সুরমা নদী ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। রূপ-যৌবন হারানো এই নদীর বৃহৎ অংশ ভরাট হয়ে গেছে। কোথাও সামান্য পানি, অধিকাংশ শুকনো। নদীর তলদেশে চড়ছে গরু-ছাগল। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের নারায়নপুর, গাগলী, বোগলাকাড়া, দেবগ্রাম, নোয়াখালী, জামলাবাজ, হাসনাবাজ, হাসারচর, নগর, আন্দাবাজ, গণিগঞ্জ, কান্দিগাঁও, পাথারিয়া-শরিফপুর পর্যন্ত নদী ভরাটের ফলে এসব গ্রামের লোকজন চরম পানি সঙ্কটে ভোগছেন।
দিরাইয়ের রাজানগর ইউনিয়নের গচিয়া থেকে নেত্রকোনার খালিয়াজুরির কৃষ্ণপুর পর্যন্ত নদীর অনেক জায়গায় পলি পড়ে ভরাট হয়েছে। পলি ভরাটে নদীর নাব্যতা সঙ্কট হওয়ায় পুরাতন সুরমায় ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসেই নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। দিরাই অংশের রজনীগঞ্জ বাজারের উজান-ভাটি এলাকায় কিছু অংশে পানি থাকায় স্থানীয়ভাবে নৌ চলাচল করে।
সদর উপজেলার পৈন্দা থেকে সুরমা অংশের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কিশোরগঞ্জের ইটনার ধনপুর পর্যন্ত নদীর প্রায় ৭০-৮০ কি.মি. জায়গা ভরাট হয়েছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের গাগলী গ্রামের প্রবীণ মুরব্বী হাজী আব্দুল গাফফার (৬২) বলেন, ইঞ্জিন চালিত নৌকা প্রচলনের আগে মানুষ এই নদী দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় পেত, হেমন্তকালেও অন্তত ২০-৩০ হাত পানি থাকত। ১৫-২০ বছর ধরে নদী ভরাট হয়ে এখন খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে।
দিরাইয়ের কুলঞ্জ ইউনিয়নের তারাপাশা গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট লেখক মাওলানা আব্দুর রশিদ তারাপাশি বলেন, ‘চৈত্রমাসেও যে নদীতে সাঁতার কেটে পার হতাম, কালের আবর্তে সেটা একটা রুপোলি ফিতা মাত্র’।
দিরাইয়ের চরনারচর ইউপির সাবেক সদস্য লৌলারচার গ্রামের আলী আমজদ তালুকদার বলেন, ‘রাজানগর ইউনিয়নের গচিয়া থেকে চরনারচর বাজার হয়ে কৃষ্ণপুর পর্যন্ত নদীতে পলি জমে ২০-২৫ বছরেই ভরাট হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পরিচালনা ও রক্ষাণাবেক্ষণ)-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার বলেন, ‘পুরাতন সুরমা নদী সদর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কিশোরগঞ্জের ইটনার ধনপুর পর্যন্ত ১১৬ কি.মি. নদীর অনেক জায়গা ভরাট হয়েছে। দিরাই-শাল্লা উপজেলায় ৪০ কি.মি. খনন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২৮ কি.মি. খনন কাজ শেষ হয়েছে, বাকি খনন কাজ চললে। নিয়ম অনুযায়ী নদীর ভাটি থেকেই খনন শুরু করতে হয়, তাই দিরাই-শাল্লায় খনন করা হয়েছে। উজানে আরও ৩১ কি.মি. খনন করার জন্য ডিপিপি তৈরি করা হয়েছে। আমরা আশা করছি উজানের অংশটুকু খনন করা হবে। নদীর নাব্যতা রক্ষায় পরে নিয়মিত খনন করা হবে’।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ