পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেট এখন ধ্বংসস্তুপ। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে কাঁচা বাজার ও সুপার মার্কেটের বহু ব্যবসায়ীর স্বপ্ন। অনেকের পুড়েছে কষ্টার্জিত শেষ সম্বল। মার্কেটজুড়ে এখন শুধু আহাজারি আর কান্নার রোল। রাজধানীর বনানীতে ভয়াবহ আগুনে ২৫ জন নিহত ও শতাধিক আহতের ঘটনার মাত্র দুদিন পর রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে ফের বড় ধরনের অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার ভোরে গুলশান ১ নম্বরের এ মার্কেটে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। একই সাথে বড় ধরনে অগ্নিকান্ডের হাত থেকে রক্ষা পায় গুলশান ২ নম্বরে সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ের পাশে ডেল্টা লাইফ টাওয়ার।
গতকাল ভোর ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে ডিএনসিসি মার্কেটের কাঁচাবাজার অংশে আগুন লাগে। খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২০ ইউনিট কাজ করে। সকলের যৌথ প্রচেষ্টায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এর আগে ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি ভোরবেলা একই মার্কেটে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল। তখন মার্কেটটির বহু দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। এরপর অস্থায়ীভাবে দোকান তৈরি করে মার্কেটটি চালু করা হয়।
অন্যদিকে ডিএনসিসি মার্কেটে অগ্নিকান্ডের ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক শামীম হাসানকে প্রধান করে এ কমিটি করা হয়েছে। আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা ও শ্রমিকদের ২০ কেজি চাল দেয়ার কথা জানিয়েছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশনের এ মার্কেটে ২১২টি দোকান ছিলো। সবগুলোই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখানে বেশিরভাগই দুধ, মশলা, খাদ্য ও শিশু পণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। আর ১৩০ জন মালিকের কোটি কোটি টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্থ’ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ গুলশান কাঁচাবাজারের অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেছেন, এই মার্কেটটি ভেঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের শপিং মল করার কথা ছিল। যেকোনও কারণে এটা হয়নি। কিন্তু এখন জনগণের স্বার্থে যেকোনও মূল্যে এটাকে ভেঙ্গে মার্কেট তৈরি করতে হবে।
এর আগে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, মার্কেটটিতে এর আগে যখন আগুন লাগে তখন অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। এখনও অগ্নিনির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা নেই। আমরা এখানে ডিএনসিসি স্থায়ী মার্কেট করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মামলার জটিলতা আছে। আমরা এই মামলার নিষ্পত্তি করে যত দ্রুত সম্ভব স্থায়ী মার্কেটের দিকে যাব।। এ সময় তিনি আরো জানান, কাঁচাবাজারে লাগা আগুন একটি সুগন্ধির দোকান থেকে সূত্রপাত হয়েছে। তখন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের অনেককেই ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এত দ্রুত মেয়র কিভাবে জানলেন যে সুগন্ধির দোকান থেকে সূত্রপাত?
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ দৈনিক ইনকিলাবেকে বলেন, ২০১৭ সালে ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন লাগার পর কর্তৃপক্ষকে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখার জন্য তিন/চারবার নোটিশ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু নোটিশের জবাবে মার্কেট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি বলেন, এই মার্কেটে আগেরবার আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছিল। কারণ কোনো রাস্তা ছিল না, পানি ছিল না। ফায়ারের কর্মীরা সহজে মার্কেটে ঢুকতে পারেনি। ফলে ওই সময় সুপারিশ করা হয়েছিল যে, পরবর্তীতে মার্কেট করা হলে যাতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হয়। কিন্তু এবার আগুন লাগার পর দেখা গেলো সেই আগের চিত্র। এবার কোনো আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নেই। এমনকি রাস্তা পর্যন্ত নেই।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল ভোর ৫টা ৪৮ মিনিটে ডিএনসিসি মার্কেটের কাঁচাবাজারে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে নৌ বাহিনীর সদস্যরাও যোগ দেয়। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সিটি কর্পোরেশনের পানির গাড়ির পাশাপাশি গুলশান লেকে পাম্প বসিয়ে পানি নিয়ে আগুন নেভায়। তবে এর আগেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় মার্কেটের প্রায় সব দোকান। খুব ভোরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা হওয়ায় মার্কেটে ক্রেতা ছিল না। তাই হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে মার্কেটের সবগুলো দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যা পড়ে আছে সবই ধ্বংসস্তূপ। চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, কসমেটিক্সসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য পুড়ে গেছে। দোকানে ও গোডাউনে থাকা কোন মালামালই ব্যবসায়ীরা উদ্ধার করতে পারেনি। পুড়েছে ফ্রিজে থাকা মাছ, মুরগিও। আগুন নেভাতে পানি ছিটানোর কারণে পুরো মার্কেট স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তখনো পুড়ে যাওয়া দোকান ও বিভিন্ন পণ্য থেকে ধোঁয়া উড়ছে। কেউ সর্বস্ব হারিয়ে নির্বাক হয়ে দোকানের সামনে বসে আছেন। আর শুধু বিলাপ করছেন।
দেখা যায়, ডিএনসিসি মার্কেটের সামনের সড়কে ও মার্কেটের ভেতরে শত সহ¤্র মানুষ ভিড় করেন। কেউ মোবাইলে ছবি বা ভিডিও ধারণ করেন কেউবা অযথাই দাঁড়িয়ে থাকেন। এর ফলে ফায়ার সার্ভিস, সিটি কর্পোরেশনের পানি সরবরাহের গাড়ি ঢুকতে সমস্যা হয়। তবে দুপুরের দিকে ডিমের দোকানে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। পুড়ে যাওয়া এক ডিমের দোকান থেকে পোড়া ডিম কুড়াতে দেখা গেছে অনেককে। কেউ কেউ ডিম পকেটে ভরে চলে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ সেখানে দাঁড়িয়েই একের পর এক পোড়া সিদ্ধ ডিম খাচ্ছেন।
ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বলেন, আমরা ঠিক জানিনা আগুন কোথায় থেকে লাগছে। কিন্তু প্রশ্ন হলে এ মার্কেটে তো তেমন শুকনা কিছু ছিল না। সবই তরিতরকারি আর মাছ মাংস। ফ্রিজ-বরফ। সবই ভেজা। তারপরও আগুন এতো দাউ দাউ করে জ্বললো কেনো? মেয়রের কাছ থেকে শুনলাম পারফিউমের কারণে আগুনের তীব্র ছিল। এটা হইলেও হইতে পারে। দোকানে এগুলো বিক্রি করতো। তবে কথা হইলো আমরা তো মুর্খ মানুষ, কিসের কারণে আগুন বেশি বাড়ছে হেইডা কইতে পারমু না।
ডিএনসিসি মার্কেটের অনন্যা স্টোরের মালিক মীর হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার দোকান তো আপনার সামনে দেখেন সব পুড়ে ছাই, কিছুই আর নেই, পর পর দুবার, আর বারবারেই আগুন লাগে ভোরে কিছুই বুঝি না। ভাই ভোরের আগুনে আমার তিনটা দোকানের প্রায় ৮০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। ছাই ছাড়া এখন আর কিছু দেখি না। আগের বারের আগুনে আমার দোকানের সাড়ে তিন কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছিল, সরকার একবার আইস্যা আমাদের মাথায় হাতও বুলায় দেয়নি।
আগুনের হাত থেকে দোকানের বেঁচে যাওয়া টিন সরাতে সরাতে তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আগের আগুনের ঘটনায় সরকার আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করার কথা থাকলেও তারা আমাদের জন্য কিছুই করেনি। বস্তি পুড়লে কিছু ক্ষতিপূরণ দেয়। আমরা তাও পাইনি। পরে আমরা নিজেরাই ৫০ হাজার টাকা করে দিয়ে আবার দোকান তুলি আর এবারের আগুনে সব পুড়ে ছাই, আমাদের কিছুই রক্ষা হয়নি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা খুরশীদ আনোয়ার জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সকাল ৮টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে। আগুনে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। প্রাথমিক অবস্থায় আগুন লাগার কারন জানা যায়নি। তদন্ত না করে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দেয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা।
সামুদ্রিক মাছ দোকানের মালিক জামাল হোসেন বলেন, বাজারে তার পরিবারের সাতটি দোকান ছিল। সবগুলো দোকানই আগুনে পুড়ে গেছে। আগুনে ১৪টি মাছের দোকান পুড়ে গেছে বলে জানান তিনি।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক লিটন জানান, প্রায় কোটি টাকার মালামাল ছিল তার। এই মার্কেটে তার ছিল ৮ টি দোকান। দোকানে ছিল বেবি ফুড, তেল, চাল, ডাল ও মশলা ইত্যাদি। তিনি আরো বলেন, নিঃস্ব, ফকির হয়ে গেলাম। আর মাথা তুলে দাড়াতে পারব না। ব্যাংকে লোন আছে আমার।
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন।
ডেল্টা টাওয়ারের আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে
গুলশানে বহুতল ডেল্টা লাইফ টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার বিকেল ৩টা ৪৮ মিনিটে গুলশান ২ নম্বরে উত্তর সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের পাশে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট প্রায় ১৫ মিনিট চেষ্টা চালিয়ে বিকেল ৪টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
বারিধারা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভবনের চতুর্থ তলায় একটি সার্ভার কক্ষের পাশেই শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুততর সময়ের মধ্যেই আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।
ভবনটি পর্যবেক্ষণ শেষে তিনি বলেন, আমরা এখানে এসে দেখেছি- ভবনটিতে ভেন্টিলেশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। পুরো ভবনে এখন তল্লাশি চালানো হবে। এখানে অগ্নিনির্বাপনের কি কি ব্যবস্থা আছে তা ক্ষতিয়ে দেখা হবে। ভবনটি ১৫তলার বেশি বলেও জানান আবুল কালাম আজাদ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।