পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল সন্ধ্যায় হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় হয়েছে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও শিলাসহ বজ্রপাত এবং মুষলধারে বৃষ্টিপাতও হয়েছে। ঝড়ের সময় রাজধানীর পল্টনে একটি ভবন থেকে বেশ কয়েকটি ইট পড়ে চা দোকানদার হানিফ মিয়া (৩৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সংসদ ভবন এলাকায় গাছ ভেঙ্গে পড়ে মিলি ডি কস্তার (৬০) মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে নেত্রকোণায় বজ্রপাতে একজনের মৃতু হয়েছে। এ ছাড়া প্রচন্ড শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে ঢাকায় কালবৈশাখীর গতিবেগ ছিল ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। সন্ধ্যা ৬টার পর রাজধানীতে ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পল্টনে একটি ভবন থেকে বেশ কয়েকটি ইট পড়ে চা দোকানদার হানিফ মিয়া (৩৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত হানিফ মিয়া বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার আব্দুল লতিফ সরকারের ছেলে। বর্তমানে ঢাকার মুগদা এলাকায় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকতেন তিনি। নিহতের খালাতো ভাই রুবেল জানান, পল্টন মল্লিক কমপ্লেক্সের নিচে ফুটপাতে চায়ের দোকানদারি করতেন হানিফ। ঝড়ের সময় হঠাৎ পার্শ্ববর্তী ভবনের উপর থেকে বেশ কয়েকটি ইট নিচে থাকা হানিফের উপরে পরে। এতে গুরুতর আহত হলে পুলিশসহ আমরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুজন তালুকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মরহুমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
শেরেবাংলা নগর থানা সূত্রে জানা যায়, সংসদ ভবন এলাকায় নিহত নারীর নাম মিলি ডি কস্তা (৬০)। তিনি মনিপুরি পাড়ায় থাকতেন। সন্ধ্যায় তিনি সংসদ ভবন এলাকার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার লাশ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
গতকাল সকাল থেকে ঢাকায় এক গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছিলো। সেই সাথে ছিল এক ভ্যাপসা গরম। গরমের সারাদিনই অনেকে হাসপাস করেছেন। সন্ধ্যায় হঠাৎ কালবোশেখীর সাথে মুষলধারে বৃষ্টি প্রকৃতিকে ঠান্ডা ও সজিব করে দেয়। কালবৈশাখী ঝড়ে মিন্টু রোডে এবং গুলশানে গাছ ভেঙে পড়ে দু’টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া মগবাজারে একটি বেসরকারি হাসপাতালের দেয়াল ধসের ঘটনা ঘটেছে। অনেক রাস্তায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে কিছু সময় চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার গুলশান, ধানমন্ডি, ফার্মগেট ও পুরান ঢাকাসহ অধিকাংশ এলাকায় ঝড়ের সময় বিদ্যুতের সমস্যা হয়। আবার অনেক এলাকায় গাছ পড়ে বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে যায়।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের ডিউটি অফিসার আতাউর রহমান জানান, বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। এ ছাড়া ঢাকার মগবাজারের আদ্-দ্বীন হাসপাতালের একটি দেয়াল ধসের খবর পেয়ে সেখানে একটি ইউনিট পাঠানো হয়েছে।
ঢাকায় এটাই মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী। আবহাওয়া পূর্বাভাসে আগেই বলা হয়েছিল ঘন্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে। সন্ধ্যায় ঢাকার কালবৈশাখীর গতিবেগও তাই ছিল।
আবহাওয়াবিদরা জানান, পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে মৌসুমী লঘুচাপের প্রভাবে এই কালবৈশাখী ঝড় হয়েছে। এই মৌসুমে এই ঝড় বৃষ্টি স্বাভাবিক। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর আশ-পাশের এলাকায় বাংলাদেশের পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ- হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের অন্য এলাকায় পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চৈত্র মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এসে কড়া সূর্যের রোদের তেজে গরমের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। আবার কোথাও কোথাও হালকা ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়। গতকাল (রোববার) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৬.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ডিমলায় ২১.৩ ডিগ্রি সে.। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাতের সর্বনি¤œ তাপমাত্রাও।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে কুমারখালীতে ১৮ মিলিমিটার। এছাড়া টাঙ্গাইলে ১, ফরিদপুরে ৪, নিকলিতে ১০, ময়মনসিংহে ১, নেত্রকোনায় ৫, শ্রীমঙ্গলে ৫, তাড়াশে ২, ডিমলায় ১৫, রাজারহাটে ৮ মিলিমিটার এবং রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গায় সামান্য বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এদিকে আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
নেত্রকোণা জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল সন্ধ্যায় জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ঝড়ো হাওয়া। সেই সঙ্গে হয়েছে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি। এ শিলাবৃষ্টি তন্ডব চালিয়েছে ফসলি জমিতে। পাশাপাশি হয়েছে ব্যাপক বজ্রপাত। বজ্রপাতে সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নে বাহাদুরপুর গ্রামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তার নাম আছর উদ্দিন (৬৫)। বাহাদুরপুর এলাকার মগড়া নদীর পাড়ে কৃষিজমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে নিহত হন তিনি। এছাড়া দুর্গাপুর উপজেলায় বিকেল থেকে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রপাতের সঙ্গে আধা ঘণ্টাব্যাপী চলে শিলাবৃষ্টি। এতে উঠতি বোরো ফসল ও সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। স্থানীয় কৃষক আব্দাল হোসেন, অবনী কান্ত, আ. মোতালেব ও মো. ছোবাহান জানিয়েছেন, দুই থেকে আড়াইশ গ্রাম ওজনের শিল পড়েছে। এমন শিল আগে কখনো দেখিনি আমরা। এসব শিল পড়ে অনেক ধান মাটিতে পড়ে গেছে। এবার ধানের চেয়ে শত শত একর জমিতে চিটা বেশি পাওয়া যাবে। শিলের প্রভাবে তরমুজ, বাদাম, ডাল ও দেশি আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।