Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও চলছে ইলিশ শিকার

মাহবুব আলম লাভলু, মতলব (চাঁদপুর) থেকে : | প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল হতে ল²ীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১শ’ কিলোমিটার মেঘনা নদী এলাকায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশের ইলিশ সম্পদ রক্ষায় জাটকা নিধন প্রতিরোধ কর্মসূচির আওতায় ২০০৬ সাল থেকে চাঁদপুরের মেঘনাসহ দেশের ৪টি অঞ্চলে মার্চ -এপ্রিল দুই মাস ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার ও লক্ষীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার মেঘনা নদী অভয়াশ্রমের অন্তর্ভূক্ত। এ সময় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। জেলেরা কোনো প্রকার জাল নিয়ে নদীতে নামতে পারবে না। সরকার জেলেদের জীবিকা নির্বাহের জন্য চাল ও উপকরণ দিচ্ছে। কিন্তু তবুও সরকারি নিষেধজ্ঞা মানছে না মতলব উত্তর উপজেলার জেলেরা। মাছ ধরা নিষিদ্ধের প্রথম দিন থেকেই নৌকা নিয়ে জেলেদের মাছ শিকার করতে দেখা গেছে। মতলব উত্তরের মাছের আড়ত গুলোতে প্রকাশ্যে জাটকা বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, মতলব উত্তরে তালিকাভ‚ক্ত ৮হাজার ৮শ ৯৪ জন জেলে রয়েছে। সরকার প্রতি জেলেকে ৪০ কেজি করে চারবারে ১‘শ ৬০ কেজি করে চাল দিবে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়েনে চাল বিতরণ চলমান। এছাড়া জেলে পরিবারকে সাবলম্বী হওয়ার জন্য বিভিন্ন উপকরণ দেয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে মেঘনার অভয়াশ্রমের জহিরাবাদ থেকে ষাটনল মেঘনার তীরে ঘুরে এ অঞ্চল মাছের বিচরণের জন্য নিরাপদ বা মাছের অভয়াশ্রম বলে মনে হয়নি। এখলাছপুর থেকে ষাটনল অঞ্চলের মেঘনার সর্বত্রই জেলেদেরকে নিরাপদে মাছ ধরতে দেখা গেছে। যেখানে নদী থেকে শাখা খালের মতো আছে সেখানে জেলেরা নিজ নিজ নৌকায় থাকা কারেন্ট জালগুলো মাছ ধরতে যাবার জন্য প্রস্তুত করে। নৌকাগুলো যে মৎস্য শিকারের জন্য নদীতে জাল ফেলছে সেই দৃশ্যটিও চোখে আসে।
শিকারীদের বেশির ভাগই কারেন্ট জাল ব্যবহার করলেও এখলাছপুর লঞ্চঘাট সংলগ্ন নদীর তীরে বিশাল আকৃতির বেশ কটি ভিন্নজাতের ভিজা জাল রোদে শুকানোর জন্য ছড়িয়ে রাখতে দেখা গেছে। এমনকি মৎস্য শিকারের জন্য প্রস্তুতি নেয়াকালে কাছ থেকে ছবি তুলতে গেলেও জেলেদের মাঝে নূন্যতম কোন ভয় পাবার মতো লক্ষণ দেখা যায়নি। মাছ ধরারত জেলেদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে গেলে কখনও অভিযানকারীদের জেলেদের হামলার শিকার হতে হয়েছে।
মার্চ-এপ্রিল দুই মাস সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এ সময় জাল ফেলা থেকে নদী তীরবর্র্র্তী মৎস্য আড়ৎগুলো বন্ধ থাকার কথা। জেলেরা মাছ ধরছে নদীতে আর আড়তদারা প্রকাশ্যে জাটকাসহ অন্য মাছ বিক্রি করছে। আড়ৎগুলো খোলা রেখে মাছ বিক্রি করছে কিভাবে এ প্রশ্ন সাধারণ মানুষের। এখন ফেরি করে গ্রামে ও ছোট বাজারগুলোতে জাটকা বিক্রি করা হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেই।
অভয়াশ্রমে সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করছেন। উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও পুলিশ অভিযানে অংশগ্রহণ করছেন। এ ব্যাপারে নদী তীরবর্তী এলাকার অনেকে জানান, প্রকৃত জেলেরা এ সময় অনেকেই সাজা ও জরিমানার ভয়ে এ সময় নদীতে নামে না। এক শ্রেনীর লোভী মহল ও আড়তদাররা নিয়মিত জেলে না এমন যুবক ও কিশোরদের দিয়ে জাটকা শিকার করায়। প্রতিদিন মনে মনে জাটকা ধরা হচ্ছে। যে অভিযান পরিচালিত হয় তা সীমিত। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ সময় জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ রাখতে সরকার জেলেদের প্রণোদনা দিচ্ছেন। প্রতি জেলে ২ মাসে ১৬০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন। জেলে পরিবারকে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন উপকরণ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও পুলিশ বাহিনীর সমন্বয়ে অভিযান পরিচালিত করা হচ্ছে। অভিযানের মাধ্যমে জাটকা, কারেন্ট জাল ও জেলেদের আটক করা হয়েছে। জেলেদের সাজা দেয়া হচ্ছে। সরকারি কর্মসূচি বাস্তবায়নে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ