Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্যোগ প্রস্তুতি দুর্বল

কালবৈশাখী, ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত, হঠাৎ বন্যা, তাপদাহে বৈরী আবহাওয়ার আশঙ্কা এপ্রিল মাসজুড়েই

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম | আপডেট : ১২:১৩ এএম, ৩ এপ্রিল, ২০১৯

প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক সঙ্গী করেই জীবন সংগ্রামে অবিরত ছুটে চলে বাংলাদেশের জনগণ। বিশেষজ্ঞগণ বলেন, আবহাওয়া-জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে দুর্যোগের মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। কেড়ে নিচ্ছে মানুষের জীবন ও সহায়-সম্বল, আশ্রয়। দুর্যোগ আছে, থাকবে। কিন্তু দুর্যোগের পূর্ব-প্রস্তুতি, জনসচেতনতা এবং সতর্কীকরণ ব্যবস্থা যতটা প্রয়োজন সেই তুলনায় বাংলাদেশে তা নেহাৎ দুর্বল। এরজন্য তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের সাথে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নিবিড় সমন্বয় থাকা জরুরি।
এদিকে দেশে প্রবল কালবৈশাখী ঝড়, সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত বা বজ্রঝড়, শিলাবৃষ্টি, অকাল বন্যা ও তাপদাহে বৈরী আবহাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে চলতি এপ্রিল (চৈত্র-বৈশাখ) মাসজুড়েই। গতকাল (মঙ্গলবার) আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় চলতি এপ্রিল মাসের জন্য উক্ত দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ। সভায় বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলের এবং বৈশ্বিক আবহাওয়া-জলবায়ু পরিস্থিতি, ‘এল নিনো’ অবস্থাসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করা হয়।
বিশেষজ্ঞ কমিটির পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, চলতি এপ্রিলে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত ২ থেকে ৩ দিন মাঝারি থেকে প্রবল আকারে কালবৈশাখী ঝড় তথা বজ্রঝড় সংঘটিত হতে পারে। দেশের অন্যত্র ৫ থেকে ৬ দিন হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কালবৈশাখী ঝড় বা বজ্রঝড় হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
এ মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ সময় তাপমাত্রার পারদ অতিক্রম করতে পারে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর। এছাড়া দেশের অন্যত্র ১ থেকে ২টি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সে.) থেকে মাঝারি (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সে.) ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
সভায় দেয়া পূর্বাভাসে জানানো হয়, চলতি এপ্রিল মাসে মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এ মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এ মাসের শেষের দিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (বৃহত্তর সিলেট ও সংলগ্ন ময়মনসিংহ) আকস্মিক এবং অকাল বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে গত মার্চ মাসে দেশে সামগ্রিকভাবে প্রায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে বিভাগ বা জেলাভেদে বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীন অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। মার্চ মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে দেশে গড় বৃষ্টিপাত ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি হয়েছে। তবে এরমধ্যে রাজশাহী বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০৭ শতাংশ বেশি, খুলনা বিভাগে ৬৯ শতাংশ বেশি, ঢাকা বিভাগে ৭.৯ শতাংশ বেশি বর্ষণ হয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬.৩ শতাংশ কম, সিলেট বিভাগে ৫১ শতাংশ কম, বরিশাল বিভাগে ২০.৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি (মাঘ-ফাল্গুন) মাসে সারাদেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ১৬২ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়। এরমধ্যে বিভাগওয়ারি হিসাবে খুলনা বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ২৫৩.২ শতাংশ বেশি হারে বৃষ্টিপাত হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এ জে এম গোলাম রাব্বানী গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধ করা বা ঠেকানো সম্ভব নয়। তবে দুর্যোগ পরিস্থিতি সঠিক সময়ে সঠিক উপায়ে মোকাবিলায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেকাংশে লাঘব করা সম্ভব। দুর্যোগ প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা অনেক এগিয়ে গেছে। তবে তা এখনও পর্যাপ্ত নয়। এরজন্য আমাদের সতর্কীকরণ ও প্রাক-প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, এপ্রিল ও মে মাসে তাপমাত্রা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। এ কারণে কালবৈশাখী, শিলাবৃষ্টি, টর্নেডো এবং তাপপ্রবাহ সৃষ্টি হয়। এসব দুর্যোগ থেকে জানমাল রক্ষায় নিয়মিত বেতার পূর্বাভাস প্রদান ও শোনা প্রয়োজন।
সর্বশেষ আবহাওয়া, বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি হচ্ছে
পশ্চিমা লঘুচাপের সাথে পূবালী বায়ুর মিলনের ফলে গতকালও (মঙ্গলবার) দেশের অধিকাংশ স্থানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই সাথে কালবৈশাখী ঝড়, বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে নিকলিতে ৫৮ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ১৭, ময়মনসিংহে ২৩, সিলেটে ২০, বগুড়ায় ১১, বদলগাছীতে ২৯, সৈয়দপুরে ৪ মিলিমিটারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে।
আজ (বুধবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এর পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কালবৈশাখী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ