পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
দেশের রফতানি বাণিজ্যে ৮৪ শতাংশ অবদান রক্ষাকারী বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালনা পরিষদের নির্বাচনে ফুল প্যানেলে জয়ী হয়েছেন সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম। এই প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক বিজিএমইএ ও এফবিসিসিআইর সভাপতি আনিসুল হক পত্নী ড. রুবানা হক। তার মানে, বিজিএমইএ’র ইতিহাসে এই প্রথম নারী নেতৃত্ব পাচ্ছে রফতানি আয়ের প্রথম খাতের সংগঠনটি।
শনিবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত বিজিএমইএ ভবনে সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ভোট গ্রহণ বিরতিহীনভাবে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এরপর ৫টা থেকে শুরু হয় ভোট গণনা। নির্বাচন কমিশনার নিহাদ কবির জানান, ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু ও অশান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে মোট এক হাজার ৯৫৬ ভোটের মধ্যে ১৪৯২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এতে ৭৬ দশমিক ২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায় ২৬টি পরিচালক পদের মধ্যে রুবানা হকের ফুল প্যানেল নির্বাচিত হয়েছেন।
বিজিএমইএর নির্বাচনে প্যানেল ভোট পড়েছে ৭৩২টি। এর সব ভোটই পেয়েছে পরিষদ-ফোরাম জোট। অন্যদিকে ২৬ জনের প্যানেলে ১৭ জন প্রার্থী দিয়েছিল স্বাধীনতা পরিষদ। তাই প্যানেল ভোটের একটিও পায়নি স্বাধীনতা পরিষদ। এর মাধ্যমে পুরো প্যানেলসহ জয়ী হলেন পরিষদ- ফোরাম জোটের প্যানেল লিডার রুবানা হক। তবে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি কোনো পক্ষই।
বিজিএমইএর সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে প্যানেল ভোট পেড়েছে ৭৩২টি। আর মিশ্র ভোট পড়েছে ৬৬৫টি। মিশ্র ভোটের মধ্যে পরিষদ-ফোরাম জোট ও স্বাধীনতা পরিষদ উভয়েরই ভোট রয়েছে ।
বিজিএমইএ প্রজেক্টরে প্রতি মুহূর্তে কে কতো ভোট পাচ্ছেন তা দেখানো হচ্ছে। সন্ধ্যা ৭ টা ৩৩ মিনিট পর্যন্ত ৯৪৮টি ভোট গণনা হয়েছে। এর মধ্যে পরিষদ-ফোরাম প্যানেল লিডার রুবানা হক পেয়েছে ৮৫৬টি ভোট ও স্বাধীনতা পরিষদের প্যানেল লিডার মো. জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছেন ৩৫৩টি ভোট। প্রায় একই অবস্থা দুই প্যানেলের প্রার্থীদেরও। এ সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন পরিষদ-ফোরাম প্যানেলের এম এ রহীম। তার ব্যালট নম্বর সাত। তিনি সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত পেয়েছেন ৮৪০টি ভোট।
দুই বছর মেয়াদি এ নির্বাচনে পরিচালনা পরিষদের ৩৫টি পরিচালক পদে ৪৪ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। তবে এর মধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৯ জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ২৬ পদে ভোটগ্রহণ হয়। এর মধ্যে প্রার্থী সম্মিলিত পরিষদের ও ফোরামের ২৬ জন, স্বাধীনতা পরিষদের ১৮ জন। সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক। তিনি ঢাকা উত্তর সিটির মরহুম মেয়র আনিসুল হকের সহধর্মিণী। অন্যদিকে স্বাধীনতা পরিষদের প্যানেল লিডার ডিজাইন অ্যান্ড সোর্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম।
নির্বাচনে বিজয়ী পরিচালকরা হলেন রুবানা হক, এস এম মান্নান, ফয়সাল সামাদ, মোহাম্মদ নাছির, আসিফ ইব্রাহিম, আরশাদ জামাল, এম এ রহিম, কে এম রফিকুল ইসলাম, মো. শহীদুল হক, মশিউল আজম, ইনামুল হক খান, মাসুদ কাদের, ইকবাল হামিদ কোরাইশী, নাছির উদ্দিন, কামাল উদ্দিন, সাজ্জাদুর রহমান মৃধা, রেজওয়ান সেলিম, মুনির হোসেন, এ কে এম বদিউল আলম, মিরান আলী, মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, মোশারফ হোসেন ঢালী, শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী, মহিউদ্দিন রুবেল, শরীফ জহির ও নজরুল ইসলাম।
এছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া ৯জন পরিচালক হলেন- মোহাম্মদ আব্দুস সালাম, এ এম চৌধুরী, এ এম মাহবুব চৌধুরী, এনামুল আজিজ চৌধুরী, মোহাম্মদ আতিক, খন্দকার বেলায়েত হোসেন, অঞ্জন শেখর দাশ, মোহাম্মদ মুছা ও মোহাম্মদ মেরাজ-ই-মোস্তফা। এরা সবাই রুবানা হকের প্যানেল থেকে নির্বাচিত।
প্রায় ছয় বছর পর বহুল কাঙ্খিত ভোট হলো তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএতে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী দুই বছরের (২০১৯-২১) জন্য নেতা নির্বাচিত করছেন পোশাক মালিকরা। দীর্ঘদিন পর ভোট দিতে পেরে খুশি ভোটাররা। সেই সঙ্গে খুশি সাবেক নেতারাও। তারা বলছেন, যারাই নির্বাচিত হোক তারা মালিকদের জন্য সর্বোপরি তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়ন এবং বৃদ্ধমান সমস্যা সমাধানে কাজ করবেন।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম ভোট প্রদান শেষে বলেন, নির্বাচিত কমিটির কাছে প্রত্যাশা তারা যেন গার্মেন্ট সেক্টরের যে সমস্যা তা সমাধানে কাজ করেন। বর্তমানে এ খাতে সবচেয়ে বড় সমস্যা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে পিছিয়ে পড়া। মেয়র বলেন, এখন বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পণ্যের দাম কমে গেছে। আমার প্রত্যাশা নতুন কমিটি দাম বাড়ানোর বিষয়ে কাজ করবে। গার্মেন্ট সেক্টরে এমনিতেই উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে, তাই পণ্যের দাম না বাড়াতে পারলে চলমান সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে না।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা জরুরি। কারণ নির্বাচনবিহীন কমিটি হলে সেই কমিটির কোনো কমিটমেন্ট থাকে না। এতে মালিকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হন। তিনি বলেন, একটি নির্বাচিত কমিটি মালিকদের যেভাবে সুযোগ সুবিধা দেয় সিলেক্টেড কমিটি ওই ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয় না।
সম্মিলিত-ফোরামের নেতা রুবান হক বলেন, ভোটাররা আনন্দঘন পরিবেশে তাদের ভোট প্রয়োগ করেছেন। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত একটি শুভ মুহূর্ত। আমরা সবাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করছি, এটা অনেক বড় কথা। নির্বাচনের ফল যাই হোক তা সানন্দে গ্রহণ করব। নির্বাচিত হলে ছোটবড় সব পোশাক কারখানার উন্নয়নে কাজ করব।
এ দিকে স্বাধীনতা পরিষদের নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের কিছু অভিযোগ থাকলেও ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। যদিও আমাদের কোনো এজেন্ট থাকতে দেওয়া হয়নি। তবে ফলাফল যাই হোক আমরা মেনে নেবো।
শনিবার বিজিএমইএর পুরনো ভবন কারওয়ান বাজারের নুরুল কাদের অডিটোরিয়ামে সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে।
বিজিএমইএর নির্বাচনী বোর্ডের দায়িত্বে থাকা কমিশনার ও মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, ভোট আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটাররা উৎসবের আমেজে ভোট প্রদান করেছে। কোনো সমস্যা হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।