বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজন কর্মকারের রহস্যময় মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ডা. রাজনের। তবে স্বজন ও সহকর্মীরা অভিযোগ করছেন, তার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। এটি একটি হত্যাকান্ড। গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের বাসা থেকে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হলে তার মৃত্যু হয়। ডা. রাজন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্রমজুমদারের বড় মেয়ে ডা. কৃষ্ণা কাবেরীর স্বামী। ডা. কৃষ্ণা নিজেও বিএসএমএমইউয়ের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
অন্যদিকে ডা. রাজনের মৃত্যুর খবরে রোববার সকাল থেকেই স্কয়ার হাসপাতালে ভিড় করতে থাকেন তার সহকর্মী ও স্বজনরা। এ সময় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
দুপুরে রাজন কর্মকারের মামা সুজন কর্মকার সেখানে সাংবাদিকদের বলেন, গত (শনিবার) রাতে রাজনের স্ত্রী কৃষ্ণা আমার বোনকে (রাজনের মা) ফোন দিয়ে জানায়, রাজন মারা গেছে। এসময় কৃষ্ণা অস্বাভাবিক কথাবার্তা বলে। সে বলে, আপনার ছেলে মারা গেছে। উল্টাপাল্টা কিছু করলে সেও আত্মহত্যা করবে। ডা. রাজনকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন সুজন কর্মকার।
তিনি আরো বলেন, আমাকে আমার বোন (রাজনের মা) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে বলে, রাজন মারা গেছে। আমি তখনই হাসপাতালে ছুটে আসি।
ডা. রাজনের একাধিক সহকর্মী বলেন, তার এই মৃত্যু কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। কারণ, এর আগেও রাজনের স্ত্রীর পরিবারের লোকজন তাকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। ওই সময় তাকে আইসিইউতেও ভর্তি করাতে হয়েছিল। রাজনের সহকর্মী বিএসএমএমইউ নিউরোলোজি বিভাগের চিকিৎসক শাহ নেওয়াজ বারী জানান, আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। কারণ এর আগেও রাজনকে নির্যাতন করা হয়েছে।
বিএসএমএমইউয়ে রাজনের বিভাগেরই চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. কাজী বিল্ললুর রহমান বলেন, নিহত রাজনের পরিবারের লোকজন তার লাশের ময়নাতদন্ত চায়। সেক্ষেত্রে কারও কোনো আপত্তি নেই। বিএসএমএমইউয়ের চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা এখানে এসেছে। সবার দাবি, ঘটনার একটি সুষ্ঠু তদন্ত হোক।
বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির মহাসচিব ও ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির বুলবুল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমরা রাজনের মৃত্যুর ঘটনাকে স্বাভাবিক মনে করছি না। খবর পেয়ে আমরা রাতেই স্কয়ার হাসপাতালে আসি। এসে পেছনের ঘটনাপ্রবাহ জানার পর বুঝেছি, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। আমরা মামলা করব। ময়নাতদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করছি।
রাজনকে হত্যা করা হয়েছে বলে কেন মনে করছেন জানতে চাইলে হুমায়ুন কবির বুলবুল বলেন, নামকরা ছাত্র ছিল সে। তার কানো অসুস্থতা ছিল না। মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। পারিবারিক কলহও ছিল। এর আগেও নির্যাতনের শিকার হয়ে পপুলার, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিল রাজন। তাই তার মৃত্যুকে স্বাভাবিক মনে করার কারণ নেই।
ডা. রাজনের লাশের ময়নাতদন্তে স্বাভাবিক মৃত্যু পেলে কিছু বলার থাকবে না বলেও জানান হুমায়ুন কবির বুলবুল। তিনি বলেন, তবে কেউ তদন্ত প্রভাবিত করলে চাইলে আমরা ছাড় দেবো না। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।
শেরে বাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি। রোববার দুপুরে মন্ত্রীর (খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার) লোকজন হাসপাতালে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে কথাকাটি হয়। এক পর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় ফোন করলে বিষয়টি জানতে পারি। পুলিশের একটি টিম হাসপাতালে সুরতহাল রিপোর্ট করছে। হত্যার কোনো আলামত পেলে আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
নিহতের এক নিকটাত্মীয় বলেন, রাজনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন স্বাভাবিক মৃত্যু ধরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ডায়াবেটিস নেই এমন একজন লোকের এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। তাই আমরা ময়নাতদন্ত চাই। গত রাত ১২টা পর্যন্ত একটি হাসপাতালে রোগীর অস্ত্রোপচার করে ইন্দিরা রোডের বাসায় যান রাজন। রাজন কর্মকার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অষ্টম ব্যাচের (বিডিএস) ছাত্র ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জের এখলাসপুর। তার বাবার নাম সুনীল কর্মকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।