Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অস্ত্র আইন সংস্কার প্রস্তাব পাস : নিহতদের তালিকা প্রকাশ

ক্রাইস্টচার্চ ট্র্যাজেডি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সর্বমোট পাঁচজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. সুফিউর রহমান। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক গতকাল থেকে লাশ হস্তান্তর শুরু করেনি নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ। তবে এ সপ্তাহের মাঝামাঝি এটা শুরু হতে পারে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে হতাহতদের তালিকা প্রকাশ করা হলেও সরকারিভাবে আগামীকাল বুধবার প্রকাশ করা হতে পারে। এর আগে গত রোববার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, নিহতদের লাশ ফিরিয়ে আনতে সরকার তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যাবেন। দেশটির সরকার নিহত বাংলাদেশিদের প্রত্যেকের পরিবারের অন্তত একজন সদস্যকে সেদেশে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। ক্রাইস্টচার্চে হতাহতের সহায়তা ফান্ডে সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে হলিউডের অভিনেতা, অভিনেত্রী, লেখকরা। জানা গেছে, ম্যাডোনা, কমেডিয়ান রক, লেখক টিফানি ডি বার্তোলোরা ফান্ডে জমা দিয়েছেন ১৮ হাজার ডলারেরও বেশি অর্থ। নিউজিল্যান্ড সরকার একটি দিনকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করবে এবং দাফনের জন্যও একটি দিনকে নির্ধারিত করবে বলে জানা গেছে। শোকার্ত পরিবারকে সান্ত¦না দিতে ও তাদের সাতে একাত্মতা প্রকাশের জন্য ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগ সেক্রেটারি জেনালে শায়খ মোহাম্মদ আলিসা নিউজিল্যান্ড যাবার ঘোষণা দিয়েছেন। অস্ত্র আইন সংস্কারের এক প্রস্তাব নিউজিল্যান্ডের মন্ত্রিসভায় পাস হবার পর অনেকেই স্বেচ্ছায় তাদের অস্ত্র জমা দিতে শুরু করেছেন। এদিকে লাশ গোসলে সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবী আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। অস্ট্রেলিয়া থেকে উড়ে এসেছেন সেখানকার অর্থনীতির লেকচারার কামরান নাসিরও। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড, এএফপি, আল-জাজিরা ও বিবিসি এসব তথ্য জানিয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যাকারী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্টের ফাঁসি চান তার চাচাতো বোন। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে বসবাসকারী ট্যারান্টের বোন জানিয়েছেন, মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের হামলাকারী ভাইয়ের মৃত্যুদন্ডই প্রাপ্য। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলা চালিয়ে ট্যারান্ট ৫০ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। এটা জানার পর থেকে মনে হচ্ছে, তার আত্মীয় হওয়াটা আমার জন্য দুর্ভাগ্যের।
সংস্কার হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের অস্ত্র আইন
নিউজিল্যান্ডের অস্ত্র আইন সংশোধন হচ্ছে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ তাকে নীতিগতভাবে এতে সম্মতি দিয়েছে। শুক্রবারের ওই হামলার পর ১০ দিনের মধ্যে এই সংস্কার করার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীপরিষদ। বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে জাসিন্ডা আরডের্ন বলেছেন, আগামী ২৫ মে’র মধ্যে এ সংশোধনীর বিস্তারিত আসবে। নিউজিল্যান্ডে অস্ত্র আইনে যেকেউ অস্ত্র কিনতে পারেন। তার জন্য লাইসেন্স প্রয়োজন। বয়স ১৬ বছর হলেই এ লাইসেন্স দেয়া হয়। একবার লাইসেন্স হাতে পেলে একজন ব্যক্তি একাধিক অস্ত্র কিনতে পারেন। এ নিয়ে দেশটির মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা।
খুনির যোগসূত্র থাকা বাড়িতে অভিযান অস্ট্রেলীয় পুলিশের
পূর্ব ঘোষণা দিয়ে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে গুলি করে ৫০ মুসল্লিকে হত্যা করা অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্টের সঙ্গে যোগসূত্র থাকা দুই বাড়িতে সোমবার অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। দুই বাড়ির একটি স্যান্ডি বিচ শহরে এবং অপরটি লরেন্স শহরে অবস্থিত। এ দুটি এলাকা গ্রাফটন শহরের কাছে অবস্থিত, যেখানে বেড়ে উঠেছে খুনি ব্রেন্টন ট্যারান্ট। তবে অভিযানে ‘বর্তমান বা আসন্ন হুমকির’ কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
‘ব্যক্তি হিসেবে আমি হামলাকারীকে ভালোবাসি’
সিলেটের গোলাপগঞ্জের জাঙ্গালহাটা গ্রামের নুরুদ্দিনের মেয়ে হোসনে আরা পারভীন (৪২) ও স্বামী ফরিদ উদ্দিনসহ কয়েক দশক ধরে ক্রাইস্টচার্চে ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে হামলার সময় চারদিকে যখন গোলাগুলির শব্দ হচ্ছে পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্বামী ফরিদ উদ্দিনকে বাঁচাতে পুরুষদের কক্ষে ছুটে যান তিনি। হুইল চেয়ারে থাকা ফরিদ অন্যের সহায়তায় আগেই বের হয়ে যান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি পারভীনের। স্ত্রীর সেই হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, তার (হত্যাকারী) জন্য প্রার্থনা করি, আল্লাহ তাকে সঠিক পথ দেখাবেন। তিনি বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে হারিয়েছি। কিন্তু আমি হত্যাকারীকে ঘৃণা করি না। আমি ব্যক্তি হিসেবে হামলাকারীকে ভালোবাসি। কিন্তু তিনি যা করেছেন, আমি তা সমর্থন করতে পারছি না। আমার মনে হয়, জীবনের কোনো একসময়ে তিনি হয়তো ভীষণ আঘাত পেয়েছেন। তবে তিনি সেই আঘাতকে ইতিবাচক উপায়ে প্রকাশ করতে পারেননি। স্ত্রীকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করেন ফরিদ উদ্দিন। তার স্ত্রী কমিউনিটিতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতেন। মসজিদে শিশুদের পড়াতেন। স্ত্রী অন্যদের বাঁচাতে নিজের জীবন দিয়েছেন এবং এটাই ছিল তার শেষ কাজ। আমি আমার মেয়েকে বলেছি, তার এই স্মৃতি নিয়েই আমাদের বাঁচা উচিত। তার জন্য কান্না না করে তার জন্য সুখী হওয়া উচিত আমাদের।
নিহতদের তালিকা
নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ হচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড, লন্ডনের ডেইলি মেইলসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় এমন তালিকা প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশ করা হয়েছে তাদের ছবি, নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। এর মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশী, ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মিসর, সিরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিজি, জর্ডান, সউদী আরব, সোমালিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। নিহতদের মধ্যে রয়েছে দুইটি শিশু ও ২টি কিশোর। তার মধ্যে সবচেয়ে ছোট শিশুটির বয়স মাত্র তিন বছর। তার নাম মুকাদ ইব্রাহিম। নিহত আরেকটি শিশু হলো আবদুল্লাহ দিরিয়া। তার বয়স ৪ বছর। নিহত দুই কিশোর হলো সায়েদ মিলনে (১৪) ও হামজা (১৬)। ওই তালিকায় আরো নাম রয়েছে ওসামা আদনান আবু কাইক (৩৭), মহসিন আল হারবি (৬৩), জিহান রাজা (৩৮), লিন্ডা আর্মস্ট্রং (৬৫), কামাল দারিশ (৩৯), মাহবুব খন্দকার (৬৫), খালেদ মুস্তফা (৪৫), ড. হারুন মাহমুদ (৪০), মোহাম্মদ আবদুস সামাদ (৬৬), নাঈম রশিদ ও তার ছেলে তালহা (২১), হুসনে আরা পারভিন (৪২), আলি ইলমাদানী (৬৬), তরিক রহমান (২৪), সৈয়দ জাহানদাদ আলি (৪৩), মনির সোলায়মান (৬৮) ওজায়ের কাদের (২৪), মোহাম্মদ ইমরান খান (৪৭), আমাদ জামালুদ্দিন আবদুল গনি (৬৮), সৈয়দ আরীব আহমেদ (২৬). মাতুল্লাহ সাফি (৬৫), হুসাইন মোস্তফা (৭০), রমিজ ভোরা (২৮), লিলিক আবদুল হামিদ (৫৮), হাজি দাউদ নবী (৭১), ফরহাজ আহসান (৩০), মোহাম্মদ আলি ভোরা (৫৮), মোজাম্মেল হক (৩০), গোলাম হুসেইন ( ৬০), আত্তা ইলায়ান (৩৩), করম বিবি (৬০), হুসেইন আল উমারি (৩৬), মুসা ওয়ালি সুলেমান প্যাটেল (৬০), মোহাম্মদ ওমর ফারুক (৩৬), আবদেল ফাত্তাহ কাসেম (৬০), জুনায়েদ ইসমাইল (৩৬) ও আশরাফ আলীর (৬১)। নিখোঁজ রয়েছেন জাকারিয়া ভুঁইয়া নামে এক অভিবাসী।
‘নিউ জিল্যান্ডের সেই খুনির ভুলে বেঁচে গেছেন অনেক মানুষ’
নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের লিনউড মসজিদে খুনি ব্রেন্টন ট্যারান্ট ভুল পাশ দিয়ে প্রবেশ করেছে। এতে মসজিদের ভেতরে থাকা অনেক মুসল্লি লুকিয়ে পড়ার জন্য সময় পেয়েছেন। খুনির গুলি থেকে বেঁচে গিয়েছেন অনেকে। শুক্রবারের ওই বন্দুক হামলায় বেঁচে যাওয়া মোহাম্মদ আখিল উদ্দিন এ কথা জানিয়েছেন। নিউ জিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম স্টাফ-এর এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানা গেছে।
লাশ আনতে যেতে আগ্রহীদের যোগাযোগের অনুরোধ
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বাংলাদেশিদের লাশ ফিরিয়ে আনতে তাদের প্রত্যেকের অন্তত একজন স্বজনকে সে দেশে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। এ জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করতে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোকে যোগাযোগ করতে বলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নিহতদের পরিবারের যে ব্যক্তি লাশ আনতে যাবেন, তার ভিসাসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা হবে। এ জন্য তাদেরকে জরুরি ভিত্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারি সচিব (কল্যাণ) ওয়ালিদ বিন কাসেমের ফোন নম্বর এবং ই-মেইল অ্যাড্রেস দেয়া হয়েছে। ফোন নম্বর ০১৭১৩১১১২২৭ এবং ই-মেইল অ্যাড্রেস [email protected]। এছাড়া www.immigration.govt.nz ওয়েবসাইটে আবেদনের পরেও উপরোক্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন নিউজিল্যান্ড যেতে আগ্রহীরা।



 

Show all comments
  • A.F.M Tariqul Islam ১৯ মার্চ, ২০১৯, ৪:৩৪ পিএম says : 0
    Physically sick Farid uddin is a aatel , he has many problems. He loves that Christian terrorist ( JONGOI ) and don't dislike / hate that terrorist . He prays for him. Fiasco ? What a drama ? After killing 50 persons , how Allah show him correct way ? Should there be no justice for Christian terrorist ( JONGO ) ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিউজিল্যান্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ