Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৭ মিনিট আগেই অবতরণ!

ছিনতাইকারীকে ব্যস্ত রেখেই নামানো হয় যাত্রীদের ময়ূরপঙ্খীর পাইলট ক্রুসহ ৬ জনের ভাষ্য

রফিকুল ইসলাম সেলিম : | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

কেবিন ক্রু শাফিকা নাসিম নিম্মীর সঙ্কেত পেয়ে ককপিটে বসেই পাইলট গোলাম সাফি ক্যামেরা অন করেন। তিনি দেখেন ককপিটের দরজায় লাথি মারছেন পলাশ আহমেদ। তার এক হাতে ‘পিস্তল’ অন্য হাতে ‘বোমা’। পাইলটের নির্দেশে ফার্স্ট অফিসার মুনতাসির মাহমুদ দ্রæত বিষয়টি শাহ আমানত বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে জানিয়ে দেন। নির্ধারিত সময়ের সাত মিনিট আগেই চট্টগ্রামে জরুরী অবতরণ করে উড়োজাহাজ ময়ূরপঙ্খী।
উড়োজাহাজটির পাইলটসহ ছয়জনের বক্তব্য রের্কডের পর এমন তথ্য জানান বহুল আলোচিত বিমান ছিনতাই প্রচেষ্টা মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা (আইও) পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া। গতকাল শুক্রবার তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ওই সময় পাইলট কেবিন ক্রুকে ইন্টারকমে পলাশের সাথে কথা বলিয়ে দিতে বলেন। পলাশকে আলাপে ব্যস্ত রেখেই ইমার্জেন্সি দরজা খুলে দেওয়া হয়। নিরাপদে নামিয়ে আনা হয় সব যাত্রীকে। সর্বশেষ একজন কেবিন ক্রু ছাড়া সবাই ওই বিমান থেকে নেমে পড়েন।
আইও বলেন, পাইলটসহ ছয়জন ঘটনার ব্যাপারে তাদের বক্তব্য দিয়েছেন আমরা তা রের্কড করেছি। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে বিমান ছিনতাই প্রচেষ্টার আরও স্পষ্ট চিত্র পাওয়া গেছে বলেও দাবি করেন তিনি। তবে কি উদ্দেশে পলাশ আহমেদ বিমানটি ছিনতাই করতে চেয়েছিলেন তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে জানান আইও। তিনি বলেন, পলাশের উদ্দেশ্যে জানতে তার কথিত স্ত্রী নায়িকা শিমলাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গত ২৪ ফেব্রæয়ারি ওই ঘটনার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পলাশ আহমেদ। ঢাকা থেকে ১৪৮ জন যাত্রী নিয়ে সেদিন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যেই রওনা হয়েছিল বিমানের ময়ূরপঙ্খী। চট্টগ্রাম হয়ে রাতেই দুবাই পৌঁছানোর কথা ছিল উড়োজাহাজটির। তবে শাহজালাল বিমান বন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছু সময় পরে এটি ছিনতাইকারীর কবলে পড়লে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবরের শিরোনাম হয় ময়ূরপঙ্খী। কম সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো, বিমানের পাইলট, ক্রুসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা।
এই ঘটনায় সিভিল এভিয়েশনের প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার বাদি হয়ে নগরীর পতেঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। নিহত পলাশ আহমেদ ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মামলার আইও রাজেশ বড়ুয়া বলেন, সেদিন ময়ূরপঙ্খীতে সাতজন ক্রু ছিলেন। তাদের মধ্যে পাইলট, ফার্স্ট অফিসার ও চারজন কেবিন ক্রুর বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- ময়ূরপঙ্খীর পাইলট মো. গোলাম সাফি, ফার্স্ট অফিসার মুনতাসির মাহমুদ, কেবিন ক্রু শাফিকা নাসিম নিম্মী, হোসনে আরা, শরীফা বেগম রুমা ও আব্দুর শাকুর মুজাহিদ। সেদিন সবার শেষে বিমান থেকে নামা কেবিন ক্রু সাগর দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি। এর আগে শাহ আমানত বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সরওয়ার-ই-জাহান এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বরত দুই কর্মকর্তার বক্তব্য নিয়েছেন আইও।
তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, উড়োজাহাজে যাত্রী পলাশ আহমেদ ১৭-ডি নম্বর আসনে বসা ছিলেন। উড্ডয়নের ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পলাশ তার নির্ধারিত আসন থেকে উঠে সামনের একটি আসনে গিয়ে বসেন। সিনিয়র কেবিন ক্রু শফিকা নাসিম নিম্মী বিষয়টি লক্ষ্য করেন এবং ক্রু হোসনে আরাকে পলাশের তার নির্ধারিত আসনে বসিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। হোসনে আরা অনুরোধ করার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন পলাশ। ডান হাতে পকেট থেকে পিস্তল বের করে হোসনে আরার মাথায় ধরে বলেন, ককপিটের দরজা খুলতে বলেন, আমি পাইলটের সঙ্গে কথা বলব।
শফিকা নাসিম নিম্মী সঙ্কেতের মাধ্যমে ককপিটে থাকা পাইলটকে বিষয়টি জানিয়ে দেন। পাইলট ও ফার্স্ট অফিসার লাইভ স্ক্রিন অন করে সেখানে পলাশের গতিবিধি দেখতে পান। পাইলট বিষয়টি শাহ আমানত বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানিয়ে যাত্রীদের রক্ষায় প্রস্তুতি রাখতে বলেন। এরপর পাইলট এবং ফার্স্ট অফিসার পলাশের সঙ্গে কথা বলেন। পলাশ তাদের জানান, একটি সমস্যা নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান। তা না হলে তিনি ক্ষতি করবেন। পাইলট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন বলে পলাশকে আশ্বস্ত করেন। এর মধ্যে বারবার পলাশ তাগাদা দিতে থাকেন এবং পাইলট বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করেন। একপর্যায়ে পলাশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক কথা বলার দায়িত্ব পান ক্রু শাহেদুজ্জামান সাগর। ব্যতিব্যস্ত রাখতে পলাশকে চা অথবা কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
আইও রাজেশ বড়ুয়া বলেন, তাকে ব্যস্ত রেখেই নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৭ মিনিট আগে উড়োজাহাজের জরুরি অবতরণ করান পাইলট। আর এত দ্রæত অবতরণের বিষয় বুঝতে পারেনি পলাশ। পলাশকে সাগরের জিম্মায় রেখে পাইলট যাত্রীদের নামিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সবাই নেমে যাওয়ার পর থেকে কমান্ডো অভিযান পর্যন্ত পলাশের কর্মকাÐ বিষয়ে সাগরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজেশ বড়ুয়া। গত ২৬ ফেব্রæয়ারি আইওর কাছে ওই উড়োজাহাজ থেকে উদ্ধার করা পিস্তল ও বিস্ফোরকসদৃশ বস্তুসহ বেশকিছু আলামত জমা দেয় র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো টিম। এরপর ১৩ মার্চ সিআইডি পিস্তলের ব্যালাস্টিক পরীক্ষার প্রতিবেদন দেয় কাউন্টার টেরোরিজমের হাতে। এতে বলা হয়, পিস্তলটি ছিল খেলনা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ