পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সবাইকে সাথে নিয়ে বাজেট তৈরি করা হবে। কারো উপর বাজেট চাপিয়ে দেয়া হবে না। দেশের সকল মানুষকে সম্পৃক্ত করা হবে। আর হাওড় অঞ্চলসহ পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য আলাদা বরাদ্দ দেয়া হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পকে দুই ভাগে ভাগ করা হবে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে সংক্ষিপ্ত সময়ে অন্যটা হচ্ছে দীর্ঘ সময়ে। এ সময়ে পরিকল্পনা কমিশনকে নির্দেশনা দেয়া হবে। জেলা বাজেটের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাজেটের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো রেভিনিউ। সুতরাং যেখানে আয় হবে সেখানে ব্যয় ও থাকবে। জেলায যদি বাজেট দেয়া হয় সেই খান থেকে আয়ও আসতে হবে। সব জেলা থেকে তো আয় সমান হয়না। ফলে জেলা বাজেট দিলে একটা প্রতিযোগীতা শুরু হবে। এ ধারনাটা ভাল কিন্তু বাস্তবায়নে তিনি দ্বিমত পোষন করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সাথে প্রাক-বাজেট আলোচনার সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আসন্ন বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল-এর ধারাবাহিক প্রাক বাজেট আলোচনার অংশ হিসাবে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সচিবরা ছাড়াও সাবেক অর্থ সচিব মুসলিম চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের অবস্থা যাই হোক না কেন গাড়ি ও অফিস ভাড়া পেতে মড়িয়া প্রকল্প পরিচালকরা (পিডি)। অথচ উপসচিব পর্যায়ের সব কর্মকর্তাদেরকে সরকার ব্যাক্তিগত গাড়ি সুবিধা দিয়েছে। এজন্য আগামী বাজেটে সব ধরনের প্রকল্প থেকে গাড়ি সুবিধা বাতিল করা উচিত। একই সঙ্গে উন্নয়নে সমন্বয়হীনতা দূর করাও জরুরী। সবাই দূর্নীতির কথা বলে অপচয় নিয়ে চিন্তা করে না। বাজেটে এই বিষয়গুলো সমাধানে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও সচিবরা। আলোচনায় অংশ নিয়ে পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন বলেন, এখন উপসচিব কর্মকর্তাদেরকে সরকারিভাবে গাড়ী দেয়া হচ্ছে। তাহলে প্রকল্পে পরিচালকদেও কেন আলাদাভাবে গাড়ী দেয়া হয়। আমার মনে হয়, আগামী বাজেট থেকে পিডিদের গাড়ী দেয়ার অপশনটি বন্ধ করে দেয়া উচিত।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমেদ বলেন, আমরা দুর্নীতি নিয়ে সবাই কথা বলি, কিন্তু সরকারের বিভিন্ন সেক্টরের অপচয় নিয়ে কথা বলি না, চিন্তাও করি না। দেখা যায়, ভাল ভাল গাড়ি পড়ে আছে, কিন্তু ব্যবহার হচ্ছে না। আমরা দক্ষ মানুষ গড়তে চাই কিন্তু প্রশিক্ষণ খাতে তেমন বরাদ্দ চাই না। আগামী বাজেটে বিভিন্ন সেক্টরের প্রশিক্ষণ থাতে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। স্থানীয় সরকার সচিব এস এম গোলাম ফারুক বলেন, প্রতি বাজেটেই বলা হয়, নতুন করদাতা বাড়ানো হবে। আমরা মনে হয়, মাঠ পর্যায়ে নতুন করদাতা সনাক্ত করতে স্থানীয় সরকারকে কাজে লাগানো উচিত। প্রতি পরিবারে চাকুরীর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে স্থানীয় সরকারকে অবম্যই শক্তিশালী করতে হবে।
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব মাহবুব আলী বলেন, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপের (পিপিপি) বহু প্রকল্প নেয়ার কথা বলছি। কিন্ত এগুলোর তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না। একেকটা প্রকল্প বাস্তব রূপ পেতে ৪-৫ বছর সময় লেগে যাচ্ছে। পিপিপি অফিস বলছে, তারা বিনিয়োগকারী পাচ্ছে না। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলে, বিনিয়োগকারীরা টার্ম এন্ড কন্ডিশন বদলাতে বলছে, ঋণের সুদের হার কমাতে বলছে। পিপিপির বাস্তব অগ্রগতি দেখতে হলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিক কবির বিন আনোয়ার বলেন, উন্নয়নে চরম সমন্বয়হীনতা রয়েছে। ৫৩টি মন্ত্রণালয় যে যার মত করে কাজ করছে। হাওরে সবাই উন্নয়ন প্রকল্প নিচ্ছে। কিন্ত যে যার মতো করে করছে। এতে সুষম উন্নয়ন হচ্ছে না। সাবেক অর্থসচিব মুসলিম চেীধুরী বলেন, প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়নে বিস্তর ফারাক রয়েছে। দেখা যায় নতুন করে সংশোধন করার সময় শেষ হয়ে যায় তবুও বাস্তবায়ন হয়না। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া চাই। কারণ এতে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য অর্জিত হচ্ছেনা। তিনি বলেন, উন্নয়ন বিকেন্দ্রীকরণ করার নামে গ্রামে গঞ্জে অবকাঠামো সুবিধা গড়ে তোলা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে এসব অবকাঠামো থেকে মানুষ সুবিধা নেয়ার জন্য আসবে। কিন্তু আসলে তা হচ্ছেনা। এজন্য ডিজিটালাইজেশনের দিকে যেতে হবে। সুবিধা নেয়ার জন্র মানুষ আসেবে না, মানুষের কাছে সুবিধা পৌছে দিতে হবে।
এদিকে অপর এক অনুষ্ঠানে ‘পুঁজিবাজার কত নিচে নামতে পারে তা আমার জন্য চ্যালেঞ্জ’ এমন মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনারা আমার ওপর বিশ্বাস রাখেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজার কত নিচে যেতে পারে আমি দেখতে চাই। এটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জ। আপনারা নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখবেন। আমার ওপর বিশ্বাস রাখবেন। বাজারের ইনডেক্স (সূচক) কত হবে তা আমি বলব না। ইনডেক্স ঠিক করে দেবে অর্থনীতি। একই সঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সরকার পুঁজিবাজার নিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করছে। বাজার ভালো হবেই। পুঁজিবাজারের সফলতা আসবেই। কেননা পুঁজিবাজার আর অর্থনীতি একই সূত্রে গাঁথা। পুঁজিবাজারকে বাদ দিয়ে অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।
গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আয়োজিত ‘বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা কনফারেন্স ঢাকা ২০১৯’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার ওপর আপনারা বিশ্বাস করবেন। শুধু বিশ্বাসের ওপর ভর করে বিনিয়োগ করবেন না, বুঝে শুনে বিনিয়োগ করবেন। আমরা সবাইকে বিজয়ী করব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করব এবং যারা বিনিয়োগ করবে তাদের বিজয়ী করব। এই বাজারে আমরা কেউ কারও শত্রæ নয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি অবাক হয়ে গেলাম। পত্রিকায় আমার ছবি ছাপা হচ্ছে। আমার কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়ে গেছে। আমার কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়লে আমার কী লাভ। কোম্পানি তো শেয়ার বিক্রি করে না। যদি বিক্রি করে সেটা ক্ষতিকর। অনেক কোম্পানি এমন আছে।
‘আমাদের ওপর বিশ্বাস করে প্রচুর বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেছেন। তাদের ওপর আস্থা রেখে আমি কিন্তু শেয়ার বিক্রি করতে পারিনি। আমার শেয়ার দাম তিন হাজার টাকা হয়েছিল। আমি কয়েক হাজার কোটি টাকা মার্কেট থেকে নিতে পারতাম। আমি একটা শেয়ারও বিক্রি করিনি। পরবর্তীতে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে অনুমতি নিয়ে আমার সব শেয়ার বিক্রি করেছি। কিন্তু আমি চাইলে অনেক প্রফিট করতে পারতাম। এটা কিন্ত অন্যায়’ যোগ করেন সিএমসি কামালের সাবেক মালিক আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, আমরা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য মিথ্যা রটিয়ে আরেকজন ফেলো ক্লায়েন্টকে ঠকাই। নিজের পরিবারের সদস্যের মতো আরেকজন ব্যবসায়ীকে ঠকাই। এটা ঠিক না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য শিক্ষা নিতে হবে। প্রথমে ঠিক করতে হবে আমরা কোথায় যাচ্ছি। এটা মাছবাজার নয়, এটা কাঁচাবাজার নয়। এ বাজার আমাদের দ্বারাই পরিচালিত। আমরাই খরিদ্দার, আমরাই বিক্রেতা। আমাদের মধ্যে সবাই ভালো আমি বলব না। এখানে কেউ কেউ আসে চিন্তা করে কীভাবে কত তাড়াতাড়ি বড়লোক হওয়া যায়। এটা কিন্ত ঠিক না।
শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের যাকাত দেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যাকাত দেন না। যাকাত না দিলে বাজার কীভাবে বড় হবে। আপনাদের টাকা কীভাবে হালাল হবে। আপনারা যাকাত দেন।
আ হ মুস্তফা কামাল বলেন, লাভবান হতে কিছু কিছু মানুষ আছে কান কথা বলে। মিথ্যা কথা বলে। এটা না করে আমাদের সবাইকে মিলেমিশে লাভবান হতে হবে। আমাদের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার একসঙ্গে গাঁথা। পুঁজিবাজারকে বাদ দিয়ে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না।
বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, বিএসইসির কমিশনার প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নিজামী, স্বপন কুমার বালা এবং কামারুজ্জামান প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।