দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর: আরবী ‘ইস্তেমা‘ শব্দটির বাংলা অর্থ হচ্ছে,শ্রবণ-শোনা, মনোযোগসহ শ্রবণ। আর ‘ইজতেমা’ মানে হচ্ছে, সম্মিলন, সাক্ষাৎ, বৈঠক, সভা, সমাবেশ, সম্মেলন, সমাজ, সমাজবদ্ধতা, সামাজিকতা, সমাজজীবন।
শব্দ দু’টির অর্থের প্রতি মনোযোগ দিলে ‘বিশ^ ইস্তেমা’ ও ‘বিশ^ ইজতেমা’-বাক্যদ্বয়ের মর্মার্থ বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। অর্থাৎ বিশ^ মুসলিমের মনোযোগসহ শোনার বিষয় বা অনুষ্ঠান; বিশে^র মুসলমানদের সম্মিলন বা সম্মেলন বা সভা-সমাবেশ-বৈঠক। তবে ‘ইস্তেমা’-এর স্থলে ‘ইজতেমা’ শব্দটি অধিক উপযোগী। এ ছাড়া, যেহেতু পরিচিত বিশে^র অনেক বা বেশিরভাগ দেশই এতে অংশগ্রহণ করে, তাই এটিকে ‘বিশ^ ইজতেমা’ বলতে অবাস্তব বা দোষের কিছু নেই।
আরবী ‘দীন’ শব্দটি থেকে ‘দীনী’ শব্দটির উৎপত্তি। ‘দীন’ শব্দটি যদিও ‘ধর্ম’,‘ধর্ম-বিশ^াস’ ‘প্রতিদান ’, ‘আদশর্’, ‘জীবন ব্যবস্থা’, ‘আইন-বিচার’ ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়; তারপরও ব্যপকভাবে শব্দটি ‘ধর্ম’- অর্থেই অধিক পরিচিত ও ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং সর্ব-সাধারণের কাছে এই ‘ধর্ম’ অর্থেই তা অধিক বোধগম্য। ধর্ম থেকে ‘ধর্মীয়’-এর অনুরূপ ‘দীন’-থেকে ‘দীনী’ অর্থাৎ ‘ধর্মীয়’।
দা‘ওয়াত: ‘দা‘ওয়াত’ আরবী শব্দটির অর্থ হচ্ছে, ডাক, আহবান ও প্রচার।‘দা‘ওয়াত’-এর কথা বলতে গেলে অনিবার্য প্রশ্ন দাঁড়ায় কিসের দা‘ওয়াত? কেন এই দা‘ওয়াত? তার জবাবে বলা হবে, ধর্মের প্রতি দা‘ওয়াত ও আহŸান। কেন এই দা‘ওয়াত? তার জবাব হচ্ছে, ‘তাবলীগ’-এর প্রয়োজনে দা‘ওয়াত বা তাবলীগের দায়িত্ব পালন কল্পে দা‘ওয়াত তথা প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে ধর্মের প্রতি বা ধর্ম পালনের প্রতি আহŸান।‘তাবলীগ’ এর মানে হচ্ছে, প্রচার, ঘোষণা বা পৌঁছে দেওয়া, ‘দ্বীনী দা‘ওয়াত’ মানে ধর্মের বাণী প্রচার করা বা পৌঁছে দেওয়া। সুতরাং সহজবোধ্যভাবে আমরা বলতে পারি,‘দা‘ওয়াত ও তাবলীগ’ মানে ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসার এবং ইসলামের মর্মবাণী-পয়গাম সারা বিশে^ পৌঁছে দেওয়া, ছড়িয়ে দেওয়া।”
‘দীনী-দা‘ওয়াত’ এর সংজ্ঞায় অন্যতম একটি সংজ্ঞা হচ্ছে,“মানুষকে ইসলামের দিকে নিয়ে আসার জন্য কার্যগত বা বাচনিক সকল প্রকার প্রচেষ্টা চালানো”। আর এরই অপর নাম হচ্ছে ‘ইসলামী দা‘ওয়াহ’ বা ‘দীনী দা‘ওয়াহ্’। (প্রফেসর ড. আহমদ গালূশ, আল-আযহার বিশ^দ্যিালয়, মিসর)
“বাচনিক-দা‘ওয়াত যথা আলাপ-আলোচনা, ওয়ায-নসীহত, কথোপকথন, বক্তৃতা, দরস ইত্যাদি। আর কার্যগত যথা দা‘ঈ(দা‘ওয়াত দানকারী) কর্তৃক চারিত্রিক তথা আচরণগত নমুনা পেশ, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (স)-এর আনুগত্য চর্চা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, সমাজসেবা, সংগঠন, লেখালেখি ইত্যাদির মাধ্যমে উদ্দিষ্ট লক্ষ্য অন্যকে পেীঁছানো বা অনুপ্রাণিত করানো হলো দা‘ওয়াহ।”(প্রাগুক্ত)
প্রসঙ্গ কথা: ইসলাম ধর্মের মৌলিক ও সেবামূলক যত কাজ আমরা করে থাকি তার সবগুলোর উদ্দেশ্যই হচ্ছে, মুসলমানদের ঈমান-আমল, তাকওয়া-পরিশুদ্ধি, সততা ও যোগ্যতা অর্জিত হয়ে যেন আমরা ইহকাল ও পরকাল উভয় জাহানে সফল ও সোনার মানুষ হতে পারি। আর এ লক্ষ্যে পরিচালিত মসজিদ-মাদরাসা,খানকা,নায়েবে নবী,হাক্কানী আলেমগণ,ওলী-আউলিয়া,পীর-মাশায়েখ,ইমাম-খতীব-বক্তা ও দা‘ঈগণÑএক কথায় সকলের মেহনত,তৎপরতার অবদান ও সফলতা অনস্বীকার্য এবং কমবেশি সকলেই প্রশংসারযোগ্য। অবশ্য, এটি লক্ষণীয় যে, এঁদের সকলের ঈমান-আমল-তাকওয়া ও খাঁটি মুসলমান বানানোর যৌথ মেহনতের পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষার সঙ্গে জড়িতরা মৌলিক দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার দিকটিকে যেমন প্রাধান্য দিয়ে থাকেন তেমনি পীর-মাশায়েখগণ আতœশুদ্ধি ও আল্লাহ্র পরিচয়-প্রেম-ভালোবাসাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। একইভাবে তাবলীগ সংশ্লিষ্টরা ‘দা‘ওয়াত’-এর মেহনতের প্রতি অধিক জোর দিয়ে থাকেন। মহান আল্লাহ্ সকলের মেহনত ও সেবাকে কবূল করুন!
বাস্তবতার নিরীখে বিচার করতে গেলে বলতে হবে যে, বর্তমানকার ‘দা‘ওয়াত ও তাবলীগ’ নামের পরিচিত যে-জামাতকে আমরা জানি ও চিনি। এদের মেহনত-তৎপরতার ব্যাপকতার পাশাপাশি, অল্প সময়ে, সকল মহলে, এতো অধিক সংখ্যক মুসলমানের ঈমান-আমল-তাকওয়ার দিকে পরিবর্তন, সুন্নাত-নফলের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি, সত্যিই আল্লাহ্ তা‘আলার বিশেষ দান।
তারপরও, পুরো কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা‘ ও কিয়াসকে সামনে রেখে শরীয়তের মাপকাঠিতে ‘তাবলীগ’ বিষয়টিকে, আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।