বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
গত ক’টি নিবন্ধে আমরা আল্লাহতায়ালার মেহেরবানি, ক্ষমাশীলতা, করুণাময়তা ও দয়ার আলোচনা করছিলাম। কোরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত থেকে আমরা আল্লাহপাকের এসব গুণের পরিচয় পেয়ে থাকি। পার্থিব জীবনে আল্লাহর সেসব গুণের সরাসরি প্রয়োগ পেয়েও আমরা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ে সচেষ্ট থাকি না। নিশ্চয়ই সে লোক বড়ই হতভাগ্য, যে এহেন রহমত ও করুণাময় পরওয়ারদেগারের রহমত ও করুণা থেকেও বঞ্চিত থাকে, যিনি তার রহমতে আলম নবী সা.-এর মুখে নিজের অপরাধী ও গোনাহগার বান্দাদের সালামের পর রহমতের এ পয়গাম দেন যে, ‘নিজেদের পরওয়ারদেগারের প্রতি নিরাশ হবে না, পালাবে না। তিনি যে নিজের জন্য রহমতকে অবধারিত করে নিয়েছেন, যদি নিজের অজান্তে তোমাদের দ্বারা পাপ সংঘটিত হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে এখন তওবা করে নাও। নিজের অবস্থার সংশোধন করে নাও। আমি অত্যন্ত মেহেরবান ও ক্ষমাশীল।’
বস্তুত সূরা শূরার এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘এসো, তিনিই আল্লাহ যার মহিমা হলো এই যে, তিনি নিজের (পাপী-তাপী) বান্দাদের তওবা কবুল করেন। তাদের ভুলত্রæটি ক্ষমা করেন এবং তোমরা যা কিছু করো সেসব পুরোপুরি জানেন।’ (সূরা শূরা : আয়াত ২৫)।
সূরা নিসায় ব্যভিচারের ঘৃণ্য ও জঘন্য পাপে লিপ্ত অপরাধী বান্দাদের সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমাদের মধ্যে যারা অপকর্মে লিপ্ত হয়, তাদের শাস্তি দাও। তারপর যদি সে সেই হারাম কর্ম থেকে তওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, তাহলে আর তার পেছনে লেগে থেকো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ অত্যন্ত তওবা কবুলকারী পরম করুণাময়।’ (সূরা নিসা : আয়াত ১৬)।
অর্থাৎ যেসব লোকের ব্যাপারে এ কথা প্রমাণিত হয়ে যায় যে, তারা এ ধরনের হারাম ও গর্হিত কর্মে লিপ্ত হয়েছে, তাহলে তাদের আইনানুগ শাস্তি তো দিতেই হবে। কিন্তু অতঃপর যদি সে তওবা করে নিজেকে সংশোধন করে নেয়, তবে তাকে কিছু বলবে না। কারণ, আসলে সে তার যে মালিকের কাছে পাপ করেছে, তিনি নিজে তওবাকারী অপরাধীদের সানন্দে ক্ষমাকারী এবং অতঃপর তাদের প্রতি রহমত ও করুণা বর্ষণকারী।
আলোচ্য সূরা নিসারই অন্যত্র সবরকম পাপী-তাপী ও অপরাধীকে সুসংবাদ শোনানোর লক্ষ্যে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে কেউ কোনো রকম পাপ করে এবং আল্লাহর নাফরমানি করার মাধ্যমে নিজের প্রতি জুলুম করার পর সে (অনুতপ্ত হয়ে) আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে সে আল্লাহকে পাবে তওবা কবুলকারী, দয়াশীল ও করুণাময়।’ (সূরা নিসা : আয়াত ১১০)।
আর সূরা যুমারে নিজেকে ধ্বংসকারী অপরাধী বান্দাদেরই উদ্দেশে যা কিছু বলা হয়েছে এবং যে মমতা ও প্রীতির ভঙ্গিতে তাদের আহবান করা হয়েছে, তাও তো আল্লাহতায়ালার করুণাগুলোর এমনি আবেদন, যাতে বিরাট থেকে বিরাটতর অপকর্মে লিপ্ত এবং সারা জীবন ধরে পাপকার্যে নিমজ্জিত ব্যক্তিও যদি তা নিজের অন্তরে কান লাগিয়ে শুনে নিতে পারে, তাহলে সতত আল্লাহপাকের রহমতের দুয়ারের দিকে ধাবিত হবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে তার রহমতের নবী সা.-কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমার অপরাধী ও পাপী বান্দাদেরকে আমার পক্ষ থেকে এ পয়গাম পৌঁছে দিন।
‘হে আমার সেসব বান্দা, যারা পাপ করে নিজেদের প্রতি জুলুম করেছ (এবং নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংস ও বিনাশ করেছ), তোমরা আল্লাহতায়ালার রহমত থেকে নিরাশ হইও না। আল্লাহর মহিমা হলো এই যে, তিনি সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেন। বস্তুতই তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল এবং বিরাট করুণাময়।
এখনও ফিরে এসো; নিজের ক্ষমাশীল ও করুণাময় পরওয়ারদেগারের দিকে গতি ঘুরিয়ে নাও, তার হুকুমের অনুসরণ করতে শুরু করো, তোমাদের পাপের পরিণতি ও আজাব তোমাদের পাকড়াও করার আগে। অন্যথায় কেউ তোমাদের সাহায্য করতে পারবে না, কেউ তোমাদের বাঁচাতে পারবে না।’ (সূরা যুমার : আয়াত ৬৩-৫৪)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।